করোনা ভাইরাস: মেয়েসহ যুক্তরাজ্যে বন্দি ফাহমিদা নবী

প্রকাশ | ০১ এপ্রিল ২০২০, ১৩:০৪ | আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০২০, ২১:৪৭

অনলাইন ডেস্ক

মাসখানেক আগে একমাত্র মেয়েকে নিয়ে যুক্তরাজ্যে ছোট বোনের কাছে বেড়াতে গিয়েছিলেন সংগীতশিল্পী ফাহমিদা নবী। বেড়ানো শেষে ৩১ মার্চ (মঙ্গলবার) ঢাকায় ফেরার কথা ছিল তাঁদের। কিন্তু মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে দেশটিতেও লকডাউন পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় যুক্তরাজ্যে মেয়েকে নিয়ে আটকে আছেন তিনি। লকডাউন থাকলেও নিজের দেশ নিয়ে ভীষণ চিন্তার মধ্যে আছেন এই সংগীতশিল্পী।

গতকাল ৩১ মার্চ (মঙ্গলবার) দুপুরে লন্ডন থেকে এমনটাই জানালেন ফাহমিদা নবী।

লন্ডনের আর্চ ব্রিচ এলাকায় বোন অন্তরার বাসায় আছেন ফাহমিদা নবী। তিনি বললেন, ‘সবাই মিলে বাসায় আছি। ঘরবন্দী। অন্তরার সাততলার বাসার জানালা থেকে খোলা আকাশ দেখা যায়। চমৎকার লেক দেখা যায়, জানালার কাচে বৃষ্টির বেয়ে পড়া জল দেখছি। এত শীতে অনেক রোদ আসে ঘরে, রোদ পোহাই। এই বৃষ্টি এই রোদ। সন্ধ্যা হতে না হতেই একেবারে গভীর নীরবতা ছেয়ে বসে রাতের অন্ধকার। সবকিছু মিলে কেমন যে লাগছে।’

ফাহমিদা নবী বললেন, ‘কয়েক বছর ধরে একবার করে আসি। বেড়িয়ে যাই। এবারও গিয়েছিলাম। কিন্তু বেড়ানো হয়নি। বুঝতে না বুঝতেই সবকিছু লকডাউন করে দিয়েছে। এমনিতেই তো নীরব শহর, এখন এত নীরবতা। রাস্তায় কোনো গাড়ি নেই, মানুষ নেই, নীরবতার চরম পর্যায়ে আছি।’

এমনিতে বাসা থেকে বের হচ্ছেন না, তবে খুব জরুরি প্রয়োজনে বের হতে হচ্ছে বলে জানিয়ে তিনি বললেন, ‘লকডাউনের সময় মাঝেমধ্যে বের হতে হয়, দূরত্ব বজায় রেখে চলতে হয়। অনেক বেশি সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। দোকানে দুজনের বেশি ঢুকতে দেয় না। শুনছি, আরও ৬ মাসের মতো লকডাউন দিতে পারে। কী যে করব, কিছুই বুঝতে পারছি না।’

করোনা ভাইরাসের এই সময়টায় ফাহমিদা নবীর নানা রকম উপলব্ধিও হচ্ছে। নিজের উপলব্ধির কথা এভাবে বললেন, ‘পৃথিবীতে এমন কিছু ঘটবে, কেউই ভাবতে পারেনি। সবকিছু সাধারণভাবেই চলছিল। আমরা তো এমন পরিস্থিতির সঙ্গে পরিচিত ছিলাম না। হঠাৎ করে পুরো পৃথিবী বন্ধ হয়ে গেল একসঙ্গে। উঁচু-নিচু, ধনী-গরিব কোনো ভেদাভেদ নেই। সবাই এখন ঘরে বন্দী। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে, যদি বাসায় থাকে সবাই। বাসায় বসে সারাক্ষণ বাংলাদেশের কথা ভাবছি। যেতে পারলেই যেন বাঁচি। এখন তো দেশের টান আরও বেশি বুঝতে পারছি।’

