গঙ্গা-যমুনায় কক্সবাজার থিয়েটারের ‘টু ইডিয়টস’
প্রকাশ | ২৬ অক্টোবর ২০১৬, ১১:০৫ | আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০১৬, ১২:১১
পুঁজিবাদের অশুভ নকশায় দুনিয়জোড়া সমাজ আজ ধ্বংসের মুখে, কালো টাকার লোভে মানুষ হারিয়ে ফেলছে তাদের আপন স্বকীয়তা। চারিদিকে বিরাজ করছে অশান্তি, বিশৃঙ্খলা। লোভে উন্মুক্ত হয়ে যায় এ সমাজ সৃষ্টি করছে তারাও আজ হাঁপিয়ে উঠছে যুব সমাজ আজ ধ্বংসের মুখে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বেকারত্বের অভিশাপে। ভালোবেসে যারা দিগন্ত রাঙাতো তাদেরও মধুর স্বপ্ন আজ ম্লান হয়েছে কঠিন বাস্তবতার রূঢ় আচরণে।
‘তিতির মৌ’ একটি সুখী দ্বীপ। এখানে একার সুখ বলে কোনো দর্শন নেই। দ্বীপবাসীরা সবাই সমানভাবে ভাগ করে নিতে চায়। একে অপরের হাসি কান্না সুখ দুঃখ, নীলাচল, রতন, ফাগু, শ্যাম, জ্ঞান’নারা লাঙলের ফলা দিয়ে রচনা করে সবুজ শষ্যে মহাকাব্য। উত্তাল সমূদ্রের ঢেউ ভেঙে দ্বীপের সাহসী মনোহররা জালে তোলে রূপালি মাছ। অকালে ভাই হারিয়ে, স্বজন হারিয়ে যে অলকা ভেঙে পড়ার কথা, সেও সবার সাথে নিপুণ হাতে সাজায় ‘তিতির মৌ’-কে।
এরই ভেতর মাঝে মাঝে প্রকৃতি হয়ে পড়ে অশান্ত, সমূদ্র ধারণ করে রাক্ষুসী রূপ। দেখা দেয় কখনোও প্রাকৃতিক দূর্যোগ, কখনোও আকাল। তাদের আপনজনদের কেড়ে নেয় প্রকৃতির নির্মম থাবা, লণ্ড-ভণ্ড হয়ে যায় সুখের ‘তিতির মৌ’। তবুও আবারোও তারা সাহসে কোমর বেঁধে নামে দূর্যোগ মোকাবিলায়, আবার সাজিয়ে তোলে তাদের স্বপ্নের দ্বীপ। জীবন বাঁচার স্বপ্নে বিভোর হয় দ্বীপবাসী।
হঠাৎ এই দ্বীপে প্রাকৃতিক দূর্যোগের মতো ভর করে ‘সভ্য দেশের’ দুই দুষ্ট মানব শক্তি। একজন ভণ্ড রাজনীতিবিদ নাম ‘ইজ্জত আলী’, অন্যজন পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত বড় কর্তা ‘বদিউল আলম’, তারা দ্বীপের সহজ সরল মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেয় স্বার্থবাদীতার বিষমন্ত্র। মোহনীয় মিষ্টি কথায় দ্বীপের মানুষের মনে রোপণ করে সর্বনাশে লোভের বীজ। ধ্বংস করে দিতে চায় তাদের দীর্ঘ দিনের ঐক্য, সম্প্রীতি।
এক সময় দ্বীপবাসী সহজেই বুঝে নেয় তাদের চক্রান্ত। অতঃপর রুখে দাঁড়ায় সবাই মিলে। জ্ঞান’দার নেতৃত্বে চাঙ্গা হয় সকলে। সুকৌশলে বিতাড়িত হয় দুই দুষ্ট লোক। রাহুমুক্ত হয় ‘তিতির মৌ’ দ্বীপ।
এবার প্রত্যয় জাগে দ্বীপবাসীর মনে। আমরা যেমন আছি তেমনই থাকবো। কারো নতুন উপদেশ, আদেশ কিছুই প্রয়োজন নেই। প্রকৃতি আমাদের বন্ধু, আবার প্রকৃতির সাথেই সংগ্রাম সকলের।
রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমীর স্টুডিও হলে গঙ্গা-যমুনা নাট্যোৎসবে মঙ্গলবার (২৬ অক্টোবর) সন্ধ্যায় স্টুডিও থিয়েটার হলের মঞ্চে পরিবেশিত হয় কক্সবাজার থিয়েটার প্রযোজিত নাটক ‘টু ইডিয়টস’। রুশ গল্পকার মিখাইল সালতিকভ শ্চেদ্রিন এর গল্প অবলম্বনে মূল নাটকের রচয়িতা চন্দন সেন এবং নির্দেশনায় স্বপন ভট্টাচার্য্য। কলাকুশলিদের দারুণ অভিনয় ও সংলাপে ফুটে ওঠে বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটের বেশ কিছু স্বার্থান্বেষী রূপ।