রুম টু রিড বাংলাদেশের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস পালন
প্রকাশ | ১২ নভেম্বর ২০১৯, ১৯:৩২
‘রুম টু রিড বাংলাদেশ’ ‘মেয়ে শিশুদের শক্তি- মুক্ত, অদম্য; দূর করবে জেন্ডার বৈষম্য’ - এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আজ বাংলাদেশ শিশু একাডেমিতে আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস ২০১৯ উদযাপন অনুষ্ঠান আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেব উপস্থিত ছিলেন জনাব মহিবুল হাসান চৌধুরী, এমপি, মাননীয় উপমন্ত্রী, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব প্রফেসর ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক, মহাপরিচালক, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর বাংলাদেশ এবং জনাব লাকী ইনাম, চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রুম টু রিড বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর রাখী সরকার। এছাড়াও, উপস্থিত ছিলেন সরকারি কর্মকর্তাবৃন্দ, শিক্ষানুরাগি এবং আন্তর্জাতিক/জাতীয় উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দএবং ঢাকার ১৩টি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকবৃন্দ।
অনুষ্ঠানের সভাপতি রাখী সরকার তার স্বাগত বক্তব্যে বলেন, গত দশ বছরে রুম টু রিড বাংলাদেশ ২০০৯ সাল থেকে মেয়েশিশু শিক্ষা সহায়তা কার্যক্রমের আওতায় ৫০০০ মেয়েশিশুকে সহায়তা করেছে। এবং এখন পর্যন্ত সফলতার সাথে ৭৫০ মেয়েশিশু মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেছে এবং বর্তমানে তারা উচ্চ শিক্ষায় অধ্যয়নরত আছেন। রুম টু রিড কার্যক্রমভুক্ত মেয়েশিক্ষার্থীদের মাধ্যমিক স্তরে পাশের হার ৯৩.৭৭% যেখানে জাতীয় পর্যায়ে পাশের হার ৬৬.৬৪%। তিনি আরো বলেন, ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র - সকল ক্ষেত্রে ছেলে-মেয়ের সমান মর্যাদা এবং সমঅধিকার নিশ্চিত হলে জেন্ডার বৈষম্য দূর হবে। পাশাপাশি আমাদের মেয়েশিশুদের অবস্থা ও অবস্থান পরিবর্তনের জন্য পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কমিউনিটি, জনপ্রতিনিধি ও রাষ্ট্রের সমন্বিত প্রচেষ্টার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন।
প্রধান অতিথি মাননীয় উপমন্ত্রী জনাব মহিবুল হাসান চৌধুরী, এমপি তার বক্তব্যে বলেন, আমি ব্যাক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি আমাদের কন্যা সন্তানদের এগিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের বিশেষ নজর দিতে হবে এবং এক্ষেত্রে নারীর পাশাপাশি পুরুষদেও এগিয়ে আসতে হবে এবং অতিরিক্ত দায়িত্ব নিতে হবে। বাংলাদেশ সরকারও নানাবিদ উদ্যোগ নিয়েছে, যেমন, বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘ কর্তর্ৃক ঘোষিত ইন্টারন্যাশনাল ক্যাম্পেইন ফর ইকুয়ালিটি ‘ঐবঋড়ৎঝযব্থ এই ক্যাম্পেইন’র সাথে একাত্বতা ঘোষণা করেছে। ইতিহাস থেকে আমরা জানি, নারীরা কোনো কালেই পিছিয়ে ছিলনা। আজকে যেসব কাজ আমাদের সামনে শ্রমঘন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যেমন- কৃষিকাজ তাও কিন্তু আমদের নারীরাই শুরু করেছে। আজকে কিছু পেশা আমাদের সামনে ‘শুধু নারীদের জন্য’ হিসেবে আবির্ভুত হয়েছে, যেমন- শিক্ষকতা, এটা কিন্তু ঠিক নয়। নারীকে সেভাবেই গড়ে উঠতে হবে যাতে করে সে পেশার সর্বচ্চো আসনে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে এবং এক্ষেত্রে তার বিকাশের দার উন্মোক্ত করে দিতে হবে এবং মেয়েরা যাতে তার পেশা বেছে নিতে পারে সে লক্ষ্যে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। আজকে রুম টু রিড কর্তৃক আয়োজিত কন্যা শিশু দিবস উদযাপনের থীম এর সাথে আমি সম্পূর্ণ একমত। এবং রুম টু রিড যে পাঠাভ্যাস নিয়ে কাজ করছে তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কেননা ডিজিটাল কনটেন্ট এর চেয়ে বই পড়া খুবই কার্যকর। আমি রুম টু রিড এর এই কার্যক্রমের সাফল্য কামনা করছি।
