স্কুল পুড়ে ছাই, তাঁবুতে পাঠদান
প্রকাশ | ২৮ জানুয়ারি ২০১৭, ২১:২৩
দুর্বৃত্তদের দেয়া আগুনে পুড়ে গেছে গাইবান্ধা সদর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের দুর্গম চরাঞ্চলের কামারজানি ইউনিয়নের কুন্দেরপাড়ায় স্থানীয় এনজিও গণউন্নয়ন কেন্দ্র পরিচালিত 'গণ উন্নয়ন একাডেমি' নামে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়। পুড়ে ছাই হয়ে গেছে অফিসকক্ষ, শিক্ষক মিলনায়তন ও লাইব্রেরি এবং ১০টি ক্লাসরুম, আসবাবপত্র, শিক্ষা সরঞ্জাম, আসন্ন এসএসসি পরীক্ষার প্রবেশপত্র এবং এসএসসি ও জেএসসি পাস হাজার হাজার শিক্ষার্থীর সনদপত্রসহ সবকিছু। বৃহস্পতিবার রাত ১২টার পরে কোনো এক সময়ে বিদ্যালয়ে হঠাৎ এই আগুনের সূত্রপাত হয়। মুহূর্তেই জ্বলে ওঠে আগুন। এলাকাবাসী আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হন। পরদিন শুক্রবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ওই আগুনের ধোঁয়া দেখা গেছে।
শুক্রবার প্রিয় স্কুলের ধ্বংসাবশেষের সামনে শিক্ষার্থী, শিক্ষক আর অভিভাবকদের বুকফাটা কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে কুন্দেরপাড়া চরের পরিবেশ। গত বৃহস্পতিবার প্রিয় বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে নেচে-গেয়ে আনন্দ উল্লাস করে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের আনুষ্ঠানিক বিদায় দিয়ে বাড়ি ফেরে শিক্ষার্থীরা। কিন্তু গভীর রাতে দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায় আনন্দ বেদনার এই মিলনস্থল ও ভবিষ্যৎ স্বপ্নের বীজ। অনিশ্চিত হয়ে পড়ে এসএসসি পরীক্ষার্থী ও শত শত শিক্ষার্থীর জীবন।
স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করে জানান, সম্প্রতি স্থানীয় কিছু লোকজন স্কুলের কার্যক্রমে বাধা দিয়ে আসছিল। এছাড়া এলাকায় কিছু ব্যক্তি আরেকটি স্কুল প্রতিষ্ঠারও পরিকল্পনা করছিল। অন্যদিকে একাডেমির পাশের এলাকায় মাদক, জুয়া, মদ ও যাত্রার নামে নগ্ন নাচ ও গানের আসর চলে আসছে। এ নিয়ে বৃহস্পতিবার কুন্দেরপাড়ার এই স্কুলের মাঠে এক সুধী সমাবেশ হয়। এসব কারণে দুর্বৃত্তরা ক্ষিপ্ত হয়ে হাইস্কুলে আগুন দিয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গাইবান্ধা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) এ কে এম মেহেদী হাসান জানান, এ ঘটনায় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাদী হয়ে থানায় নাশকতার মামলা দায়ের করেছেন।
তবে দুর্বৃত্তদের এই চেষ্টায় হার না মেনে প্রতিবাদে নেমেছেন স্কুলটির শিক্ষক শিক্ষার্থীরা। শনিবার সকালে বিদ্যালয় চত্বরে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সভায় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী-শিক্ষক, অভিভাবক ও এলাকাবাসী অংশ নেন।
কামারজানি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাকির হোসেন সালামের সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন- বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আসাদুজ্জামান সরকার, গণ উন্নয়ন কেন্দ্র (জিইউকে) নির্বাহী প্রধান আব্দুস সালাম, উপাধ্যক্ষ জহুরুল কাইয়ুম, প্রাক্তন ইউপি চেয়ারম্যান নুরুন্নবী সরকার ছকমল প্রমুখ।
বক্তারা স্কুল পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির দাবি জানান।
শুক্রবার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান গাইবান্ধার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শামসুল আজম, গাইবান্ধা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলেয়া ফেরদৌস জাহান, সদর থানার ওসি মেহেদি হাসান। শনিবার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন হুইপ ও গাইবান্ধা আসনের সংসদ সদস্য মাহাবুব আরা বেগম গিনি।
এ সময় তিনি বলেন, নাশকতা ও সন্ত্রাসী তৎপরতার মাধ্যমে যে সন্ত্রাসী চক্র এদেশের উন্নয়ন ও নারী শিক্ষাকে বাধাগ্রস্ত করতে চায় তারাই সুপরিকল্পিতভাবে প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের শিক্ষার উন্নয়নে নিয়োজিত এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিকে আগুনে ভস্মীভূত করেছে। সর্বস্তরের জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে নাশকতাকারি এবং মৌলবাদি এই অশুভ চক্রকে অবশ্যই দমন করবে।
গণ উন্নয়ন একাডেমির প্রধান শিক্ষক আসাদুজ্জামান জানান, শনিবার স্কুলের রক্ষা পাওয়া দুটি শ্রেণিকক্ষ এবং মাঠে তাবু টানিয়ে তিনটি ক্লাস নেওয়া হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কিছুটা কম ছিল।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শামসুল আজম জানান, দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য নতুন করে প্রবেশপত্র ইস্যুর ব্যবস্থা করা হবে।