প্রতিবাদে উত্তাল শাবি, উপাচার্য অবরুদ্ধ
প্রকাশ | ২১ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৭:৫৮ | আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৮:০৭
ছাত্রলীগের দুই পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও বোমাবাজির ঘটনাকে কেন্দ্র করে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৭ দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণার প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে আছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। ক্যাম্পাসের বৈদ্যুতিক সংযোগ বন্ধ করে উপাচার্যকে তার কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রেখেছেন সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা-কর্মী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শাবিপ্রবিতে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার পর পুলিশ রাতে শাহপরাণ, বঙ্গবন্ধু ও সৈয়দ মুজতবা আলী হলে অভিযান চালিয়ে ধারালো অস্ত্র, হাতবোমা ও গুলি উদ্ধার করে। বুধবার সকালে অনির্দিষ্টকালের জন্য হল বন্ধের ঘোষণা আসে। কিন্তু এই সিদ্ধান্তকে হঠকারী ও ষড়যন্ত্রমূলক দাবি করে এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলনে নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক সংগঠন ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনকারীদের কাছ থেকে জানা যায়, বুধবার সকাল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশ গেট বন্ধ করে রাখা হয়। দুপুরের দিকে এলাকাবাসীর প্রতিবাদের মুখে গেট খুলে দেয়া হলে দুপুর ২টা থেকে ক্যাম্পাসে ছাত্রছাত্রীরা জড়ো হতে শুরু করেন। এসময় শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ শুরু করেন। একপর্যায়ে রেজিস্ট্রার ভবনের দুই দিকের দরজাতেই তালা মেরে ভিসিকে অবরুদ্ধ করে ফেলেন শিক্ষার্থীরা। এসময় ক্যাম্পাসের বৈদ্যুতিক সংযোগও বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়।
এসময় পুলিশ এসে ক্যাম্পাসে অবস্থান নিলে হামলার আশংকায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা ফুল হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন। পুলিশের পক্ষ থেকে হামলা করা হলে ফুল দিয়ে সেটা প্রতিহত করার সিদ্ধান্ত নেন আন্দোলনকারীরা। তবে পরবর্তীতে আন্দোলনকারীদের সাথে কথা বলে পুলিশ সরে যায়।
বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি চক্রের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় আন্দোলন চালিয়ে আসছিল ক্যাম্পাসের সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো। গত ১৫ ডিসেম্বর প্রশাসনের ‘অস্বচ্ছতা’ ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ‘অসৌজন্যমূলক’ আচরণের প্রতিবাদে বিজয় দিবসের কর্মসূচি বর্জনের ঘোষণা দেয় ক্যাম্পাসের সব সাংস্কৃতিক সংগঠন। এই আন্দোলনকে স্তিমিত করতেই পরিকল্পিতভাবে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব বাধিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেছেন বলে অভিযোগ করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর মুখপাত্র সারওয়ার তুষার বলেন, "গত ২৬ নভেম্বর ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের শিক্ষার্থী আল আমিনসহ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ইশরাত ইমতিয়াজ হৃদয়কে আটক করে জালালাবাদ থানার পুলিশ। আটক হওয়ার পর পুলিশ জালিয়াত চক্রের বিরুদ্ধে মামলা করলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো মামলা করেনি। প্রশাসন জালিয়াত চক্রের মূল হোতাদের আড়াল করার প্রতিবাদে গত ৪ ডিসেম্বর থেকে আমরা আন্দোলন করে আসছি। এ বিষয়ে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তারা আমাদের সাথে ‘অসৌজন্যমূলক’ আচরণ করে। আমাদের যৌক্তিক আন্দোলনকে অন্যদিকে প্রবাহিত করতে উপাচার্য ক্যাম্পাসে দুটি গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ বাধিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেছেন। ক্যম্পাস সচল করার ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে রাখা হবে”।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত উপাচার্যকে এখনো অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। ক্যাম্পাসে বৈদ্যুতিক সংযোগ এখনো বিচ্ছিন্ন। কিছুক্ষণ আগে সেখানে আবারো পুলিশ অবস্থান নিয়েছে। এমতাবস্থায় পুনরায় হামলার আশংকা করছেন শিক্ষার্থীরা। তবে হামলা হলেও দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে রাখার সিদ্ধান্তে এখনো অটল রয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকে জানিয়েছেন, প্রয়োজনে আমরা সারা রাত এখানে অবস্থান করবো, কিন্তু এই হঠকারী সিদ্ধান্ত বাতিল না হলে ক্যাম্পাস ছাড়বো না। আমাদের অনেকেরই ফাইনাল পরীক্ষা চলছে। এসময় এরকম সিদ্ধান্ত মেনে নেয়া আমাদের জন্য আত্মঘাতী হবে।