পরীক্ষার ‘নীতিমালা’ জানেন না ভিকারুননিসার অধ্যক্ষ-চেয়ারম্যান

প্রকাশ : ০৪ ডিসেম্বর ২০১৮, ২২:৫৩

জাগরণীয়া ডেস্ক

পরীক্ষায় নকল করে ধরা পড়লে অন্য শিক্ষার্থীদের উপর যে ‘নিয়ম’ প্রযোজ্য হয়, সেই একই ‘নীতিমালা’ অরিত্রীর ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়েছে বলে জানালেও প্রকৃতপক্ষে ‘নিয়ম’টি কী- জানেন না ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস ও গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান গোলাম আশরাফ তালুকদার।

৪ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস ও গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান গোলাম আশরাফ তালুকদার। 

এসময় অধ্যক্ষ বলেন, ‘পরীক্ষার হলে ওই ছাত্রীর সঙ্গে আত্মহত্যা করার মতো কোনো ব্যবহার করা হয়নি। প্রভাতী শাখার প্রধান জিন্নাত আরা এ বিষয়ে আমাকে অবগত করেছেন। অন্য শিক্ষার্থীর বেলায় যে নিয়ম তার বেলায়ও একই নিয়ম প্রয়োগ করা হয়েছে।’

‘নিয়ম’টি  ঠিক কী-এই প্রশ্ন করা হলে অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস জানান, নিয়মটি আমাদের জানা নেই। তবে অভিভাবককে ডেকে তার সামনে এ বিষয়ে কথা বলি। ওই দিনের পরীক্ষা দিতে দেয়া হয় না।’

তাহলে পরের দিন ৩ ডিসেম্বর অরিত্রীকে কেন পরীক্ষা দিতে দেয়া হলো না-এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের জানা নেই। শাখা প্রধান আমাকে বলেছেন, নকল পাওয়া গেলে কোনো পরীক্ষা নেয়া হয় না।’

একই প্রশ্নে গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান গোলাম আশরাফ তালুকদারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি জানান, পরীক্ষায় নকল করলে স্কুলের নীতিমালায় কী আছে, সেটি তার জানা নেই। তবে তিনি জানান, পাবলিক পরীক্ষার নীতিমালা অনুযায়ি, ঐদিনের পরীক্ষা দিতে দেয়া হয় না, কিন্তু পরের দিনের পরীক্ষায় শিক্ষার্থীকে বসতে দেয়া হয়।

তাহলে অরিত্রীকে কেনো পরের দিন পরীক্ষা দেয়া হলো না-এমন প্রশ্ন তিনি এড়িয়ে যান। বলেন, ‘শিক্ষকরা ভালো বলতে পারবেন।’

গত ৩ ডিসেম্বর গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রভাতী শাখার শিক্ষার্থী অরিত্রী অধিকারী (১৫)। 

গত ২ ডিসেম্বর পরীক্ষার হলে অরিত্রীর কাছে মোবাইল পাওয়া যাওয়ায় তার বিরুদ্ধে নকল করার অভিযোগ উঠে। নকলের অভিযোগে তাকে পরীক্ষা দিতে দেয়া হয়নি। পরদিন ৩ ডিসেম্বর তাকে পরীক্ষায় বসার অনুমতি না দিয়ে অভিভাবকদের দেখা করতে বলে স্কুল কর্তৃপক্ষ। স্কুলে যাওয়ার পর অরিত্রীর বাবাকে প্রিন্সিপাল ও ভাইস প্রিন্সিপাল অপমান করেন এবং রুম থেকে বের করে দেন। পায়ে ধরে মাফ চাইলেও, ক্ষমা করা হয়নি অরিত্রীকে। অরিত্রীর বাবাও মেয়ের অপরাধে ক্ষমা চান কিন্তু মন গলেনি কারোরই। উল্টো টিসি দিয়ে স্কুল থেকে বের করে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়। অপমানে অশ্রুসিক্ত হন অরিত্রীর বাবা দিলীপ অধিকারী। বাবার অপমানে মানসিক আঘাত সহ্য করতে না পেরে সেদিনই শান্তিনগরের বাসায় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহননের পথ বেছে নেয় অরিত্রী। মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে দ্রুত উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত