‘গবেষণায় উন্মুক্ততার বিকল্প নেই’
প্রকাশ | ১০ মে ২০১৭, ১৯:১০ | আপডেট: ১০ মে ২০১৭, ২৩:২২
ওপেন একসেসের সোর্স ব্যবহার গবেষকদের কাজ সহজ করে দিবে। গবেষকরা সহজে নিজেদের কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবে। এছাড়া সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রেও তা সহায়তা করবে।
আজ ১০ মে (বুধবার) এমন কথাই বললেন "Open Access- A useful Tool for Research and Education" শীর্ষক একটি কর্মশালার বক্তারা। শাহবাগের পাবলিক লাইব্রেরির সেমিনার হলে ওই কর্মশালার আয়োজন করে বুদাপেস্ট কনভেনশন অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত ওপেন একসেস বাংলাদেশ।
ওপেন একসেস বাংলাদেশ এর আহ্বায়ক কনক মনিরুল ইসলাম এর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব প্রকৌশলী শুভ্রা কর এর উপস্থাপনায় কর্মশালার শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির যুগ্ম আহ্বায়ক ড. সুস্মিতা দাস। এরপর পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনার মাধ্যমে ওপেন একসেস বাংলাদেশের শুরু, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও সম্ভাবনা তুলে ধরেন কনক মনিরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, "গবেষণা কর্মের ক্ষেত্রে আমরা যেমন পিছিয়ে আছি তেমনি তথ্যের অভিগম্যতার ক্ষেত্রেও পিছিয়ে আছি। ওপেন একসেস কাজ করে ৩টি বিষয় নিয়ে যার মধ্যে রয়েছে উন্মুক্ত তথ্য, উন্মুক্ত গবেষণা ও উন্মুক্ত শিক্ষা। ভবিষ্যতে ওপেন একসেস বাংলাদেশ দেশে ও বিদেশে গবেষকদের মধ্যে যেমন জ্ঞানভিত্তিক যোগাযোগ তৈরি করবে তেমনি নীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
এরপর কর্মশালার অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশ্যে ওপেন একসেস এর বিভিন্ন দিক ও গবেষণাপত্র প্রকাশক জার্নালের ইতিবাচক নেতিবাচক বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেন ওপেন একসেস বাংলাদেশ এর উপদেষ্টা ড. মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান। গবেষণাপত্র প্রকাশের জন্য কি ধরণের জার্নাল বেছে নেয়া উচিত সেই ব্যাপারেও আলোচনা করেন তিনি।
কর্মশালায় ওপেন একসেস ইংল্যান্ড এর আহ্বায়ক জো ম্যাক আর্থার ও ওপেনকন এর সংগঠক নিক সিকোজি এর ভিডিও শুভেচ্ছাবার্তাও তুলে ধরা হয়।
এরপর প্রকাশকদের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ওপেন একসেস এর বিভিন্ন সুযোগ ও গবেষণাপত্র প্রকাশের নানা দিক নিয়ে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন করেন পৃথিবী বিখ্যাত প্রকাশনা সংস্থা Taylor and Francis এর হেড অফ মার্কেটিং শাফিনা সিগন। বিভিন্ন তথ্য উপাত্তের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের গবেষণার ধরণ ও জার্নালে প্রকাশের ক্ষেত্রে কি কি করা যাবে কিংবা যাবে না সেই বিষয়ে আলোচনা করেন তিনি। নিজের গবেষণাপত্র জার্নালে প্রকাশের ক্ষেত্রে কোন কোন ধাপ অনুসরণ করতে হবে তা নিয়ে বিস্তারিতভাবে একটি বুকলেটও দেয়া হয় প্রত্যেক অংশগ্রহণকারীকে।
এই প্রেজেন্টেশনের পর প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশুগ্রহণকারীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন Taylor and Francis এর নীতি ভার্মা।
এরপর Taylor and Francis এর পক্ষ থেকে একটি কুইজের আয়োজন করা হয় এবং সর্বোচ্চ নম্বর প্রাপ্ত ১০জনকে পুরষ্কৃত করা হয়।
কর্মশালার দ্বিতীয় সেশনে উপস্থিত ছিলেন সাবেক প্রতিরক্ষা সচিব ও সেন্টার ফর লিগ্যাল স্টাডিজ এর চেয়ারম্যান কাজী হাবিবুল আওয়াল; বুয়েটের ডিন ও তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ, অধ্যাপক, কম্পিউটার প্রকৌশল বিভাগ, বুয়েট; তারিক হায়দার, সাবেক জেলা ও সেশন জজ, এবং সেন্টার ফর লিগ্যাল স্টাডিজ এর ফ্যাকাল্টি মেম্বার; ওপেন একসেস বাংলাদেশ এর উপদেষ্টা এবং ইসাবেলা ফাউন্ডেশন এর প্রধান গবেষক ড. আনিসুজ্জামান খান; ওপেন একসেস বাংলাদেশ এর উপদেষ্টা ও হাক্কানি প্রকাশনার প্রকাশক মোঃ গোলাম মোস্তফা।
অনুষ্ঠানে বক্তারা ওপেন একসেস বাংলাদেশকে সাধুবাদ জানান। তারা আশা প্রকাশ করেন বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মশালা ও প্রচারণার মাধ্যমে দ্রুত বাংলাদেশে ওপেন একসেস সোর্সগুলোর মাধ্যমে গবেষণা অতি জনপ্রিয় হয়ে উঠবে।
অনুষ্ঠানে ওপেন একসেস বাংলাদেশ এর উপদেষ্টা, ইসাবেলা ফাউন্ডেশনের প্রধান বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা ড আনিসুজ্জামান খান বলেন, "জ্ঞানকে কোনো সীমানা দিয়ে আটকে রাখা যায় না। দেশে-বিদেশে বহু বস্তুনিষ্ঠ গবেষণা সহজে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে উন্মুক্ততার কোনো বিকল্প নেই। তথ্য ও গবেষণার উন্মুক্ততা দেশ ও সমাজকে সামনের দিকে এগিয়ে নেবে"।
সাবেক সচিব ও সেন্টার ফর লিগ্যাল স্টাডিস বাংলাদেশের চেয়ারম্যান কাজী হাবিবুর আউয়াল বলেন, "বাংলাদেশের মতো অনুন্নত দেশগুলোর মধ্যে আধুনিক সকল জার্নাল পুস্তকগুলো বেশি দামে কিনে গবেষনণা করা বেশ কঠিন। এক্ষেত্রে শিক্ষক গবেষক ও ছাত্রদের মাঝে ওপেন একসেস বাংলাদেশ বিভিন্ন ওপেন একসেস ম্যাটেরিয়ালগুলো জনপ্রিয় করার মাধ্যমে গবেষণা পরিচালনা সহজ করে তুলবে"।
অনুষ্ঠানের শেষে ওপেন একসেস বাংলাদেশ এর পক্ষ থেকে অতিথিদের ও আয়োজনে সহায়তাকারীদের হাতে শুভেচ্ছা উপহার তুলে দেয়া হয়।
উল্লেখ্য, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ বুখারেস্ট ঘোষণা অনুযায়ী দেশে যাত্রা শুরু করে ‘ওপেন একসেস বাংলাদেশ’। অনলাইন এই প্লাটফর্মটি আন্তজার্তিক ‘ওপেন একসেস’- এর একটি শাখা। সেদিন ওপেন একসেস এক্টিভিস্ট কনক মনিরুল ইসলামকে আহ্বায়ক ও প্রকৌশলী শুভ্রা কর’কে সদস্য সচিব করে প্রাথমিকভাবে ১৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়।