ঢাবিতে 'নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দের' উপর ছাত্রলীগের হামলা (ভিডিও)
প্রকাশ | ২৩ জানুয়ারি ২০১৮, ২৩:৫০
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী নিপীড়নে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতাদের বহিষ্কারের দাবিসহ চার দফা দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপড় চড়াও হয়ে তাদের পিটিয়ে আহত করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা। আজ ২৩ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) বিকেলে এ ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ৪০ জন আহত হন।
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিভিন্ন বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের নেতা কর্মী, ডাকসুর নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও ৭ সরকারি কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত ‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ছাত্রী নিপীড়নের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়ে অপরাজেয় বাংলার সামনে জড়ো হয়ে মিছিল শুরু করেন। মিছিলটি টিএসসি, কলাভবন, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ ঘুরে উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান এর কার্যালয়ের সামনে আসে। এদিকে শিক্ষার্থীদের আসার খবর পেয়ে আগে থেকেই উপাচার্যের কার্যালয়ের প্রবেশপথগুলোতে তালা দিয়ে দেওয়া হয়।
শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক কার্যালয়ের একাধিক ফটক ভেঙে বেলা দেড়টা থেকে উপাচার্যের কার্যালয়ের দরজার সামনের করিডরে অবস্থান নেন। তিন ঘণ্টার বেশি অবরুদ্ধে থাকার পর বিকাল সোয়া ৩টার দিকে বোর্ড অব এডভান্সড স্টাডিজের একটি সভায় অংশ নিতে সিনেট ভবনে যেতে নিজের কার্যালয়ের পেছনের ফটক দিয়ে বের হয়ে যান উপাচার্য। কিন্তু পথে উপাচার্যের চারপাশ ঘিরে অবরোধ করেন আন্দোলনকারীরা।
এ সময় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইনের নেতৃত্বে সংগঠনের ২০-২৫ জনের একটি দল উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে যান। তারা উপাচার্যকে কক্ষে পাঠিয়ে আন্দোলনকারীদের করিডর থেকে সরিয়ে দেন। এরই মধ্যে ছাত্রলীগের কয়েক শ' কর্মী জড়ো হয়ে দফায় দফায় রড, লাঠি, ইটপাটকেল দিয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালান। শিক্ষার্থীরা বের হওয়ার সময় বিভিন্ন ফটকের সামনে থাকা ছাত্রলীগের কর্মীরা আন্দোলনকারীদের মেরে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেন।
ছাত্রলীগের এই হামলায় বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি উম্মে হাবিবা, ডাকসুর দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ক মাসুদ আল মাহদী, তুহিন, ইভা, তমা সহ অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে অন্তত ১৫ জন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
এই ঘটনায় একাধিক সাংবাদিকও আহত হয়েছেন। এসময় ইংরেজি দৈনিক ইন্ডিপেনডেন্টের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক মীর আরশাদুল হকের মাথা ফেটে যায়। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের আলোকচিত্র সাংবাদিকের ক্যামেরা কেড়ে নেওয়ারও চেষ্টা হয়।
হামলা শেষে মধুর ক্যান্টিনে ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ছাত্রলীগ উপাচার্যকে উদ্ধার করতে ও মীমাংসা করতে সেখানে গিয়েছিল। উপাচার্যের সম্মান রক্ষার্থে ছাত্রলীগ তাদের সরিয়ে দিয়েছে।’
ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসাইন বলেন, “বাইরে থেকে অছাত্র, সন্ত্রাসীদের নিয়ে এসে ক্যাম্পাসে শিক্ষার পরিবেশ অস্থিতিশীল করার জন্য উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করার খবর শুনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা উপাচার্যকে উদ্ধার করতে গিয়েছিল।”
সন্ধ্যায় হাসপাতালে ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি ও প্রগতিশীল ছাত্র জোটের সমন্বয়ক ইমরান হাবিব রুম্মন এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, “ছাত্রলীগ নির্মমভাবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালিয়েছে। এতে অর্ধশত জন আহত হয়েছে।”
ইমরান বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক হিসেবে উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম আমরা। তিনি কথা না শুনে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের দিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালিয়েছেন।”
সারাদেশে বুধবার বিক্ষোভে কর্মসূচি ঘোষণা করে তিনি বলেন, এরপর মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করে পরবর্তী কর্মসূচি দেওয়া হবে।
ভিডিও: বিডিনিউজ২৪ এর সৌজন্যে
এদিকে এই ঘটনার বর্ণনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কতিপয় সহিংস শিক্ষার্থী ও বহিরাগত যুবক রড, লোহার পাইপ, ইট, পাথর নিয়ে উপাচার্য ভবনের তিনটি ফটকের তালা ভেঙে উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে অশালীন বক্তব্য দিচ্ছিল। তাদের একটি প্রতিনিধি দলকে উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করতে বলা হলেও তারা শোনেনি।
উপাচার্য বোর্ড অব অ্যাডভান্সড স্টাডিজ সভায় যাওয়ার জন্য বের হলে ‘উদ্ধত, উত্তেজিত ও উচ্ছৃঙ্খল আন্দোলনকারীরা’ তার পথ রোধ করে বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।
এতে বলা হয়, উপাচার্য তদন্ত সাপেক্ষে নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলেও আন্দোলনকারীরা তা প্রত্যাখ্যান করে অশালীন বক্তব্য দিতে থাকে।
“এক পর্যায়ে উপাচার্যের প্রতি বলপ্রয়োগ ও আক্রমণ করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্য ও শিক্ষার্থীরা মানব বলয় তৈরি করে উপাচার্য মহোদয়কে তার কার্যালয়ে ফিরিয়ে আনে।”
তবে আন্দোলনকারীদের উপর হামলার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কিছু বলা হয়নি।
এদিকে ঢাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে সিপিবি, বাসদ ও গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা।
উল্লেখ্য, গত ১৫ জানুয়ারি রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন। সেখানে ছাত্রলীগ নেতারা ছাত্রদের হুমকি-ধমকি ও ছাত্রীদের ওপর নিপীড়ন করে আন্দোলন নস্যাৎ করে দেন। এর প্রতিবাদে গত ১৭ জানুয়ারি নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীরা প্রক্টর কার্যালয়ের ফটক ভেঙে প্রক্টরকে অবরুদ্ধ করেন। পরদিন অজ্ঞাতনামা ৫০-৬০ জনকে আসামি করে মামলা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এরপর থেকে টানা আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের অন্য দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে ছাত্র প্রতিনিধিসহ ছাত্রী নিপীড়নের ঘটনার তদন্ত করা, অভিযুক্ত ছাত্রলীগের নেতাদের বহিষ্কার করা ও প্রশাসনের করা মামলা তুলে নেওয়া।