ভিকারুননিসার সব শাখার ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত
প্রকাশ | ০৫ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৪:২৩
ভিকারুননিসা স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রতিটি শাখার সব শ্রেণির সব ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
৫ ডিসেম্বর (বুধবার) ভিকারুননিসার গভর্নিং বডির শিক্ষক প্রতিনিধি মুশতারী সুলতানা সংবাদ সম্মেলনে একথা জানান। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ স্থগিতাদেশ বহাল থাকবে বলেও জানান তিনি।
এসময় শিক্ষক মুশতারী সুলতানা বলেন, শিক্ষার্থীরা তাদের সহপাঠীকে হারিয়েছে। এ অবস্থায় তাদের পক্ষে পরীক্ষা দেয়া সম্ভব না। এ ঘটনায় আমরাও মর্মাহত। শিক্ষার্থীদের স্বার্থেই ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। পরবর্তী সিদ্ধান্ত মুঠোফোনে এসএমএসের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হবে।
সাংবাদিকদের অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, অনুগ্রহ করে আপনারা শিক্ষার্থীদের আমাদের প্রতিপক্ষ বানাবেন না। যা সত্য তা-ই প্রকাশ করউন।
ভর্তি বাণিজ্য, কোচিং বাণিজ্যের অভিযোগের প্রেক্ষাপটে তিনি বলেন, এ অভিযোগের সাথে আমি পুরোপুরি একমত নই। দু-একজন শিক্ষক এতে জড়িত থাকতে পারেন কিন্তু সবাই নয়। জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আমরা যথেষ্ট সচেষ্ট থাকি।
বাবার অপমান সহ্য করতে না পেরে গত ৩ ডিসেম্বর দুপুরের দিকে রাজধানীর শান্তিনগরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে অরিত্রী অধিকারী (১৫) নামে ভিকারুননিসার স্কুলের নবম শ্রেনীর এক শিক্ষার্থী।
অরিত্রী অধিকারীর আত্মহত্যার ঘটনায় ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষসহ তিন শিক্ষককে বরখাস্ত করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেই সঙ্গে তাদের এমপিও বাতিলের নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
অভিযুক্ত তিন শিক্ষক হলেন-ভিকারুননিসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৗস, প্রভাতী শাখার প্রধান জিন্নাত আরা এবং শ্রেণি শিক্ষক হাসনা হেনা।
৫ ডিসেম্বর (বুধবার) শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।
এর আগে অরিত্রী অধিকারীর মৃত্যুর ঘটনায় ৩০৫ ধারার আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেন অরিত্রীর বাবা দিলীপ অধিকারী। গত ৪ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) রাত ৮ টার দিকে রাজধানীর পল্টন থানায় এই মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস, প্রভাতি শাখার প্রধান জিন্নাত আরা এবং অরিত্রির শ্রেণিশিক্ষক হাসনা হেনাকে আসামি করা হয়েছে।
অরিত্রীর বাবা দিলীপ অধিকারী জানান, স্কুলে বার্ষিক পরীক্ষা চলছিল অরিত্রীর। গত ২ ডিসেম্বর পরীক্ষার হলে মোবাইল নিয়ে প্রবেশ করায় নকলের অভিযোগ উঠে অরিত্রীর বিরুদ্ধে। এরপরই স্কুল কর্তৃপক্ষ দেখা করতে বলে অভিভাবককে। ৩ নভেম্বর (সোমবার) অরিত্রীর মা ও ছোট বোনসহ স্কুলে গেলে প্রথমে প্রথমে ভাইস প্রিন্সিপালের সাথে দেখা করি। তিনি সেসময় অকথ্য ভাষায় অপমান করেন এবং রুম থেকে বের করে দেন। সেই সাথে অরিত্রীর টিসি নিয়ে যেতে বলেন। এসময় অরিত্রী ভাইস প্রিন্সিপালের কাছে ক্ষমা চায় কিন্তু তিনি কোন কথা-ই শোনেননি।
এরপর প্রিন্সিপাল নাজনীন ফেরদৌসের সাথে দেখা করলে তিনি একইভাবে অপমান করেন এবং রুম থেকে বের করে দেন। সেই সাথে স্কুল থেকে টিসি নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়। যুগপৎ অপমানে কেঁদে ফেলি আমি। বাবার অপমান সইতে না পেয়ে অরিত্রী দ্রুত প্রিন্সিপালের রুম ত্যাগ করে। বাসায় এসে দেখি গলায় ওড়না পেঁচিয়ে সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলছে সে।
মুমূর্ষু অবস্থায় অরিত্রীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে বিকেল সাড়ে ৪ টার দিকে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসকগণ তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।