ঢাবিতে ভর্তির সুযোগ পাচ্ছেন মায়ের কোলে চড়ে আসা সেই হৃদয়
প্রকাশ | ০৮ নভেম্বর ২০১৮, ২০:৪৭
মায়ের কোলে চড়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে আসা হৃদয় সরকার অবশেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ভর্তির সুযোগ পাচ্ছেন।
৮ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) দুপুরে প্রশাসনিক ভবনে অনুষ্ঠিত ডিন’স কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ডিনস কমিটির বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সদস্য বলেন, বৈঠকে ঢাবি ভর্তিতে বাক, শ্রবণ ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীর বাইরেও শারীরিক প্রতিবন্ধী ভর্তিচ্ছুদের প্রতিবন্ধী কোটা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
মায়ের কোলে চড়ে গত ২১ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ‘খ’ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা দিতে এসেছিলেন নেত্রকোনার হৃদয় সরকার। মায়ের কোলে চড়ে পরীক্ষা দিতে আসার সেই ছবি তখন সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়।।ছবিটি অনেকেই শেয়ার করে প্রশংসা করেছেন অদম্য মা ও তার ছেলেকে। যদিও ঐ শিক্ষার্থীর পরিচয় তখন জানা যায়নি। পরে জানা গেছে, ‘সেরিব্রাল পালসি’তে আক্রান্ত হৃদয়কে নিয়ে এভাবেই যুদ্ধ করছেন নেত্রকোনার এক মা। ছোটবেলা থেকেই হৃদয় হাঁটতে পারেন না। এছাড়া তার হাতের সব আঙ্গুলও কাজ করে না।
ঐসময় হৃদয়ের পরিচিত ঢাবির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থী জানান, ছোট থেকেই হৃদয় তার মায়ের কোলে চড়ে স্কুল-কলেজে আসা যাওয়া করত। এখন পর্যন্ত তাকে যতবার দেখেছি তার মায়ের কোলেই দেখেছি। কলেজে থাকতে প্রতিদিন ওর মা ওকে ৪ তলাতে উঠাত আবার নিয়ে যেত।
তবে অদম্য সেই মাকে হতাশ করেননি হৃদয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে কলা অনুষদভুক্ত ‘খ’ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষায় পাসের হার যেখানে মাত্র ১৪ শতাংশ সেখানে হৃদয় মেধাক্রম পান ৩৭৪০।
কিন্তু ভর্তি হতে গিয়ে আবারও বাধার মুখোমুখি হন হৃদয় সরকার। গত ৫ নভেম্বর (সোমবার) দুপুর ২টায় কলা অনুষদে ‘খ’ ইউনিটে উত্তীর্ণ ওয়ার্ড, খেলোয়াড় ও প্রতিবন্ধী কোটাধারীদের মনোনয়ন সংগ্রহের জন্য ডাকা হয়। অনুষদের ওয়েবসাইটে দেখা যায়, ৯ জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধীকে ডাকা হয়েছে মনোনয়ন সংগ্রহের জন্য। এর মধ্যে ৪৫৮৪ মেধাক্রমেও রয়েছেন একজন। কিন্তু ৩৭৪০ মেধাক্রমে থেকেও হৃদয় সরকার মনোনয়ন সংগ্রহের জন্য ডাকা হয়নি।
ওই সময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানায়, নিয়ম অনুযায়ী দৃষ্টি, শ্রবণ ও বাকপ্রতিবন্ধীদের জন্যই কেবল প্রতিবন্ধী কোটা বরাদ্দ ঢাবিতে। এর বাইরে অন্য কোনো শারীরিক প্রতিবন্ধীর জন্য ঢাবিতে কোনো কোটা দেওয়া হতো না। ফলে শারিরীক প্রতিবন্ধী হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েও ঢাবির দরজা বন্ধ হয়ে যায় হৃদয় সরকারের জন্য।
হৃদয় সরকার সুযোগ পেয়েও ভর্তি হতে পারছেন না-সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন খবর প্রচার হলে অনেকেই বিষয়টির সমালোচনা করেন এবং মানবিক দৃষ্টিকোন থেকে হৃদয়ের ব্যাপারটি আরেকবার খতিয়ে দেখার জন্য অনুরোধ জানান। এরই প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার বৈঠকে বসে ঢাবি প্রশাসন। প্রতিবন্ধী কোটায় ভর্তির সুযোগ হয় হৃদয় সরকারের।