স্কুল থেকে টিসি, স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যা
প্রকাশ | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৫:৪৩
পিরোজপুর সদর উপজেলায় স্কুল থেকে টিসি দেওয়ার একদিনের মাথায় এক ছাত্রীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ১৫ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) তেজদাসকাঠী গ্রামের বাড়ি থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়।
পিরোজপুর সদর থানার ওসি (তদন্ত) হাছাইন পারভেজ জানান, মৃত ময়ুরী খানম (১৩) তেজদাসকাঠী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী এবং সদর উপজেলার টোনা ইউনিয়নের তেজদাসকাঠী গ্রামের রফিকুল ইসলাম সেখের মেয়ে ছিল।
ময়ুরীর নানি নাসিমা বেগম বলেন, "কয়েক দিন ধরে টোনা ইউনিয়নের মূলগ্রাম এলাকার আরিফ খান ময়ূরীকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে উত্ত্যক্ত করে আসছিল। এ বিষয়ে কথা বলতে ১৪ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার) সকালে স্কুলের প্রধান শিক্ষক জয়নুল আবেদীন আমাদের ডেকে পাঠান। স্কুলে যাওয়ার পর প্রধান শিক্ষক আমাদের জানান যে স্কুলে যাতায়াতের পথে বিভিন্ন ছেলেদের সঙ্গে কথা বলার অভিযোগে ময়ুরীকে টিসি দেওয়া হয়েছে।”
নাসিমা বলেন, ঘরের কাজের দরকারে শুক্রবার সকালে তিনি পাশের বাড়িতে যান। সেখান থেকে ফিরে ঘরের মধ্যে গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় ময়ুরীর ঝুলন্ত লাশ দেখতে পান। পরে তার চিৎকারে বাড়ির সদস্যরা গিয়ে ময়ুরীর লাশ উদ্ধার করেন।
বিদ্যালয়ের আরেক ছাত্র তুহিন শরীফ বলেন, "বৃহস্পতিবার স্কুলের প্রধান শিক্ষক নোটিশ দিয়ে জানিয়ে দেন যে ছাত্রী ময়ুরী ও অন্য আরেক শিক্ষার্থীকে টিসি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আরও দুই শিক্ষার্থীকে এক মাসের জন্য বিদ্যালয়ে না আসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে"।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক জয়নুল আবেদীন বলেন, "ময়ুরী ও অপর আরেক ছাত্রীর সঙ্গে আদুরী ইউনিয়নের আরিফ খান নামের এক বিবাহিত ছেলের প্রেম সম্পকের্র জেরে বিরোধ চলছিল। বিষয়টি স্থানীয়রা স্কুলে এসে তাকে জানালে বিদ্যালয়ের শৃঙ্খলার কথা চিন্তা করে ময়ুরীসহ এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত চার ছাত্রীর অভিভাবকদের ডেকে পাঠানো হয়। প্রাথমিকভাবে তাদের ভয় দেখানোর জন্য দুই জনকে টিসি ও দুইজনকে এক মাসের জন্য বিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে জানানো হয়"।
টোনা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আব্দুর রাজ্জাক নান্টু বলেন, "তেজদাসকাঠী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কয়েকজন ছাত্রীকে টিসি দেওয়ার খবরে বৃহস্পতিবার বিকালে সেখানে যাই। এ সময় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জয়নুল আবেদীনের কক্ষে গিয়ে তাকে ময়ুরীর নানীর সঙ্গে কথা বলতে দেখি। এ সময় ছাত্রীদের টিসি না দিয়ে তাদের অভিভাকদের বিষয়টি অবহিত করে তাদের সাবধান করতে প্রধান শিক্ষককে অনুরোধ করি। কিন্তু তিনি জানান যে প্রতিটি শ্রেণি কক্ষে টিসির নোটিশ দেওয়া হয়েছে তাই এখন তার কিছুই করা সম্ভব নয়"।
ওসি হাছাইন বলেন, লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে পুলিশ বাদী হয়ে একটি অপমৃত্যুর মামলা করেছে। তবে মেয়েটির বাড়ির কেউ থানায় অভিযোগ করেনি বলে তিনি জানান। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।