‘শাসন করুন অপমান নয়’
প্রকাশ | ০৫ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৩:০৩
‘শাসন করুন অপমান নয়’ ‘কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে আর কত শিক্ষার্থী প্রাণ দেবে’ ‘ শিক্ষার্থীদের অপরাধের শাস্তি যদি টিসি হয়, তবে শিক্ষকদের অপরাধের শাস্তি কি হবে?’ ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ এমনই অসংখ্য প্ল্যাকার্ড হাতে বিভিন্ন বয়সের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করছে স্কুলের মূল ফটকে।
নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী অরিত্রী অধিকারীর আত্মহত্যার ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবীতে দ্বিতীয় দিনও বিক্ষোভে উত্তাল ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ। ৫ ডিসেম্বর (বুধবার) সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা স্কুলের মূল ফটকে অবস্থান নিয়ে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে।
অভিভাবকদের অভিযোগ, শিশুদের সমস্যা নিয়ে শিক্ষকরা কখনো অভিভাবকদের সাথে কথা বলেন না। এমনকি শিক্ষার্থির কোন সমস্যা নিয়ে গেলেও তারা তা আমলে নেন না, সমাধান করার চেষ্টা করেন না।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাস অনুযায়ী তিন দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দিয়ে দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। এটি আত্মহত্যা নয়, হত্যাকান্ড উল্লেখ করে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তারা। এ সময় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা অধ্যক্ষ ও গভর্নিংবডির পদত্যাগের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন।
এদিকে, স্কুলটির প্রভাতী শাখার নবম শ্রেনীর শিক্ষার্থী অরিত্রী অধিকারীর মৃত্যুর ঘটনায় ৩০৫ ধারার আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেছেন অরিত্রীর বাবা দিলীপ অধিকারী। গত ৪ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) রাত ৮ টার দিকে রাজধানীর পল্টন থানায় এই মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস, প্রভাতি শাখার প্রধান জিন্নাত আরা এবং অরিত্রির শ্রেণিশিক্ষক হাসনা হেনাকে আসামি করা হয়েছে।
অরিত্রীর বাবা দিলীপ অধিকারী জানান, স্কুলে বার্ষিক পরীক্ষা চলছিল অরিত্রীর। গত ২ ডিসেম্বর পরীক্ষার হলে মোবাইল নিয়ে প্রবেশ করায় নকলের অভিযোগ উঠে অরিত্রীর বিরুদ্ধে। এরপরই স্কুল কর্তৃপক্ষ দেখা করতে বলে অভিভাবককে। ৩ নভেম্বর (সোমবার) অরিত্রীর মা ও ছোট বোনসহ স্কুলে গেলে প্রথমে প্রথমে ভাইস প্রিন্সিপালের সাথে দেখা করি। তিনি সেসময় অকথ্য ভাষায় অপমান করেন এবং রুম থেকে বের করে দেন। সেই সাথে অরিত্রীর টিসি নিয়ে যেতে বলেন। এসময় অরিত্রী ভাইস প্রিন্সিপালের কাছে ক্ষমা চায় কিন্তু তিনি কোন কথা-ই শোনেননি।
এরপর প্রিন্সিপাল নাজনীন ফেরদৌসের সাথে দেখা করলে তিনি একইভাবে অপমান করেন এবং রুম থেকে বের করে দেন। সেই সাথে স্কুল থেকে টিসি নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়। যুগপৎ অপমানে কেঁদে ফেলি আমি। বাবার অপমান সইতে না পেয়ে অরিত্রী দ্রুত প্রিন্সিপালের রুম ত্যাগ করে। বাসায় এসে দেখি গলায় ওড়না পেঁচিয়ে সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলছে সে।
অরিত্রীকে সেসময় সাথে সাথে ঢাকা মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। বিকেল সাড়ে ৪ টার দিকে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসকগণ তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।