'আপনি অসময়ে চলে গেলেন এইটা অন্যায় না?'
প্রকাশ | ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১৫:০৩
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক আকতার জাহান জলির আত্মহত্যার ঘটনা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না বিভাগের প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। প্রিয় শিক্ষক এর এই অকাল মৃত্যুতে শোক নেমে এসেছে রাবি পরিবারের সকল সদস্যের মনে। এই বিষাদ সরব হয়ে উঠেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে। 'জলি ম্যাডাম'কে নিয়ে স্মৃতিচারণা ও শোক প্রকাশ করেছেন অনেকে।
প্রিয় শিক্ষককে হারানোর শোকে ফেসবুকের প্রোফাইল পিকচারও কালো করে দিয়েছেন অনেকেই।
বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের রাবি প্রতিনিধি রফিকুল ইসলাম ফেসবুকে লিখেছেন, ‘... ম্যাম আমাদের রিপোর্টিং পড়াতেন। শিখিয়েছেন কীভাবে কারো মৃত্যুসংবাদ লিখতে হয়। আজ তারই মৃত্যু নিয়ে লিখতে হচ্ছে। লিখতে হচ্ছে তার কক্ষে পাওয়া সুইসাইড নোট নিয়ে।...’
আরেকটি স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, ‘লাশকাটা ঘরে ফেলে এসেছি আপনার দেহ। কিন্তু ফেলতে পারিনি আপনার স্মৃতি। ... মায়ের অকাল মৃত্যুতে সন্তানদের অবস্থা কেমন হয়?’
বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী এনটিভির সিনিয়র রিপোর্টার আরাফাত সিদ্দিকী ফেসবুকে লিখেছেন, “যার লেখা সব সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্ল্যাকবোর্ডে দেখেছি, ইনকোর্স পরীক্ষার খাতাতে আমার ভুলগুলোর পাশে যিনি সুন্দর করে মন্তব্য লিখতেন, যা দেখে আমি মুগ্ধ হতাম, সেই হাতের লেখা দেখলাম আজ অনেকদিন পর, একটি ‘সুইসাইড নোটে’। ... আর তিনি এখন আছেন রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে।’
বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী যমুনা টেলিভিশনের বগুড়া ব্যুরো প্রধান মেহেরুল সুজন তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘... কয়েক মাস আগেও আমাকে ফোন করে আমাদের বন্ধু ওয়াহিদা সিফাতের হত্যা মামলার খোঁজখবর নিলেন ম্যাডাম। আর এখন তার অপমৃত্যুর খবর নিয়ে ছুটে বেড়াচ্ছেন আমার রাজশাহীর সহকর্মীরা। ভাবতেই কেমন যেন শূন্যতা অনুভব করছি চারপাশে।’
প্রথম আলোর রাজশাহী প্রতিনিধি মাহবুব আলম লিখেছেন, ‘আপনি তো অনেক যত্ন করেই রিপোর্টিং শেখাতেন ম্যাম; তারপরও কেন আজ আপনার রিপোর্ট লিখতে গিয়ে হাতটা কাঁপছিল, কেন সবকিছু গুলিয়ে যাচ্ছিল? রিপোর্টিং শিখিয়ে কী আজ সবচেয়ে বড় পরীক্ষাটা নিলেন আপনি? ...।’
বিভাগের শিক্ষার্থী বহ্নি মাহবুবা লিখেছেন, ‘... ভাইভা বোর্ডে কোনো একটা প্রসঙ্গে বলেছিলেন, যে অন্যায় করে তাকে কি সাপোর্ট দেওয়া উচিত? এই যে আপনি অসময়ে চলে গেলেন এইটা অন্যায় না? খুব অন্যায়। মানতে পারছি না। গলার কাছটায় দলা পাকিয়ে উঠছে।’
আকতার জাহানের এমন চলে যাওয়া মানতে পারছেন না রাজশাহীতে কর্মরত বিভিন্ন গণমাধ্যমের সংবাদকর্মীরাও। তারা বলছেন, এমন ঘটনা শুধু অনাকাঙ্ক্ষিত নয়; রীতিমতো বিস্ময়ের।
উল্লেখ্য, কয়েক বছর আগে স্বামী তানভীর আহমদের সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ হয় আকতার জাহানের। এরপর থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরী ভবনের ৩০৩ নম্বর কক্ষে একাই থাকতেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আকতার জাহান জলি। শুক্রবার বিকেল ৫টার দিকে কক্ষের দরজা ভেঙে থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
কক্ষটির দরজা ভেতর থেকে লাগানো ছিল। ওই কক্ষে আকতার জাহানের লেখা একটি সুইসাইড নোটও পাওয়া গেছে। প্রাথমিকভাবে পুলিশ ধারণা করছে, তিনি আত্মহত্যা করেছেন।
সুইসাইড নোটে তিনি লিখেছেন, "আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়। শারীরিক, মানসিক চাপের কারণে আত্মহত্যা করলাম। সোয়াদকে (ছেলে) যেন ওর বাবা কোনোভাবেই নিজের হেফাজতে নিতে না পারে। যে বাবা সন্তানের গলায় ছুরি ধরতে পারে- সে যেকোনো সময় সন্তানকে মেরে ফেলতে পারে বা মরতে বাধ্য করতে পারে"।