খাজনা দিচ্ছেন তো নিয়মিত?

প্রকাশ : ২১ অক্টোবর ২০১৬, ০২:৩২

তানজিম আল ইসলাম

নিজের নামে বা মালিকানায় জমিজমা থাকলে এ জমির ওপর নিয়মিত কর দিতে হবে। এ করকেই ভূমি কর বা খাজনা বলা হয়। প্রাচীন আমল থেকে খাজনা প্রদানের রীতি বা রেওয়াজ চালু হয়। ভূমি কর বা খাজনা ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ নেই। এতে মামলা-মোকদ্দমাও হতে পারে। বাংলাদেশ কৃষি, শিল্প-বাণিজ্য ও আবাসিক এ তিন শ্রেণিতে ভূমি উন্নয়ন কর বা খাজনা পৃথক হারে নির্ধারণ করা হয়।

কীভাবে আদায় করা হয়
ইউনিয়ন পর্যায়ে অবস্থিত ভূমি সহকারী কর্মকর্তার কার্যালয় বা তহশিল অফিস ভূমি উন্নয়ন কর বা খাজনা আদায়ের দায়িত্বে থাকে। সাধারণত ভূমি সহকারী কর্মকর্তারা প্রত্যেক ভূমিমালিকের কাছে গিয়ে কর আদায় করার বিধান থাকলেও মালিকদের অফিসে এসে কর দিতে হয়। ভূমি উন্নয়ন কর নির্ধারণে কিছু স্তর রয়েছে। এ স্তরগুলো পেরিয়ে খাজনা প্রদান সম্পন্ন হয়। ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা বা তহশিলদার ভূমি উন্নয়ন কর আদায় করতে গিয়ে কোনো বিরোধ হলে কিংবা কোনো ব্যাপারে সমস্যা সৃষ্টি হলে সহকারী কমিশনারের (ভূমি) বা এসি ল্যান্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। প্রথমে তহশিলদার রিটার্ন ৩ (জমির পরিমাণ, শ্রেণি, করের পরিমাণ, সুদ উল্লেখ থাকে) প্রস্তুত করে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মালিকদের কাছে পাঠাবেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর বিবরণী প্রকাশের ব্যবস্থা করবেন এবং আপত্তি দাখিলের জন্য ৩০ দিনের সময় বেঁধে দেবেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে শুনানি সম্পন্ন হবে এবং শুনানি শেষে চূড়ান্ত করা হয়। তাতে কেউ ক্ষুব্ধ হলে জেলা প্রশাসকের কাছে আপিল করতে পারেন। জেলা প্রশাসকের আদেশে কোনো ব্যক্তি সন্তুষ্ট না হলে সেই আদেশের বিরুদ্ধে ৪৫ দিনের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনারের কাছে আপিল করা যাবে। বিভাগীয় কমিশনারের আদেশে কোনো ব্যক্তি সন্তুষ্ট না হলে সেই আদেশের বিরুদ্ধেও ১৫ দিনের মধ্যে ভূমি আপিল বোর্ডের কাছে আপিল করা যাবে।

কর মওকুফ হয় যখন
সাধারণত কৃষিজমির ক্ষেত্রে ৮.২৫ একর বা ২৫ বিঘা পর্যন্ত কৃষিজমির মালিকদের ভূমি উন্নয়ন কর দিতে হয় না। মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা, ঈদগাহ, কবরস্থান, শ্মশানঘাট ইত্যাদির ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করে কর মওকুফ পাওয়ার সুযোগ আছে।

কর না দেওয়ার বিপদ
সাধারণত বাংলা সন অনুযায়ী ভূমি উন্নয়ন কর বা খাজনা আদায় করা হয়। কেউ যদি নির্ধারিত তারিখের মধ্যে কর প্রদান না করেন, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে সার্টিফিকেট মামলা হতে পারে। ভূমি উন্নয়ন কর এক বছরের বকেয়া হলে সংশ্লিষ্ট বাংলা সনের ৩০ চৈত্রের পরই ওই কর বকেয়া বলে গণ্য হবে এবং মূল পাওনাকৃত করের সঙ্গে ৬.২৫ শতাংশ হারে সুদ যোগ হবে। যত বছরের কর বাকি থাকবে তত গুণ সুদ বেশি হবে এবং মূল করের সঙ্গে যুক্ত হবে। সার্টিফিকেট কেস মামলা করা হলে করের টাকা জমা দিয়ে অব্যাহতি পাওয়া সম্ভব।

খাজনা প্রদানে সতর্ক থাকুন
খাজনা প্রদানে কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। খাজনা দেওয়ার পর ঠিকভাবে লেখা হলো কি না, তা খেয়াল রাখতে হবে। অনেক সময় কোন শ্রেণির জমি তা উল্লেখ করা হয় না। এটি রেজিস্টার ২-এ লিপিবদ্ধ থাকে। তাতে দেখতে হবে, জোত নম্বরের বিপরীতে করের পরিমাণ লেখা থাকে। করের কপি লাল কালিতে আর আদায়কৃত টাকার পরিমাণ কালো কালিতে লেখা হয়। এটি পূর্ণাঙ্গ ও সঠিকভাবে লেখা হলো কি না, সতর্ক থাকতে হবে। অনেক সময় এক জমির বিবরণ ভুল দেখিয়ে প্রতারণার আশ্রয় নেওয়া হয়। এটি অপরাধ এবং এতে ভবিষ্যতে বড় ধরনের ঝামেলা হতে পারে। বকেয়া কর পরিশোধে সুদের হার সঠিকভাবে জেনে নিতে হবে।

লেখক: আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
প্রথম প্রকাশ: প্রথম আলো

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত