‘সবার জন্য নিরাপদ পানি নিশ্চিত করা হবে’
প্রকাশ | ২৯ জুলাই ২০১৭, ১৯:০৯
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা-এসডিজি’র নির্ধারিত সময়ের আগে ২০২১ সালের মধ্যে সবার জন্য নিরাপদ পানি নিশ্চিত করা হবে। এছাড়া পানির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়ন করছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি বলেন, দীর্ঘ মেয়াদী সমন্বিত পানি ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনায় আগামী ১২টি দেশের সহযোগিতায় বাংলাদেশ একশ বছর-মেয়াদী ‘বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান-২১০০’ গ্রহণ করেছি। যাতে একশ বছরে পানির প্রাপ্যতা, তার ব্যবহার এবং প্রতিবেশগত বিষয়সমূহ বিবেচনায় রাখা হয়েছে।
২৯ জুলাই (শনিবার) রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ২৭টি দেশের অংশগ্রহণে তিন দিনব্যাপী ‘ঢাকা পানি সম্মেলন-২০১৭’ উদ্বোধন করে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশুদ্ধ খাবার পানি শুধু আমাদের বেঁচে থাকার জন্যই নয়, সব প্রাণিকূলেরও বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য। বিশ্বে শতকরা ১ ভাগেরও কম পানিসম্পদ পান করার জন্য নিরাপদ বলে বিবেচনা করা হয়। ফলে এখন পর্যন্ত বিশ্বের প্রায় ১শ কোটি মানুষের সুপেয় পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা যায়নি। এছাড়া নিরাপদ পানির অভাবে পৃথিবীতে বছরে ১০ লাখ মানুষ মারা যান, যাদের অধিকাংশই শিশু। প্রতিদিন গড়ে বিশ্বে এক হাজার শিশু বিশুদ্ধ পানির অভাবে প্রাণ হারায়।
তিনি বলেন, নির্ধারিত সময়ের আগে এমডিজি অর্জন করে বাংলাদেশ যেভাবে রোল মডেল হয়েছে এসডিজি অর্জনেও সেভাবে এগিয়ে যাওয়ার কর্মসূচি নিয়েছে সরকার।
এ সময় মরক্কোর জলাবায়ু সম্মেলনে পানি ও স্যানিটেশনের জন্য জাতিসংঘের পৃথক তহবিল গঠনের দাবির কথাও স্মরণ করিয়ে দেন তিনি। এছাড়া নিরাপদ পানির অভাবে বছরে পৃথিবীতে যে ১০ লাখ মানুষ মারা যায় তা রোধ করতে নিজস্ব অবস্থান থেকে সব দেশকে এক হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, বিশ্বের প্রায় একশ’ সাত কোটিরও বেশি মানুষ নদী অববাহিকায় বসবাস করেও পানির চাহিদা মেটাতে ব্যর্থ হচ্ছেন। মানুষের সৃষ্ট ৮০ শতাংশেরও বেশি অপরিশোধিত বর্জ্য পানি ও প্রকৃতিতে ফিরে গিয়ে আরও বড় আকারে পরিবেশ দূষণ সৃষ্টি করছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আর্সেনিক ও লবণাক্ততা, ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর হ্রাস, ভূ-উপরিস্থ পানি সংরক্ষণের অপ্রতুলতা, পানির অপচয় এবং শিল্প বর্জ্যসহ নানা কারণে পানি দূষণ বাংলাদেশে পানির ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনায় মূল সমস্যা। এসব সমস্যা মোকাবিলা করতে আমরা স্বল্প, মধ্য এবং দীর্ঘ-মেয়াদী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছি।
রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সমন্বয়ে জাতিসংঘের উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ১২ সদস্যের কমিটি অন্যতম সদস্য হিসেবে প্রধানমন্ত্রী আশা করেন, ডেল্টা সেশনের ওয়ার্কিং সেশন এবং শেরপা বৈঠকগুলোতে পানি সমস্যা চিহ্নিত করে কর্মকৌশল নির্ধারণ করা হবে।
উল্লেখ্য যে, বিশ্বের প্রায় ১শ’ কোটি মানুষের সুপেয় পানি নিশ্চিত নয়। এছাড়া পানির বহুমুখী সমস্যায় ভুগছেন বিশ্বের ৪০ শতাংশ মানুষ। এজন্য সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা- এসডিজি’র ৬ নম্বর লক্ষ্য’ সবার জন্য নিরাপদ পানি নিশ্চিত করা। এর ধারাবাহিকতায় ঢাকায় এই পানি সম্মেলন।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পানি সম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, পররাষ্ট্র মন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ।
অনুষ্ঠানে ইসাবেলা ফাউন্ডেশনের নির্মিত বাংলাদেশের নদ-নদী ও সমুদ্রের বিপুল জলসম্পদ নিয়ে একটি ভিডিও চিত্র উপস্থাপন করা হয়।