আবহাওয়া সতর্কবার্তা উন্নয়নে বিশ্বব্যাংকের ১১৩ মিলিয়ন ডলার
প্রকাশ | ০৫ এপ্রিল ২০১৭, ১৭:৫৯ | আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০১৭, ১৮:৫৫
আবহাওয়ার পূর্বাভাস, আগাম সতর্কবার্তা এবং আবহাওয়া ও জলবায়ু তথ্য সেবা প্রদানসহ মেট্রোলজিক্যাল এবং পানি তথ্য সেবা পদ্ধতি আধুনিকীকরণে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে ১১৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঋণ সহায়তা করবে।
এলক্ষ্যে বুধবার ঢাকায় শেরেবাংলানগর এনইসি সম্মেলনকক্ষে বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যাংকের মধ্যে একটি ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
ঋণচুক্তি পত্রে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) ভারপ্রাপ্ত সচিব শফিকুল আযম ও বিশ্বব্যাংকের পক্ষে সংস্থার কান্ট্রি ডিরেক্টর চিমিয়াও ফান স্বাক্ষর করেন।
চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকার এই ঋণের অর্থ ‘বাংলাদেশ আঞ্চলিক আবহাওয়া ও জলবায়ু সেবা’ (বিউব্লিউসিএসআরপি) প্রকল্পে বাস্তবায়ন করবে। এর আওতায় বাংলাদেশে আবহাওয়া,পানি, দুর্যোগ ঝুঁকি এবং জলবায়ু সম্পর্কিত তথ্য সেবা পদ্ধতি শক্তিশালী হবে।একইসাথে নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, রাজশাহী এবং নওগাঁ এই ৪ জেলায় আকস্মিক বন্যা, ঘূর্ণিঝড় এবং অনাবৃষ্টির বিষয়ে কমিউনিটি পর্যায়ে আগাম সতর্ক বার্তা প্রদান ব্যবস্থা চালু করা হবে।এতে ১ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ উপকৃত হবে।
প্রকল্পের আওতায় দেশব্যাপী এগ্রো-মেট্রোলজিক্যাল ইনফরমেশন সিস্টেম পোর্টাল স্থাপনের পাশাপাশি ৪৮৭টি উপজেলায় এগ্রো-মেট ইনফরমেশন কিওস্কস এবং ৪ হাজার ৫১টি ইউনিয়নে এগ্রো-মেট ডিসপ্লে বোর্ড স্থাপন করা হবে। এতে ৩০ হাজারেরও বেশি কৃষক পরিবার আবহাওয়া এবং পানি সম্পর্কিত তথ্য প্রাপ্তির প্রবেশাধিকার লাভ করবে এবং এতে তারা আবহাওয়া অবস্থা হিসাবে রেখে সময়োপযোগি পরিকল্পনা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষম হবে।
ইআরডির ভারপ্রাপ্ত সচিব শফিকুল আযম বলেন, ‘দুর্যোগ ঝুঁকি মোকাবেলা বা দুর্যোগ প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত।’
তিনি বলেন, ‘আবহাওয়ার ধরন একটি (সিঙ্গল) দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এ বিষয়টি অনুধাবন করে আমরা এই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রতিবেশি দেশগুলোর সঙ্গে বৃহত্তর সহযোগিতার ক্ষেত্র তৈরি করছি। একইসাথে আবহাওয়া ও জলবায়ু মনিটারিং ফ্রেমওয়ার্ক আধুনিকায়নের সাথে সাথে কমিউনিটি পর্যায়ে আগাম সতর্কবার্তা প্রদান ব্যবস্থার উন্নয়ন হবে।’
বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর চিমিয়াও ফান বলেন,‘বাংলাদেশ প্রায়শ ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হয়। আবহাওয়ার নির্ভুল পূর্বাভাস এবং তথ্যাদির অভাবে অর্থনীতির প্রধান খাতগুলোর উৎপাদনশীলতা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যেমন-কৃষি। বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রায় ১৬ শতাংশ কৃষি থেকে আসে এবং মোট জনগোষ্ঠীর ৪৫ শতাংশ এই খাতে নিয়োজিত।’
তিনি আরো বলেন, আবহাওয়া ও জলবায়ু সম্পর্কিত নির্ভুল এবং বৈজ্ঞানিক তথ্য নিশ্চিত করার মাধ্যমে বিউব্লিউসিএসআরপি প্রকল্প দুর্যোগ প্রস্তুতি শক্তিশালীকরণে সহায়তা করবে।একইসাথে ফার্ম পর্যায়ে কৃষকদের জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতে পারবে, ফলে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পাবে।
বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে অতি দুর্যোগপ্রবণ এবং জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর একটি। বাংলাদেশকে প্রায়শই বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন-বন্যা, ঘূর্ণিঝড় এবং জলোচ্ছ্বাসের শিকার হতে হয়, যা দেশটির জীবন-সম্পদের অনেক ক্ষতি করে। এই প্রকল্পটি আবহাওয়া সম্পর্কিত জ্ঞান আদান-প্রদানে আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়াতে সহায়তা করবে। এছাড়াও আবহাওয়া ও জলবায়ু সংক্রান্ত দুর্যোগসমূহের পূর্বাভাস প্রদান ও এ সংক্রান্ত সেবার গুণগত মান্নোয়নের পাশাপাশি দুর্যোগ ঝুঁকির প্রস্তুতি এবং অভিযোজন দক্ষতা বৃদ্ধিতেও সহায়তা করবে।
বিশ্বব্যাংকের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (আইডিএ) বিনা সুদে এই ঋণ প্রদান করছে। তবে বিশ্বব্যাংকের বিতরণকৃত এই ঋণের ওপর ০.৭৫% হারে সার্ভিজ চার্জ দিতে হবে। ৬ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ৩৮ বছরে ঋণের অর্থ পরিশোধ করতে হবে।