চলে গেলেন 'প্রিন্সেস লেইয়া'
প্রকাশ | ২৮ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৫:৪৫ | আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৫:৫৩
জনপ্রিয় মুভি সিরিজ ‘স্টার ওয়ারস’-এ প্রিন্সেস লেইয়া চরিত্রে অভিনয় করে দর্শক জনপ্রিয়তা অর্জনকারী অভিনেত্রী ক্যারি ফিশার আর নেই। মঙ্গলবার সকালে ৬০ বছর বয়সে তার মৃত্যু হয়।
গত শুক্রবার কমেডি সিরিজ ‘ক্যাটাস্ট্রফি’র শুটিং শেষে লন্ডন থেকে লস অ্যাঞ্জেলেস যাওয়ার পথে বিমানের মধ্যেই হৃদরোগে আক্রান্ত হন ফিশার। বিমানেই প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে লস অ্যাঞ্জেলেসের রোনাল্ড রিগান ইউসিএলএ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই হাসপাতালেই ‘প্রিন্সেস লেইয়া’ মারা যান বলে নিশ্চিত করেছেন মেয়ে বিলি লৌর্ড।
পরিবারের মুখপাত্র সিমন হলের বিবৃতিতে বলা হয়, “খুব দুঃখের সঙ্গে বিলি লৌর্ড তার প্রিয়তম মায়ের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করছেন। ক্যারি ফিশার আজ সকাল ৮টা ৫৫ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন।”
ক্যারি ফিশারের মৃত্যুর আনুষ্ঠানিক ঘোষণার পর তার কুকুর গ্যারির টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকেও দেওয়া হয়েছে শোকবার্তা। তাতে বলা হয়েছে, “মা চলে গেছে। আই লাভ ইউ।”
ফিশারের মৃত্যুর পরপরই তার অভিনেত্রী মা ডেভি রেনল্ড মেয়ের ভক্তদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
ফেসবুকে এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, “যারা আমার মেয়ের প্রতিভা ও উপহারকে স্মরণ করেছেন তাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আপনাদের ভাবনা ও প্রার্থনা কৃতজ্ঞচিত্রে স্মরণ করছি যা তাকে (ফিশার) পরবর্তী পথের পথ দেখাবে”।
ফিশারের ভাই টডও মার্কিন অভিনেতা, পরিচালক। তার বাবা পঞ্চাশের দশকের অন্যতম জনপ্রিয় গায়ক এডি ফিশার ২০১০ সালে মারা যান।
ফিশারের মৃত্যুতে শোক জানিয়ে স্টার ওয়ারস চলচ্চিত্রে মেভরিক মহাকাশযানের পাইলট ‘হ্যান’ চরিত্রে অভিনয় করা ফোর্ড বলেন, "মজা ও নির্ভীক আবেগী চরিত্রের মিশেল ছিল ফিশার। সে তার জীবন সাহসিকতার সঙ্গে উপভোগ করে গেছে…আমরা সবাই তাকে মিস করবো”।
শোক জানিয়েছেন বন্ধু ও সহশিল্পী মার্ক হেমিল। এক টুইট বার্তায় স্টার ওয়ারসে ‘প্রিন্সেস লেইয়া’র ভাইয়ের চরিত্রে রূপদান করা হেমিল বলেন, “নো ওয়ার্ডস। #বিধ্বস্ত।”
অভিনয় ছাড়া মাদক বিশেষ করে কোকন আসক্তির জন্যও পরিচিত ছিলেন ফিশার। ভুগেছেন বাইপোলার ডিজ অর্ডারেও। ৮০-র দশকের মাঝামাঝি কোকেন আসত্তি ছাড়তে চিকিৎসা নেওয়ার সময় তিনি লেখেন উপন্যাস ‘পোস্টকার্ড ফ্রম দ্য এজ’। মাদকাসক্ত এক অভিনেত্রীর জীবন নিয়ে লেখা এ উপন্যাস পরে চলচ্চিত্রে রূপ পায়। ফিশারের আত্মজীবনীমূলক ওই চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন মেরিল স্ট্রিপ ও শার্লি ম্যাকলেইন।
ক্যারিয়ারজুড়েই অভিনয়ের পাশাপাশি এভাবেই মাদকাসক্তি, মানসিক অসুস্থতা আর একের পর এক প্রেমে জড়িয়ে সংবাদের খোরাক হয়েছেন ‘প্রিন্সেস লেইয়া’। ২০১৩ সালে বাইপোলার ডিজ অর্ডারের চিকিৎসা নিতেও বেশ কিছুদিন হাসপাতালে ছিলেন এই অভিনেত্রী।
শেষ বয়সে এসে এসব নিয়ে খোলামেলা সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। ‘স্টার ওয়ারস’ সেটেই হ্যারিসন ফোর্ডের প্রেমে পড়ার কথাও জানিয়েছিলেন এ তারকা অভিনেত্রী।
আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘দ্য প্রিন্সেস ডায়েরিস্ট’-এ ফিশার জানান, সাইফাই চলচ্চিত্র স্টার ওয়ারসে অভিনয় করতে এসেই ৩৩ বছর বয়সী ফোর্ডের সঙ্গে প্রেমে জড়ান তিনি।
“সপ্তাহজুড়ে থাকতো হ্যান ও লেইয়া; আর সপ্তাহান্তে ক্যারি ও ফোর্ড,” পিপলস ম্যাগাজিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমনটাই বলেছিলেন ফিশার।
১৯৭৬ সালে শুরু ও শেষ ওই প্রেমের সময় ‘প্রিন্সেস লেইয়া’র বয়স ছিল মাত্র ১৯।
তবে গত মাসে রোলিং স্টোন ম্যাগাজিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বেঁচে থাকা নিয়ে সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছিলেন তিনি।
“অনেক দূর গিয়েছি, হয়তো আরও যেতে পারতাম, যদিও এর চেয়ে বেশি যেতে চাইনি। মৃত্যুকে হয়তো খুব বেশি উপভোগ করব না আমি, যদিও তার জন্য খুব বেশি প্রস্তুতি লাগে বলে মনেও হয় না।”
উল্লেখ্য, মাত্র ১২ বছর বয়সে লাস ভেগাসে তার মায়ের নাইটক্লাবে অভিনয় করেন বেভারলি হিলসে জন্ম নেওয়া ফিশার। ১৯৭৫ সালে ‘শ্যাম্পু’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে রুপালী পর্দায় যাত্রা শুরু হলেও দুই বছর পর স্টার ওয়ারসই তাকে অভিনেত্রীর সম্মান ও খ্যাতি এনে দেয়।
স্টার ওয়ারসের দুটি সিকুয়েলে অভিনয় করেন ফিশার। এর মধ্যে ১৯৮৩ সালের ‘রিটার্ন অব দ্য জেডি’তে তার পোশাক তাকে ‘সেক্স সিম্বল' এর পরিচিতি এনে দেয়।
ডিজনি কর্তৃপক্ষ ‘স্টার ওয়ারস’ সিরিজ কিনে নিলে ফিশার ‘দ্য ফোর্স অ্যাওয়াকেনস’ এ শয়তানের সঙ্গে যুদ্ধে বিদ্রোহী আন্দোলনের রাশভারী জেনারেল ‘লেইয়া অর্গানা’ চরিত্রে অভিনয় করেন।
১৯৮৯ সালে ‘হোয়েন হ্যারি মেট সেলি’ সিনেমায় মেগ রায়ানের বান্ধবীর চরিত্রে অভিনয় করে বোদ্ধাদেরও মন জয় করেন ফিশার।
ফিশার ‘স্টার ওয়ার্স; এপিসোড এইট’-এও অভিনয় করেছেন; চলতি বছরের জুলাই মাসে ছবিটির শুটিং শেষ হয়; আগামী বছরের ডিসেম্বরে এটি মুক্তি পাওয়ার কথা।