স্কুল ম্যাগাজিনে পহেলা বৈশাখ ‘বিজাতীয় অপসংস্কৃতি’

প্রকাশ | ২১ এপ্রিল ২০১৭, ১৩:৪৭

অনলাইন ডেস্ক

“বাংলা নববর্ষের নামে বর্তমানে যেসব অনুষ্ঠানাদির আয়োজন করা হয়, বাঙালি মুসলমানদের আবহমান সংস্কৃতি ও জীবনাচারের সঙ্গে তার কোন সম্পর্ক নেই। বরং বাংলা নববর্ষের নামে এক শ্রেণির বুদ্ধিজীবী ও সংস্কৃতিসেবী যা কিছু করছেন তা মূলত হিন্দু সংস্কৃতিরই প্রতিরূপ। ‘বাংলা সংস্কৃতি’র নামে তা চালাবার ও একে সর্বজনীন বাঙালির সংস্কৃতি বলে দাবি করা হলেও ৯০% বাঙালি তথা বাংলাদেশী মুসলমানের ঈমান, আকীদা ও ধর্মীয় মূল্যবোধের সঙ্গে তা সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এটা আমাদের জন্য বিজাতীয় অপসংস্কৃতি।”

এমনটাই প্রকাশিত হয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হরিমোহন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের বার্ষিক স্কুল ম্যাগাজিন ‘মঞ্জুরী’-তে ‘বাংলা নববর্ষ: ইতিহাস, উদযাপন-রীতি ও আমাদের সংস্কৃতি’ শীর্ষক প্রকাশিত প্রবন্ধে।

২০ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) বিকেলে অভিভাবকসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার ৩৫ জন স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবাদপত্র জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হাসানের নিকট পেশ করেন তারা। প্রতিবাদপত্রে উল্লেখ করেন, আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি, বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক বাদরুল ইসলাম লিখিত ওই প্রবন্ধে বাঙ্গালী সংস্কৃতিকে কটাক্ষ করা হয়েছে। ভুল তথ্য উপস্থাপনের মাধ্যমে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। শিক্ষক সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়াচ্ছেন। এ লিখনী রাষ্ট্রের অসাম্প্রদায়িক নীতির পরিপন্থী যা নতুন প্রজন্মকে বিপথগামী করবে। তাদেরকে ভুল পথে পরিচালিত করবে যা কোন ভাবেই কাম্য নয়।

প্রতিবাদে আরও উল্লেখ করা হয়, এ ধরনের বিভ্রান্তিকর প্রবন্ধ ছাপানোর দায়-দায়িত্ব স্কুল কর্তৃপক্ষকেই বহন করতে হবে। অভিযোগকারীরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

জেলা প্রশাসক বলেন, এ ব্যাপারে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি কাজ শুরু করেছে। কমিটির কাছে সংশ্লিষ্টরা ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছেন। রিপোর্ট পাবার পরপরই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

প্রতিবাদপত্র প্রদানকালে উপস্থিত ছিলেন জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সিরাজুল হক, হরিমোহন প্রাক্তন ছাত্র সমিতির সাবেক সভাপতি ইকবাল মনোয়ার খান, বঙ্গবন্ধু পরিষদ সাধারণ সম্পাদক শামসুজ্জামান বাবু, চাঁপাইনবাবগঞ্জ শাখা সিপিবি সাধারণ সম্পাদক আ্যাড. আবু হাসিব, সাংস্কৃতিক কর্মী মনিম উদ দৌলা চৌধুরী, জেলা যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক শহীদুল হুদা, জেলা ছাত্রলীগ সাবেক সভাপতি ফাইজার রহমান, অভিভাবক আশিক আহমেদ, নাগরিক কমিটি সদস্য সচিব মনিরুজ্জামান, বাংলাদেশ ভারত সম্প্রীতি পরিষদ চেয়ারম্যান আ্যাড. আফসার আলী, বঙ্গবন্ধু তরুণ লেখক পরিষদ সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর মো. ইব্রাহীম, সনাক সদস্য আ্যাড. সাইফুল ইসলাম, অব.শিক্ষক নইমুল বারী প্রমূখ।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক তৌফিকুল ইসলাম এ সময় উপস্থিত ছিলেন। প্রবন্ধটি প্রকাশের পর থেকেই এটি নিয়ে অভিভাবকসহ স্থানীয় বিভিন্ন মহলে ব্যাপক ক্ষোভ ও  সমালোচনা শুরু হয়। স্থানীয় একাধিক দৈনিক পত্রিকা এ ব্যাপারে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে একাধিক সংবাদও প্রকাশ করেছে।