ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে না যাওয়ায় হল ছাড়া!
প্রকাশ | ১০ জানুয়ারি ২০১৮, ০০:৫০
ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মিছিলে না যাওয়ায় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) আবাসিক হল থেকে এক ছাত্রীকে বের করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। হল থেকে বের করে দেয়া ঐ ছাত্রী পরে হলের গেটেই আমরণ অনশন এর জন্য অবস্থান নেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের প্রথম বর্ষ ও বেগম রোকেয়া হলের আবাসিক ওই শিক্ষার্থীর নাম আফসানা আহমেদ ইভা। গত ৮ জানুয়ারি (সোমবার) রাতে হল থেকে বের করে দেয়ার পর ৯ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত অনশন করেছেন তিনি।
ইভা অভিযোগ করেন, বেগম রোকেয়া হলের প্রথম বর্ষের ছাত্রীদের ছাত্রলীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে জোর করে নিয়ে যাওয়া হয়। গত ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রথম বর্ষের ছাত্রীদের যাওয়ার জন্য জোর করেন ছাত্রলীগের সহসভাপতি তানিয়া আফরিন সিনথি, ছাত্রলীগ কর্মী সাদিয়া আফরিন স্বর্ণা, ইলা, শিলা প্রমুখ। কিন্তু তিনি যেতে না চাইলে হলের ছাত্রলীগ নেত্রীরা তাকে হল থেকে বের করে দেওয়া ও জিনিসপত্র পুড়িয়ে ফেলারও হুমকি দেন। ইভা বিষয়টি হল প্রভোস্টকে জানালেও তিনি কোন পদক্ষেপ নেননি। পরে ছাত্রলীগ নেত্রীরা তাকে কক্ষ থেকে বের করে দেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রফ্রন্টের কর্মী ওই ছাত্রী বলেন, আমি ৫ জানুয়ারি হল প্রভোস্টকে বিষয়টি জানাই। তারপরও ছাত্রলীগ নেতারা ৬ জানুয়ারি রোকেয়া হল ছাত্রীদের সামনে ডেকে ৭ তারিখ বিকেল ৫ টার মধ্যে আমাকে হল থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দেয়। ৭ তারিখে এ বিষয়ে আমি হল প্রভোস্টকে একটি লিখিত অভিযোগ করি। তারপরও প্রভোস্ট কোন ব্যবস্থা না নিলে রোকেয়া হলের শাপলা (বড় আপু) প্রভোস্ট ম্যামকে ফোন দিলে নিরাপত্তার জন্য আমাকে তার কাছে নিয়ে ৩০৯ নম্বর রুমে রাখতে বলেন। ৮ জানুয়ারি (সোমবার) রাতে আবার (সাড়ে ১১টার দিকে) ছাত্রলীগ কর্মীরা আমাকে ৩০৯ নম্বর রুম থেকে ডেকে এনে হলের আন্টিদের (হলের আয়া) দিয়ে আমার বেডিং পত্র হলের বাহিরে রেখে আসেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ৯ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) সকাল ৮টার দিকে হলের প্রধান ফটকে আমরণ অনশন শুরু করলে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আতিকুর রহমান খোকন ওই শিক্ষার্থীকে প্রক্টর কার্যালয়ে নিয়ে আসেন। দুপুর আড়াইটার দিকে ওই ছাত্রী হলে থাকার দাবিতে আবার হলের প্রধান ফটকে অবস্থান নিলে সাবেক প্রক্টর ও সহকারী প্রক্টর ওই ছাত্রীকে হলের ভিতরে নিয়ে যান।
এদিকে ঐ ছাত্রীর বিরুদ্ধে হল প্রভোস্ট ও সিনিয়র ছাত্রীদের সাথে বেয়াদবির অভিযোগ এনে মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে হল ছাত্রলীগের সহসভাপতি তানিয়া আফরিন সিন্থিয়ার নেতৃত্বে মানববন্ধন করেছেন হলের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। হলের প্রধান ফটকে প্রায় অর্ধশতাধিক ছাত্রী মানববন্ধন করেন। এই সময় তারা ইভাকে হল থেকে বের করে দেওয়ারও দাবি জানান।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট (বাসদ-খালেকুজ্জামান) সভাপতি সৌরভ দাস বলেন, ওই কর্মী তার কক্ষে ফিরে গেছে। আবার আমাদের কর্মীদের সাথে কিছু করা হলে আবার আন্দোলন করব।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে ছাত্রলীগ ও হল প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মিয়া মো. রুবেল বলেন, এই ঘটনার সাথে ছাত্রলীগের কোন সম্পৃক্ততা নেই।
এ বিষয়ে রোকেয়া হলে প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. ইসমত আরা বেগম বলেন, তদন্ত কমিটি গঠন করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।