বিশেষ অতিথি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জনাব প্রফেসর ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক তার বক্তব্যে বলেন, মেয়েশিশুদের যেমন মুক্ত এবং অদম্য শক্তিতে এগিয়ে যেতে হবে ঠিক তেমনি ছেলেদেরও এই শক্তিতে এগিয়ে যেতে হবে। একাডেমিক কার্যক্রমের বাইরে শিক্ষার্থীরা যাতে সৃজনশীল এবং উদ্বাভাবনী শক্তিতে সমৃদ্ধ হতে পারে সে লক্ষ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর এবছর ছয়টি কার্যক্রম সারাদেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শুরু করেছে; এবং আগামী বছর এই ধরনের কার্যক্রম আরো বাড়ানো হবে। পড়ালেখার পাশাপাশি আমাদের কন্যা সন্তানদের শারীরিকভাবেও সক্ষম হত হবে। আমাদের কন্যা শিশুরা এখনো অপুষ্টিতে ভুগছে, এটা শুধু যে অর্থনৈতিক দৈনদশার কারনেই হচ্ছে আসলে তা ঠিক নয়; অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় খাদ্যাভ্যাসও এক্ষেত্রে ভুমিকা পালন করে, সেক্ষেত্রে আমাদের খাদ্যাভ্যাসের ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।
জনাব লাকী ইনাম, চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি বলেন, বাল্যবিবাহ এবং যৌতুক এখনো আমদের সমাজে মেয়ে শিশুদের এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে অন্যতম বাধা। এক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থাসমূহকে এহিয়ে আসতে হবে। এক্ষেত্রে রুম টু রিড তাদের কার্যক্রমের মাধ্যমে মেয়েশিশুদের সহায়তা করছে, আমি তার সর্বাঙ্গিন সাফল্য কামনা করছি।
পতাকাবাহী বিশ্বজয়ী প্রথম বাংলাদেশী নারী জনাব নাজমুন নাহার তার এক পৃথিবী ভ্রমণের গল্প বিনিময় করেন শিক্ষার্থীদের সাথে। তিনি বলেন, অসম্ভব নয় কোনো কিছু। মেয়ে শিশুদের উৎসাহিত করে বলেন, তোমাদের জীবনে অনেক বাধা বিপত্তি আসবে, কিন্তু কখনো মনোবল হারানো যাবেনা, মানসিক শক্তি ধরে রেখে এগিয়ে যাও, সাফল্য আসবেই একদিন।
জনপ্রিয় অভিনেতা জনাব বন্যা মির্জা তার বক্তব্যে বলেন, মেয়েশিশুদের সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে রাষ্ট্র এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি পরিবার এবং অবিভাকদেরও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে হবে।
অনুষ্ঠানে অতিথিবৃন্দ জেন্ডার বৈষম্য দূর করে মেয়েশিশুদের জীবনকে আলোকিত করার সামাজিক আন্দোলনে সকলের ভূমিকা তুলে ধরে বলেন নারী বা পুরুষের একক পরিচয় নয়, বরং মানুষ এর পরিচয়ে সমান অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করা সম্ভব হলেই সমতার বিশ্ব গঠন করা সম্ভব। পাশাপাশি এই লক্ষ্য অর্জনে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপসমূহ নিয়ে কথা বলেন উপস্থিত অতিথিরা। উল্লেখ্য, গত এক বছরে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে নারীদের অর্জন, গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নারীদের নেতৃত্ব, সাহিত্য-চলচ্চিত্র, বিজ্ঞানে-খেলাধুলায় নারীদের ভূমিকা আমাদের প্রেরণা যুগিয়েছে। আমরা নারী-পুরুষের বৈষম্যের অবসান ঘটিয়ে একটি সমতাপূর্ণ মানবিক বিশ্ব গঠনের প্রশ্নে বদ্ধপরিকর। আলোচনা অনুষ্ঠানের শেষে মেয়েশিশুদের অংশগ্রহনে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।
উল্লেখ্য, রুম টু রিড একটি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংগঠন যা বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১৬টি দেশে শিশুদের শিক্ষা সহায়তায় কাজ করে আসছে। সংগঠনটি ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষাস্তরে ‘মানসম্মত সাক্ষরতা’ এবং মাধ্যমিক পর্যায়ে ‘মেয়েশিশুদের শিক্ষা সহযোগিতা কার্যক্রম’- এর আওতায় মেয়েশিশুদের শিক্ষা ও জীবন-দক্ষতা উন্নয়নে কাজ করছে। বর্তমানে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের অনুমোদনক্রমে ঢাকা, নাটোর ও সিরাজগঞ্জ জেলায় ৩২টি মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৫০০০ মেয়েশিশুকে শিক্ষা সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে। ঢাকা জেলায় রুম টু রিড বাংলাদেশ ১৩টি মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ১৭০০ মেয়েশিশুকে শিক্ষা সহযোগিতা প্রদান করছে।