রোকেয়া দিবসে রোকেয়া হলের এ কেমন ভুল!
প্রকাশ | ১১ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৯:৫৯
৯ ডিসেম্বর ছিল নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের ১৩৬ তম জন্ম ও ৮৪ তম মৃত্যুবার্ষিকী। বাংলাদেশ প্রতিবছর এই দিনটিকে বেগম রোকেয়া দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। বেগম রোকেয়ার প্রতি সম্মান জানাতে সম্প্রতি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) নতুন ছাত্রী হলের নামও বেগম রোকেয়া হল রাখা হয়েছে। কিন্তু মাস খানেক আগে চালু হওয়া এই হলে গত পরশু বেগম রোকেয়ার স্মরণে যে ‘মিলাদ মাহফিল’ এর আয়োজন করা হয় তাতে এক লজ্জাজনক ভুল প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে ঐ বিশ্ববিদ্যালয় সহ গোটা শিক্ষা ব্যবস্থাকে।
৯ ডিসেম্বর, শুক্রবার এই ‘মিলাদ মাহফিলের’ অনুষ্ঠানের জন্য বাকৃবির রোকেয়া হল কর্তৃপক্ষ যে ব্যানার করে তাতে বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের ছবির বদলে আরেক মহিয়ষী নারী, বেগম পত্রিকার সম্পাদক নূরজাহান বেগমের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে।
এই অনুষ্ঠানে নতুন এই হলের প্রাধ্যক্ষ ড. ফরিদা ইয়াসমিন বারী ও কয়েকজন আবাসিক শিক্ষকও উপস্থিত ছিলেন। প্রাধ্যক্ষ এবং উপস্থিত আবাসিক শিক্ষকদের মতো দায়িত্ববান কারো চোখেই এই ভুল ধরা পড়েনি। পরবর্তীতে এর ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এ নিয়ে বিদ্রূপ ও সমালোচনার ঝড় উঠে।
বাকৃবির বেগম রোকেয়া হলের প্রাধ্যক্ষ ড. ফরিদা ইয়াসমিন বারী এই ‘অনাক্ঙ্খিত ভুলের’ জন্য নিজের দায় স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করেন।
তবে এই ঘটনাকে তিনি ‘ছোট ঘটনা’ হিসাবে উল্লেখ করে বলেন, আমরা পরে সেই ছবি বদল করেছি। ভুলতো মানুষেরই হয়। হলের অনুষ্ঠানের আগে নানা কাজে আমরা খুব ব্যস্ত ছিলাম। আমাদের এক কর্মচারীকে দিয়ে এটি প্রিন্ট করিয়ে আনা হয়।
তিনি বলেন, "অনুষ্ঠানের আগে ছবিটি দেখে আমার সন্দেহ হয়। তখন আমি তাদের বলি, এটা কি বেগম রোকেয়ার ছবি? তখন উপস্থিত সকলে বলে, হ্যাঁ , ম্যাডাম এটা বেগম রোকেয়ারই ছবি। ওই সময় হলের প্রায় ১৪০ জন ছাত্রী উপস্থিত ছিল, তারাও ভুলটি ধরতে পারেনি"।
তবে দুঃখ প্রকাশ করেই দায়মুক্তি সম্ভব কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, "এখন আমার দুঃখ প্রকাশ ছাড়া বলার কিছু নেই। আমি যেহেতু এই হলের দায়িত্বে আছি সেহেতু দায় আমারই। আমি খুবই দুঃখিত"।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই হলের এক আবাসিক শিক্ষার্থী বলেন, "ঘটনাটি হলের সকল শিক্ষার্থীদের জন্যও লজ্জার। এটি ছোট ঘটনা নয়। আমরা এই একটি ঘটনার মধ্য দিয়ে দুইজন মহিয়ষীকে অসম্মান করেছি। ওই লজ্জার স্মারকটিতে (ব্যানার) একইসঙ্গে বেগম রোকেয়া ও নূরজাহান বেগমকে অপমান করেছি"।
এদিকে এই ঘটনাকে রীতিমতো ‘লজ্জাজনক’ বলে উল্লেখ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠনগুলো।
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন বাকৃবি শাখার সভাপতি তানভীর আহমেদ রিয়াদ এই বিষয়ে বলেন, "ঘটনাটি আমাদের জন্য লজ্জাজনক। এটা আমাদের চেতনার দৈনতা। হতে পারে এটা হলের কোনো কর্মচারী করিয়েছেন। কিন্তু হলে প্রভোস্ট আর আবাসিক শিক্ষকেরা আছেন। ওই অনুষ্ঠানে তারা উপস্থিতও ছিলেন। এতো বড় ভুল তাদের চোখে ধরা পড়া উচিত ছিল"।
তিনি বলেন, "এই লজ্জাজনক ভুলের দায় হলের দায়িত্বশীলদেরই নিতে হবে। আমরা এই ঘটনার প্রতিবাদে উপাচার্যের নিকট লিখিত অভিযোগ করবো"।