ফাহমিদা নবী বললেন, ‘কবে নিজের দেশে ফিরতে পারব, জানি না! অন্তরার বাসায় আনমোল, তাজরীয়ানকে নিয়ে কাটছে দিন। তবু ঢাকা টানছে, নিজের ঠিকানাটার জন্য মন অস্থির হয়ে আছে! ভাবছি, কবে এই মহাবিপদ থেকে পুরো বিশ্ব মুক্তি পাবে।’

লন্ডনের বাসায় বসে কীভাবে সময় কাটছে, সেই অভিজ্ঞতা নিজের ফেসবুকে লিখেছেন ফাহমিদা নবী। তিনি লিখেছেন, ‘গৃহবন্দী থাকছি, সজ্ঞানে। তাই নিজেকে মানসিকভাবে ব্যস্ত রাখতে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নানাভাবে ব্যতিব্যস্ত রাখছি। কখনো রান্না করছি। চালের আটার রুটি বানাতে গিয়ে ত্যাড়াবেঁকা রুটি বানালেও মোটামুটি ভালোই লেগেছে খেতে। ভাবছি ঢাকায় ফিরে একটা রেস্টুরেন্ট খুলব। নাম দেব “জোড়াতালি”। কারণ, এত জোড়াতালিতে জীবনযাপন, মন্দ কী এমন নামে। এর বাইরে কখনো টিভি দেখছি। ইউটিউবে যা ভালো লাগছে দেখছি। ঘর পরিষ্কার করছি। আর ফেসবুকের বন্ধুরা তো আছেই সব সময় পাশেই।’

ফাহমিদা নবী তাঁর ফেসবুকে লেখেন, ‘আটকে গেল চলাচল, বন্ধ নয় নিজেই বন্দী হলাম নিজের কাছে! নিজের কর্মের হিসাব নেবার-দেবার পালা হলো শুরু। কত দ্রুত বদলে গেল জীবনের সব আয়োজন। যুদ্ধ নয়, তবু এক যুদ্ধক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে আছি, আকাশের দিকে চোখ মেলে নীরব অশ্রুপাতে! কেউ নয় কারও, একি হলো? এমন এক ক্রান্তিলগ্নে, কে কখন এই ভাইরাসের রাহুতে পড়ে যাচ্ছে, কেউ জানি না! তাই সাবধানে থাকতে হচ্ছে। সচেতন হয়ে নিজেকে একঘরে করে রাখতে হচ্ছে! চাইলেও কেউ বলবে না বেড়াতে আসো বাসায়! কেউ বলবে না তুমি ভীষণ অসামাজিক হয়ে গেছ। বিরাট পরিবর্তন পৃথিবীর। করোনার মোকাবিলায় মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছেই প্রতিদিন। ভাবছি, মানুষ এই মানবিক যুদ্ধে জিততে পারবে তো? কেউ জানি না কার কখন কী হবে! শুধু না–জানা এক অপেক্ষায় বসে আছি। চেষ্টা চলছে হয়তো সব ঠিক হয়ে যাবে সেই আশায়!’

করোনা ভাইরাস মনে একটা বড় প্রশ্ন তৈরি করে দিয়েছে বলে মনে করছেন ফাহমিদা নবী। বললেন, ‘এই অভিশাপ থেকে কবে পুরো বিশ্বের মুক্তি হবে, তা জানা নেই। কবে ফিরবে সবার নিশ্বাসে স্বপ্নের ছুটে চলা। সব সময় বলি মানুষ বাঁচে আশায়। হয়তো সেদিনের আশায় আছি, যেদিন সবার মধ্যে বদলে যাওয়ার, ভালো, সত্য হাওয়া ফিরবে। প্রকৃতিও নিশ্বাস নেয়, তা ভুলে গেছিলাম। তাই প্রকৃতির ভারসাম্যকে ফেরানোর নির্মাণকাজ চলছে! সৃষ্টিকর্তা মানুষকে হয়তো আবার নতুন করে গড়ে দিচ্ছেন, তাতে নিজেদের অভ্যস্ততায় এক নতুন সময়ের সঙ্গে অভ্যস্ত হবে মানুষ। অনেক দুঃখের পর সুখ আসবে, আশায় আছি। অনেক আঁধারে একটু আলোর দিশা খুঁজে আলোর দিকে এগিয়ে যাবে মানুষ, শুধরে নেবার সঠিক সময় এখনই।’