গাড়ির লোনের খোঁজ খবর
প্রকাশ | ০৪ জানুয়ারি ২০১৭, ২৩:৫২
আমাদের দেশে ব্যাক্তিগত গাড়ির বেশিরভাগই ব্যাংক লোনে কেনা হয়ে থাকে। শিডিউলড ব্যাংক এবং ননব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রেতাদেরকে এই লোন দিয়ে থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংক-এর এসংক্রান্ত সর্বশেষ গেজেট অনুযায়ী শিডিউলড ব্যাংকগুলো এখন সর্বোচ্চ ৪০ লাখ টাকা ঋণ দিয়ে থাকে। এতদিন এ সীমা ছিল ২০ লাখ। সীমা বাড়ানোর পাশাপাশি গাড়ি কেনায় ঋণ ও নিজস্ব অর্থের অনুপাতেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। এ অনুপাত নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ঃ৫০। অর্থাৎ গাড়ির মোট দামের অর্থের ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া যাবে। এতদিন গাড়ির মোট দামের ৩০ শতাংশ ঋণ নেয়া যেত। তবে ননব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান যেমন IDLC, IPDC, Lanka-Bangla Finance ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান ৭০-৮০% পর্যন্ত ঋণ দিয়ে থাকে। মনে রাখবেন, ব্যাংক লোন নেয়ার ক্ষেত্রে বিশেষত ঋণের পরিমাণ, সুদের হার ইত্যাদি বিষিয়ে ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্ক গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
তফসিলভূক্ত ব্যাংকই হোক আর নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানই হোক যেখান থেকেই লোন নিন না কেন, আবেদনের নিয়ম এবং ঋণ-গ্রাহক যোগ্যতার প্যারামিটার মোটামুটি একই রকম। নীচে দেখে নিন,
ঋণ গ্রহীতা হিসেবে আপনার কী কী যোগ্যতা লাগবে
১. আপনি চাকুরিজীবি হলে আপনার চাকুরি অবশ্যই স্থায়ী হতে হবে এবং আপনার মাসিক বেতন হতে হবে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নির্ধারিত নূন্যতম অংকের চেয়ে বেশি।সাধারণত মাসিক আয় ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকার বেশি হতে হয়, এছাড়া চাকুরির বয়স দুই বছরের চেয়ে বেশি হওয়া বাঞ্চনীয়।
২. আপনি স্বনিয়োজিত পেশাজীবি যেমন ডাক্তার, আইনজীবি প্রমুখ হলে, আপনার প্র্যাকটিসের বয়স, মাসিক আয়, ব্যাংক স্টেটমেন্ট ইত্যাদি মিলিয়ে ব্যাংক আপনার বিষয়ে সিদ্বান্ত নিবে। এক্ষেত্রেও প্র্যাকটিসের বয়স দুই বছরের চেয়ে বেশি হওয়া বাঞ্চনীয়।
৩. আপনি ব্যবসায়ী হলে আপনার ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানের বয়স, আপনার ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতা, মাসিক/বার্ষিক টার্ণ-ওভার, ব্যাংক স্টেটমেন্ট ইত্যাদি মিলিয়ে ব্যাংক আপনার বিষয়ে সিদ্বান্ত নিবে। সাধারণত ছোট/মাঝারি ব্যবসার ক্ষেত্রে ৫ বছর ও কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ৩ বছরের অভিজ্ঞতার দরকার হয়, আর আয় হতে হবে ৫০-৭৫০০০ টাকার বেশি।
৪. আপনি যদি আপনার বাড়ি/ফ্ল্যাট/জমি ইত্যাদি বন্ধক রেখে গাড়ি কেনার লোন নিতে চান, তাহলে আপনার মাসিক আয় হতে হবে ৫০০০০ টাকার বেশি।
গাড়ি কেনার লোন পেতে হলে আপনাকে আপনার পছন্দের যেকোন প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব আবেদনপত্রে আপনার যোগ্যতা প্রমাণের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আবেদন করতে হবে। এই কাগজগুলো হতে পারে-
১। জাতীয় পরিচয়পত্র
২। ব্যাংক স্টেটমেন্ট
৩। সেলারি স্টেটমেন্ট (চাকুরীজীবি হলে)
৪। আইডি কার্ড অথবা ভিজিটিং কার্ড (চাকুরীজীবি হলে)
৫। মেমোরেন্ডাম, ট্রেড লাইসেন্স (ব্যবসায়ি হলে )
৬। বসবাসের ঠিকানার সর্বশেষ ইউটিলিটি বিলের কপি
৭। বাড়ি/জমি/ফ্ল্যাটের মালিকানা দলিল, ইত্যাদি।
এই আবেদন প্রাপ্তির পর ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংক হতে আপনার CIB রিপোর্ট সংগ্রহ করবে, এতে সময় লাগবে ৩-৫ দিন। আপনার পূর্বতন কোন অপরিশোধিত ঋণ বা অন্য কোন সমস্যা না থাকলে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তারা আপনার ক্লীন রিপোর্ট পাবে। এই পর্যায়ে প্রতিষ্ঠান আপনাকে জানাবে , আপনি ঋণ প্রাপ্তির জন্য উপযুক্ত বিবেচিত হয়েছেন কিনা। উপযুক্ত বিবেচিত হলে আপনার পছন্দের গাড়ির দামের একটা কোটেশন, যা আপনার গাড়ির বিক্রেতা আপনাকে দিবে, তা আপনাকে ঋণদানকা্রী প্রতিষ্ঠানে দিতে হবে।
ঋণ চূড়ান্ত হলে আপনাকে প্রসেসিং ফি, সার্ভিস চার্জ ও ভ্যাট জমা দিতে হবে। তখন আপনাকে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান গাড়ি বিক্রেতার অনুকুলে একটা পে-অর্ডার দিবে, যেটা আপনি আপনার গাড়ি্র বিক্রেতাকে দিবেন। গাড়ি রেজিস্ট্রেশনের পর বিক্রেতা পে-অর্ডারটি ভাঙ্গাতে পারবে, তার আগে নয়।
আরেকটি বিষয় লক্ষণীয়-
* ব্র্যান্ডনিউ গাড়ির ক্ষেত্রে ৬ বছর পর্যন্ত লোন পাওয়া যায়। কিন্তু জাপানি রিকন্ডিশন্ড গাড়ির ক্ষেত্রে এর মেয়াদ ৫ বছর এবং গাড়িটি সর্বোচ্চ ৫ বছরের পুরাতন হতে হবে।আবার ৫ বছরের পুরাতন হলে ৪ বছর পর্যন্ত লোন পাওয়া যায়।ভারতীয় গাড়ির ক্ষেত্রে অবশ্য ঋণ প্রদানে কোন প্রতিষ্ঠান- ই তেমন আগ্রহী নয়।
* গাড়ির লোনের ক্ষেত্রে ব্যাংক ১৫% এবং ননব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ১১.৫-১৩% পর্যন্ত সুদে ঋণ প্রদান করে থাকে।
মনে রাখবেন, ব্যাংক লোন নিয়ে কেনা গাড়ি রেজিস্ট্রেশন হবে আপনার ও ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের যৌথ নামে। ঋণ পরিশোধের পর গাড়িটি আপনার নামে রেজিস্টার্ড হবে।