লালমনিরহাটে ফের বন্যায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি
প্রকাশ | ১৪ আগস্ট ২০১৭, ১৯:৫৪
ভারী বর্ষণ ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে তিস্তা, ধরলা, বুড়ি তিস্তা ও সানিয়াজান নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় লালমনিরহাটে আবারও বন্যা দেখা দিয়েছে। নদীগুলোর পানি বৃদ্ধির কারণে জেলার তিস্তা তীরবর্তী এলাকা গুলোতে এ বন্যা দেখা দেয়। তিস্তার পানিতে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় পড়ে আছে।
১১ আগস্ট (শুক্রবার) সন্ধ্যা থেকে আবারও নদীগুলোর পানি বাড়তে শুরু করে। দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের দোয়ানী পয়েন্টে ১২ আগস্ট (শনিবার) সকালে বিপদ সীমার ৩৭ সেঃ মিঃ উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হতে থাকে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড দোয়ানী’র নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ভারী বর্ষণ ও ভারত থেকে পানি আসায় তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। যে কারণে তিস্তার তীরবর্তী এলাকায় বন্যা দেখা দিয়েছে। আমরা প্রতি মুহূর্তে বন্যা পরিস্থিতি মনিটরিং করছি। তিস্তার পানি আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। আরও কি পরিমান পানি আসবে তা ধারনা করা যাচ্ছে না।
জানা গেছে, কিছুদিন আগের বন্যায় চর এলাকাগুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে গেছে। জেলার হাতীবান্ধা উপজেলায় বন্যায় সব চেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। যে কারণে ওই এলাকায় বেশ কিছু পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানিবন্দি লোকজনের মাঝে বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। ভারত গজল ডোবা ব্যারেজের অধিকাংশ গেট খুলে দেওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই ঘর বাড়ি ছেড়ে নিরাপদ স্থানে চলে গেছেন। প্রচণ্ড গতিতে ময়লা ও ঘোলা পানি বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসছে।
পানি গতি নিয়ন্ত্রণ করতে তিস্তা ব্যারাজের বেশিরভাগ গেট খুলে দেওয়া হয়েছে। ফলে তিস্তার পানিতে পাটগ্রামে অবস্থিত বহুল আলোচিত বিলুপ্ত ছিটমহল আঙ্গোরপোতা-দহগ্রাম, হাতীবান্ধার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, সিঙ্গিমারী, সির্ন্দুনা, পাটিকাপাড়া ও ডাউয়াবাড়ী ইউনিয়ন, কালীগঞ্চ উপজেলার ভোটমারী, শোলমারী, জমিরবাড়ী, বইরাতী, আদিতমারী উপজেলার কুঠিপাড়া, গোবর্দ্ধধন, সদর উপজেলার খুনিয়াগাছা, রাজপুর, তিস্তা, গোকুন্ড এলাকার চরে ৩০ গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। হাজার হাজার একর আমন ধানের ক্ষেতসহ অনেক ফসলী ক্ষেত তিস্তার পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
হাতীবান্ধা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ফেরদৌস আহম্মেদ জানান, ইতোমধ্যে ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে পানিবন্দি পরিবারগুলোর খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা তৈরী করে উচ্চ পর্যায়ে প্রেরণ করা হবে। ত্রাণের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করা হয়েছে কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। পানি বন্দি লোকজনের মাঝে শুকনা খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আরিফ জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে পানিবন্দি পরিবার গুলো খোজঁ খবর নেওয়া হচ্ছে। ত্রাণের জন্য উচ্চ পার্যায়ে আবেদন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ত্রাণ বিতরণ শুরু হয়ে গেছে।
লালমনিরহাট-১ (হাতীবান্ধা-পাটগ্রাম)’র সংসদ সদস্য মোতাহার হোসেন জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা ও ইউনিয়ন চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে কথা বলে বন্যা পরিস্থিতির খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। পানিবন্দি পারিবারগুলোর সহযোগিতার জন্য ত্রাণ মন্ত্রীর সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।