লায়লা হাসানের জন্মবার্ষিকীতে “ছন্দে-জীবনানন্দে ৭১-এ পা”

প্রকাশ | ১৯ নভেম্বর ২০১৭, ১৭:৩৯

অনলাইন ডেস্ক

বিশিষ্ট সংস্কৃতিজন, মুক্তিযোদ্ধা, নৃত্যশিল্পী লায়লা হাসান-এর ৭০ পেরিয়ে ৭১-এ পা রেখেছেন গত ০৮ আগস্ট। এই গুণী শিল্পীর ৭০তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে ১৮ নভেম্বর শনিবার বিকাল ৫টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গীত, আবৃত্তি ও নৃত্যকলা কেন্দ্র মিলনায়তনে আয়োজন করা হয় “ছন্দে-জীবনানন্দে ৭১-এ পা” শীর্ষক আনন্দ অনুষ্ঠান।

সাংবাদিক নজরুল কবির-এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের শুরুতেই নৃত্যের ছন্দে ছন্দে লায়লা হাসানকে মঞ্চে আহবান করে নিয়ে আসেন নৃত্যশিল্পীরা। এ অংশটি পরিচালনা করেন শর্মিলা বন্দোপাধ্যায়। এরপর মঞ্চে আসেন অনুষ্ঠানের সভাপতি কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসরের চেয়ারপার্সন ড. মাহফুজা খানম এবং লায়লা হাসানের স্বামী ও বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম।

এরপর লায়লা হাসানের প্রতি শংসাবচন পাঠ ও তার হাতে তা তুলে দেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু। উত্তরীয় পড়িয়ে দেন ও উপহার তুলে দেন বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক ড. সফিউদ্দিন আহমদ, বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার এবং নৃত্যগুরু আমানুল হক।

এছাড়া, শিল্পী আব্দুল মান্নানের তৈরি করা লায়লা হাসানের প্রতিকৃতি তুলে দেন লায়লা হাসান-এর ৭০তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে গঠিত জাতীয় কমিটির দুই সদস্য সচিব- বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপন ও কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসরের সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম। লায়লা হাসানকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থার সভাপতি মিনু হক। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শিল্প-সংস্কৃতি জগতের বিভিন্ন ক্ষেত্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা।

অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন সৈয়দ হাসান ইমাম, ডালিয়া নওশিন, আব্দুল ওয়াদুদ এবং অনিমা মুক্তি গোমেজ। আবৃত্তি পরিবেশন করেন বিশিষ্ট বাচিক শিল্পী কাজী মদিনা ও হাসান আরিফ। এছাড়া, দলীয় সঙ্গীত নিয়ে মঞ্চে আসেন উদীচী’র শিল্পীরা। অনুষ্ঠানে লায়লা হাসান-এর কর্মময় সংগ্রামী জীবন নিয়ে আলোচনা, নাচ, গান, আবৃত্তিসহ সাংস্কৃতিক নানা পরিবেশনা ছিল। ছিল বিশিষ্ট ব্যক্তিদের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন পর্ব।

১৯৪৭ সালের ০৮ আগস্ট শিক্ষা ও সংস্কৃতির চর্চায় অগ্রগামী এক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন লায়লা হাসান। তার বাবা এম এ আওয়াল ও মা লতিফা আওয়াল চাকুরীজীবী হলেও সংস্কৃতি চর্চায় আগ্রহী ছিলেন। তার জন্মের পর নানা তৎকালীন এমএলএ আলী আহমেদ খানের বন্ধু, পল্লীসঙ্গীত সম্রাট আব্বাসউদ্দীন আহমদ নাম রাখেন ‘রোজী’। মামা অধ্যাপক খান সারওয়ার মুরশিদ, মামী নূরজাহান মুরশিদ।

পরিবারে রাজনীতি ও সংস্কৃতির মেলবন্ধন থাকায় খুব ছোটবেলাতেই শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, সৈয়দ আজিজুল হক, বেগম সুফিয়া কামাল, তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া, হামিদুল হক চৌধুরী প্রমূখ গুণী ও দিকপাল ব্যক্তিদের সংস্পর্শে আসেন লায়লা হাসান। খুব ছোটবেলায় ওস্তাদ ম্রী মনিবর্ধনের কাছে হাতেখড়ি হয় নৃত্যশিক্ষার। ডা. সাজেদুর রহমানের কাছে কিছুদিন নাচ শেখার পর বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতে নৃত্যের তালিম নেন। সংস্কৃতি যোদ্ধা হিসেবে পাকিস্তানের সামরিক জান্তা সরকারের প্রবল বাধা উপেক্ষা করে ১৯৬১ সালে রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ, অসহযোগ আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ তার জীবনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা। 

নারী শিক্ষা মন্দিরে শিক্ষাজীবন শুরুর পর কামরুন্নেসা স্কুল, ইডেন কলেজ, সেন্ট্রাল উইমেন কলেজ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষালাভ করেছেন লায়লা হাসান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনশাস্ত্রে অধ্যয়ন করা লায়লা হাসান ছাত্রজীবনে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন ছাত্র ইউনিয়নের সাথে। সেসময় রোকেয়া হল ছাত্র ইউনিয়নের সংস্কৃতি সম্পাদক ছিলেন তিনি। কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন সেসময় চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় অভিনেতা সৈয়দ হাসান ইমামের সাথে। বিয়ের পরও পুরোমাত্রায় সক্রিয় ছিলেন সংস্কৃতি আন্দোলনে।

শৈশব থেকেই নানা ধরনের সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিলেন লায়লা হাসান। বর্তমানে কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসরের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং সেক্টর কমাণ্ডারস ফোরাম মুক্তিযুদ্ধ-৭১ এর নারী সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর উপদেষ্টামণ্ডলীরও অন্যতম সদস্য লায়লা হাসান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের সাবেক সদস্য এবং বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থার সাবেক সভাপতি লায়লা হাসান। এছাড়া, এশিয়াটিক সোসাইটির সাথেও যুক্ত আছেন সদস্য হিসেবে। তার তিন সন্তানও সক্রিয়ভাবে যুক্ত আছেন সংস্কৃতি চর্চার সাথে।