'আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়'
প্রকাশ | ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১৪:২০
নিজের মৃত্যুর জন্য কাউকে দায়ী না করে একটি আত্মহত্যার চিরকুট লিখে গেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আকতার জাহান জলি। রাবি শিক্ষকদের আবাসিক ভবন থেকে শুক্রবার তার লাশ উদ্ধারের পর সেখানে ‘আত্মহত্যার’ একটি চিরকুট পাওয়া গেছে।
ওই চিরকুটে লেখা হয়েছে, “আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়। শারীরিক, মানসিক চাপের কারণে আত্মহত্যা করলাম।”
তবে ছেলেকে যাতে তার বাবার হেফাজতে দেওয়া না হয়, সে বিষয়েও সতর্ক করা হয়েছে ওই চিরকুটে।
চিরকুটে লেখা হয়েছে, “সোয়াদকে যেন ওর বাবা কোনোভাবেই নিজের হেফাজতে নিতে না পারে। যে বাবা সন্তানের গলায় ছুরি ধরতে পারে, সে যে কোনো সময় সন্তানকে মেরেও ফেলতে পারে বা মরতে বাধ্য করতে পারে।”
তবে চিরকুটের বিষয়ে তানভীর আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “সোয়াদ তো অনেকদিন আমার কাছেই ছিল। কিছুদিন আগে সে নানুর বাড়িতে বেড়াতে যায়। ওর মা চাচ্ছিল ঢাকাতেই ও লেখাপড়া করুক। একজন মানুষ মরে যাওয়ার আগে কেন এরকম নোট লিখে গেল তা আমার বোধগম্য নয়।”
মৃতদেহ ঢাকায় না পাঠিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দিতেও অনুরোধ করা হয়েছে ওই চিরকুটে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মামুন হায়দার বলেন, “পুলিশের সঙ্গে আমরা তার রুমে গিয়ে সুইসাইড নোটটা পেয়েছি। চিঠিতে সই না থাকলেও এটা তার হাতের লেখা বলেই মনে হয়েছে।”
রাজশাহী মহানগর পুলিশের কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, “ঘর তল্লাশি করে যে সুইসাইড নোট আমরা পেয়েছি, সেটা উনার ডায়েরির সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হয়েছে। হাতের লেখা একই মনে হয়েছে।”
উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন সংসার করার পর ২০১২ সালে একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তানভীর আহমেদের সঙ্গে আকতার জাহানের ছাড়াছাড়ি হয়। তাদের একমাত্র ছেলে চলতি বছরের শুরু থেকে ঢাকায় নানাবাড়িতে থেকে একটি ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলে পড়ছে। বিচ্ছেদের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক ভবনে একাই থাকতেন আকতার জাহান। শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে শিক্ষকদের আবাসিক ভবন জুবেরীর ৩০৩ নম্বর কক্ষের দরজা ভেঙে তার লাশ উদ্ধার করা হয়।
তার সহকর্মী সহযোগী অধ্যাপক দুলাল চন্দ্র বিশ্বাস জানান, আকতার জাহানকে তার ঘরে মশারির ভেতরে শোয়া অবস্থায় পাওয়া যায়। তার মুখে ফেনা ও রক্ত বেরিয়ে আসার মতো কালো দাগ ছিল।
হাসপাতালে আনার অনেক আগেই আকতার জাহানের মৃত্যু হয়েছে বলে জানান রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মাহিনুল ইসলাম। তবে ময়নাতদন্ত না করে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
রাজশাহীর পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, “পরিবার বা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাদের বাছে কোনো অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে সে অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নেব।”