ভরা বর্ষায় পঞ্চগড়ের নদীতে হাটুজল
প্রকাশ | ২৯ জুলাই ২০১৭, ১৯:১৮
আমাদের ছোট নদী চলে বাকে বাকে/ বৈশাখ মাসে তার হাটুজল থাকে...। এখন আর কেবল বৈশাখ নয় প্রায় বারো মাসই পঞ্চগড়ের প্রধান নদী করতোয়ায় হাটুজল থাকে। এমনকি বর্ষাকালেও শুকনো করতোয়ায় বালুচর দেখা যায়।
সম্প্রতি দেশের অন্যত্র বন্যা হলেও দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের নদীগুলো শুকনোই রয়ে গেছে। আষাঢ় শ্রাবণেও জেলার করতোয়াসহ ছোট বড় নদীগুলোর দুকূলে জলের স্পর্শ লাগেনি। নদীর বুকে মাঝে মাঝে জেগে উঠেছে বালুচর।
গত এক দশকে করতোয়া নদীতে উল্লেখযোগ্য হারে পানি হ্রাস পেয়ে যাচ্ছে। জেলার উপর দিয়ে বয়ে চলা নদীগুলোর উজানে ভারতের একতরফা বাধা নির্মাণ আর জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই বর্ষাকালেও করতোয়ায় পানি নেই বলে জানিয়েছেন পরিবেশবিদরা।
একটা সময় ছিল যখন এলাকার মানুষের কাছে করতোয়া প্রবল খরস্রোতা নদী হিসেবে পরিচিত ছিল। মহাভারতে এই নদীকে প্রবল খরস্রোতা ও পবিত্র নদী বলে উল্লেখ করা হয়েছে। পঞ্চগড় জেলার গোড়াপত্তন হয়েছিল এই করতোয়া নদীকে ঘিরেই। কিন্তু কালের বিবর্তনে আর উজানে বাঁধ নির্মাণের কারণে করতোয়া নদী আজ প্রাণ হারাতে বসেছে।
শুধু করতোয়া নয় পঞ্চগড় জেলার উপর দিয়ে বয়ে চলা চাওয়াই, মহানন্দা, ডাহুক, বেরং, টাঙ্গন, তালমা, পাঙ্গা, পাম, ভেরসা, আত্রাই,গোবরা, তীরনই, রণচন্ডী, ছেতনাই, পেটকি, ঘোরামারা, মরা তিস্তা, নাগর, খড়খড়িয়া, সুই, ছোট যমুনা, করতোয়া, পাথরাজ, ভূল্লিসহ ছোট বড় ৩৩টি নদীর অবস্থা একই রকম।
নদীগুলোর অধিকাংশই মানচিত্র থেকে বিদায় নেওয়ার পথে। নদীগুলো শুকিয়ে যাওয়ায় এর প্রভাব পড়েছে কৃষি, মাছ, জলজ উদ্ভিদসহ প্রাণীকূলেও। হুমকিতে পড়েছে নদী কেন্দ্রিক কৃষকদের সেচ ব্যবস্থা। জেলায় দেখা দিয়েছে দেশী মাছের সংকট। জীবিকা নির্বাহ নিয়ে সঙ্কটে পড়েছেন জেলেরাও।
পঞ্চগড় পরিবেশ পরিষদের সভাপতি তৌহিদুল বারী বাবু বলেন, জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব আর ভারত থেকে আসা অভিন্ন নদীগুলোতে একতরফাভাবে বাঁধ নির্মাণ করে পানি প্রত্যাহার করায় পঞ্চগড়ের উপর দিয়ে প্রবাহিত ছোট-বড় নদীগুলোর পানি প্রবাহ কমে গেছে।
পঞ্চগড় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর জানান, ইতোমধ্যে বিলুপ্ত ছিটমহল ঘেঁষা করতোয়া নদীর ৫ কিলোমিটার খননের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এবছর আরও ৭৭ কিলোমিটার খননের জন্য প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। একইভাবে অন্যান্য নদীগুলো খননের জন্য প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হবে বলেও তিনি জানান।