'নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ দিতে ব্যাংক কর্মকর্তাদের অনীহা রয়েছে'
প্রকাশ | ২৬ নভেম্বর ২০১৬, ১০:৫৫ | আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৬, ২১:৪৪
ক্ষুদ্র ও মাঝারি নারী শিল্পোদ্যোক্তারা চাহিদার যৎসামান্য ঋণ পাওয়ার তথ্য এক সমীক্ষায় উঠে আসার কথা জানিয়ে বিশ্ব ব্যাংকের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেছেন, নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ দিতে আগ্রহ দেখান না বাংলাদেশের ব্যাংক কর্মকর্তারা।
এর কারণ হিসেবে নারীদের ঋণ সংক্রান্ত বিষয় বোঝাতে ‘অনেক কষ্ট’ হওয়ার কথা বলেছেন তারা।
নারী উদ্যোক্তাদের ওপর চালানো এক সমীক্ষার ভিত্তিতে বিশ্ব ব্যাংক গ্রুপের ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি) বলেছে, বাংলাদেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি নারী শিল্পোদ্যোক্তাদের বছরে যে ঋণের চাহিদা রয়েছে তার ৬০ শতাংশই পূরণ করতে পারছে না ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো।
যে ৪০ শতাংশ ঋণ মিলছে তার ৮৩ শতাংশই আবার দিচ্ছে বেসরকারি ব্যাংকগুলো। রাষ্ট্রায়ত্ত চার বাণিজ্যিক ব্যাংক- সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক দিচ্ছে মাত্র ৫ শতাংশ।
সরকারের বিশেষায়িত কয়েকটি ব্যাংক দিচ্ছে ২ শতাংশ। ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো দিচ্ছে ৯ শতাংশ। আর বিদেশি ব্যাংকগুলো দিচ্ছে মাত্র ১ শতাংশ।
‘বাংলাদেশে নারী এসএমই উদ্যোক্তাদের বাজার সম্ভাবনা ও অর্থায়ন বৃদ্ধি’ শীর্ষক সমীক্ষা প্রতিবেদনটি বৃহস্পতিবার ঢাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হবে। লো মেরিডিয়ান হোটেলে ওই প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী।
বুধবার সোনারগাঁও হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন বিশ্ব ব্যাংক গ্রুপের সিনিয়র ফাইন্যান্সিয়াল সেকটর স্পেশালিস্ট অনন্যা ওয়াহিদ কাদের।
তিনি বলেন, ঢাকাসহ আটটি বিভাগীয় শহরের ১২টি জেলায় ৫০০ জন নারী উদ্যোক্তার সঙ্গে সরাসরি আলাপ করে তাদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
ওয়াহিদ কাদের ওয়াহিদ কাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে বর্তমানে ২৩ লাখ নারী এসএমই উদ্যোক্তা আছেন। এদের প্রতিজনের বছরে গড়ে টার্নওভার (মোট বিক্রি) ১৬ লাখ টাকা।
“এই বিক্রি থেকে একজন গড়ে ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা মুনাফা করে থাকেন।”
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে বর্তমানে এসএমই নারী উদ্যোক্তাদের বছরে ৯ হাজার ৯৭৫ কোটি টাকা ঋণের চাহিদা রয়েছে। এরমধ্যে বিভন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সবাই মিলে ৩ হাজার ৯৬৮ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করে থাকে।
এ হিসাবে চাহিদার বিপরীতে ঋণের ঘাটতির পরিমাণ হচ্ছে ৬ হাজার ৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ চাহিদার ৬০ শতাংশ ঋণই পাচ্ছেন না এসএমই নারী উদ্যোক্তারা।
ব্যাংকগুলো যাতে এই ঋণের পরিমাণ বাড়ায় সেটাই সমীক্ষার প্রধান উদ্দেশ্য বলে জানান অনন্যা কাদের।
তিনি বলেন, “সমীক্ষা পরিচালনার পর ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমরা আলাপ করে দেখেছি, এসএমই নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ দিতে কর্মকর্তারা আগ্রহ দেখান না।
“বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রত্যেক শাখায় নারী এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য আলাদা ডেস্ক থাকার কথা থাকলেও বেশিরভাগ ব্যাংকেই নেই।”
অনন্যা কাদের বলেন, কুটির শিল্প ও এসএমই খাতে নতুন উদ্যোক্তা তৈরির জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ১০০ কোটি টাকার একটি পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করেছে। ২০১৪ সালের জুন মাসে এই তহবিল গঠন করা হয়। কিন্তু তহবিলের অর্ধেক অর্থও বিতরণ হয়নি।
এই তহবিলের ১৫ শতাংশ অর্থ নারী এসএমই উদ্যোক্তাদের মধ্যে বিতরণের নির্দেশনা থাকলেও ব্যাংকগুলো সে নির্দেশ মানছে না বলে জানান তিনি।
“ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ দেওয়া ঝামেলা মনে করেন ব্যাংকাররা। তারা বলেন, মহিলা উদ্যোক্তাদের ঋণ সংক্রান্ত বিষয় বোঝাতে অনেক কষ্ট হয়। সেখানে পুরুষ উদ্যোক্তাদের বোঝানো সহজ হয়।”
এ সব জটিলতা দূর করতে আইএফসির উদ্যোগে নারী উদ্যোক্তা এবং ব্যাংকারদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা জানান তিনি।