লালনগীতির সুর বিকৃতি
সমালোচনার মুখে নিপুনের আইটেম গান
প্রকাশ | ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১৪:৩৫
সম্প্রতি অনলাইনে মুক্তি পায় এককাপ চা খ্যাত নঈম ইমতিয়াজ নেয়ামুল পরিচালিত দ্বিতীয় চলচ্চিত্র ‘ছেড়ে যাস না’র আইটেম গান। আইটেম গানটিতে পারফর্ম করেন ফেরদৌস ও নিপুন। অভিজিৎ আচার্যর সংগীত পরিচালনায় নতুন ভাবে আধুনিকায়ন করা হয় লালন ফকিরের জনপ্রিয় গান ‘প্রেম রসিকা হব কেমনে’।
অনলাইনে গান মুক্তির পরেই সমালোচনায় মুখর হয়ে ওঠে সংগীত ও চলচ্চিত্রপ্রেমীরা। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই লালনের গাননে আইটেম গান হিসেবে নির্মাণ করাকে দেখছেন লালনগীতির বিকৃতি হিসেবে। এই আইটেম গান এ লালনগীতির সুর বিকৃত ও কথার সাথে দৃশ্যায়নের আঙ্গিক নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এই বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে চলচ্চিত্র পরিচালক রাকিবুল হাসান ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, ‘প্রেম রসিকা হব কেমনে’ লালন-এর ভাববাদী গান। এই গানে দৃশ্য ও বস্তুজগৎ থেকে মুক্ত হয়ে ঈশ্বরের নৈকট্য লাভের জন্য মনোজগতে আত্ম-জিজ্ঞাসার ভাষা ব্যবহৃত হয়েছে। কিন্তু এই বাণীকে বিকৃত করে ‘স্বামী’ অর্থ্যাৎ লালনের গানের ‘প্রভু’কে বস্তুজগতের স্বামী বানিয়ে বিকৃত অর্থে প্রকাশ করা হয়েছে।
ইতঃপূর্বে লালনের ‘খাঁচার ভিতর অচিন পাখি’ গানের দৃশ্যায়নে একটা খাঁচার মধ্যে একটা পাখিকে আটকে রাখতে দেখেছি! অনেকে একধাপ এগিয়ে এনিমেশন করে খাঁচার ভেতর পাখির আসা-যাওয়াও দেখিয়েছেন। অথচ এটি একটি ভাববাদী গান। এই গানে লালন মনের অভ্যন্তরের সত্তাকে তুলনা করেছেন এমন এক পাখির সাথে, যা সহজেই খাঁচা রূপী দেহের মাঝে আসা যাওয়া করে কিন্তু তবুও একে বন্দি করে রাখা যায় না। লালন, মানব আত্মাকে বিবেচনা করেছেন রহস্যময়, অজানা এবং অস্পৃশ্য এক সত্তা রূপে।
তিনি আরও বলেন, বাহুল্যবর্জিত বাচনভঙ্গিই লালন-গানের প্রাণ। অবধারিত কিছু শব্দ রুদ্ধশ্বাস অপ্রকাশে রেখে, সংক্ষেপে নির্মিত হওয়াই এই ভঙ্গির বৈশিষ্ট্য। দৃশ্য ও বস্তুজগৎ লালন-কাব্য-সৌন্দর্য নয়, এ এক মনোজগতের আত্ম-জিজ্ঞাসার ভাষা। আসছে ১৭ অক্টোবর ফকির লালন সাঁইজীর ১২৬তম তিরোধান বার্ষিকী। এই দিবসটি সামনে রেখে লালন-এর গানের বিকৃতিসহ কোনও চলচ্চিত্রের মুক্তি কাম্য নয়। লালনের গান নিয়ে সকল প্রকার বিকৃতি বন্ধ হোক।
পরিচালক নঈম ইমতিয়াজ নেয়ামুলের পাশাপাশি যৌথ প্রযোজনার ‘ছেড়ে যাস না’ ছবিটির অন্য পরিচালক কলকাতার তপন চক্রবর্তী। নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে ছবিটি ভারত আর বাংলাদেশে একসঙ্গে মুক্তি পাবার কথা রয়েছে।