সেই অধ্যক্ষের এমপিও স্থগিত চেয়ে চিঠি
প্রকাশ | ১২ এপ্রিল ২০১৯, ১৩:৫৪ | আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৯, ১৩:৫৮
ফেনীর সোনাগাজীতে যৌন নিপীড়নের প্রতিবাদ করায় মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা মামলার প্রধান আসামি সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এ এস এম সিরাজ উদদৌলার এমপিও স্থগিত চেয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। এছাড়া একই মাদ্রাসার ইংরেজির প্রভাষক আফসার উদ্দিনেরও এমপিও স্থগিত চেয়ে চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে।
১১ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) এ সংক্রান্ত চিঠি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠিয়েছে মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর।
আগুনে পুড়িয়ে মারা মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ এবং অপর এক শিক্ষকের এমপিও স্থগিত করার জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে চিঠি পাঠিয়েছে মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর।
চিঠিতে বলা হয়েছে, মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে শ্লীলতাহানির মামলা নং-২৪, তারিখ ২৭/০৩/২০১৯ এবং হত্যা মামলা নং-১০, তারিখ ০৮/০৪/২০১৯ সোনাগাজী থানার প্রেক্ষিতে মাদরাসার অধ্যক্ষ এবং ইংরেজি বিষয়ের প্রভাষক গ্রেফতার হওয়ায় তাদের এমপিও স্থগিত হওয়া প্রয়োজন।
উল্লেখ্য, গত ৬ এপ্রিল (শনিবার) সকালে পৌরশহরের সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে আলিম পরীক্ষা দিতে এসে অগ্নিদগ্ধ হন নুসরাত।
ছাত্রীর ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বলেন, ওই ছাত্রীকে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা তার নিজের কক্ষে ডেকে নিয়ে রাফিকে শ্লীলতাহানি করেন অভিযোগে গত ২৭ মার্চ একটি মামলা করা হয়। ওই মামলায় এখনো কারাগারে আছেন ঐ অধ্যক্ষ। ঘটনার পর থেকে অধ্যক্ষের মুক্তির দাবিতে ও অধ্যক্ষের শাস্তির দাবিতে শিক্ষার্থীদের দু'টি অংশ আলাদা আলাদাভাবে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন।
বোনের বরাত দিয়ে নোমান বলেন, রাফি এ বছর আলিম পরীক্ষার্থী ছিলেন। ৬ এপ্রিল (শনিবার) সকালে রাফির আরবি প্রথমপত্র পরীক্ষা থাকায় বোনকে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে নিয়ে যান তিনি। সেসময় কয়েকজন ছাত্র ও অফিস সহকারী মো. মোস্তফা তাকে মাদ্রাসায় ঢুকতে বাধা দিলে তিনি বোনকে কেন্দ্রে দিয়ে চলে যান। পরে পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢুকার পর মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার পক্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থী নুসরাতকে মাদ্রাসার ছাদে ডেকে নিয়ে তাকে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা তুলে নিতে চাপ দেন। কিন্তু রাফি এ ব্যাপারে সম্মতি না দেয়ায় তিনজন শিক্ষার্থী মিলে তার হাত ধরে রেখে তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। এসময় তার চিৎকারে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা ছুটে এসে দ্রুত তাকে উদ্ধার করে প্রথমে সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে ফেনী সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু তার অবস্থা বিবেচনায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠান। শরীরের ৮০ শতাংশের বেশি পুড়ে যাওয়া ওই ছাত্রী ঢামেকের বার্ন ইউনিটের আইসিউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তার চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিতে কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কিন্তু ১০ এপ্রিল (বুধবার) রাত সাড়ে ৯টার দিকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে সাহসী নুসরাত। এদিকে, নুসরাত হত্যার বিচারের দাবীতে বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করছেন। ঝড় বয়ে যাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও।