৬টি বিদ্যুৎকেন্দ্র ও ৯টি গ্রিড উপকেন্দ্র উদ্বোধন প্রধানমন্ত্রীর

প্রকাশ : ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৬:২২

জাগরণীয়া ডেস্ক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৬টি বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং ৯টি গ্রিড উপকেন্দ্র উদ্বোধন করেছেন। এতে ১০৬২ মেগাওয়াটেরও বেশি বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। প্রধানমন্ত্রী ০৬ ফেব্রুয়ারি (বুধবার) সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও গ্রিড উপকেন্দ্র উদ্বোধন করেন।

এই অনুষ্ঠানে তিনি চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলায় দেশে এই প্রথম সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং ১২টি উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুৎ সংযোগের উদ্বোধন করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী সিরাজগঞ্জ, কক্সবাজার, ভোলা, রাঙ্গামাটি, রাজবাড়ি ও চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা, শিক্ষক, ধর্মীয় নেতা, শিক্ষার্থী ও সুবিধা বঞ্চিত লোকজনসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলেন। সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে সন্দ্বীপে বিদ্যুৎ সরবরাহ উপলক্ষে জনগণের সঙ্গে কথা বলার সময় প্রধানমন্ত্রী সন্দ্বীপ ও মিরসরাই উপজেলা সংযুক্ত করে একটি সেতু নির্মাণের দীর্ঘদিনের দাবির প্রতি ইতিবাচক সাড়া দেন।

তিনি বলেন, ‘প্রস্তাবিত সেতুটির জন্য উপযুক্ত স্থান কোনটি হবে, সেতু নির্মাণ সম্ভব হবে কি-না, মাটি স্থিতিশীল কি-না, তা পরখ করে দেখতে আমাদের একটি সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা চালাতে হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘এই বিষয়গুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে আমরা সেতু নির্মাণ করব। কোনো সমস্যা হবে না।’

কক্সবাজারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলার সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার জেলায় একটি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রস্থল সৃষ্টি করছে, যা কক্সবাজার জেলার সকল অঞ্চল ও উপজেলায় পৌঁছবে।
তিনি বলেন, ‘এই জেলা থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামেও বিদ্যুৎ নেয়া হবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, কক্সবাজার বিমান বন্দরকে আরো উন্নত ও আধুনিকায়নের মাধ্যমে একটি আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে পরিণত করা হবে। ‘কক্সবাজার একটি পর্যটন এলাকা। আমরা এটিকে আরো উন্নত করতে চাই।’

কক্সবাজারে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা জনস্রোত প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ এলাকার মানুষ এ সমস্যাটি সহ্য করছে। ‘আমি এ ইস্যুটি সয়ে নেয়ার জন্য এবং রোহিঙ্গাদের সহযোগিতা করার জন্য এ এলাকার মানুষকে ধন্যবাদ জানাই।’

শেখ হাসিনা বলেন, সরকার রোহিঙ্গারা যেসব এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে সেগুলোর উন্নয়নে এবং এসব এলাকার জনগণের জীবনমান উন্নয়নে অত্যন্ত আন্তরিক। রাঙ্গামাটির জনসাধারণের সঙ্গে আলাপকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার প্রত্যন্ত অঞ্চলের ছাত্রছাত্রীদের জন্য আবাসিক বিদ্যালয় নির্মাণ করবে।

তিনি বলেন, সরকার এরই মধ্যে সমতলের অধিবাসীদের মত পার্বত্য এলাকার বাসিন্দারাও যাতে ভূমি অধিগ্রহণের তিনগুণ ক্ষতিপূরণ পায় তার ব্যবস্থা করেছে।

সিরাগঞ্জের তাঁতীদের উন্নয়নের প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে তাঁর সরকার তাদের জন্য ক্ষুদ্রঋণ চালু করেছে। তিনি বলেন, এই সুবিধাটি এখনো অব্যাহত রয়েছে। আমি ভবিষ্যতে তাঁতীরা যাতে উন্নতমানের কাপড় প্রস্তুত করতে পারে সেই লক্ষ্যে এ ঋণের পরিমাণ আরো বাড়াতে চাই। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী তাঁতীদের নকশা, ফ্যাশন ও রঙের ব্যাপারে আরো মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দেন, যাতে তাঁতীরা তাদের পণ্যসামগ্রী সময়োপযোগী করে তুলতে পারে।

প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনকৃত ৬টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র হচ্ছে- সিরাজগঞ্জ ২৮২ মেগাওয়াট সিম্পেল সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র, ভোলা ২২৫ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র, চাঁদপুর ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র, আশুগঞ্জ ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র, খুলনার রুপসায় ১০৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং চট্টগ্রামের জুলদা ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র (তৃতীয় ইউনিট)। নয়টি উপকেন্দ্র হচ্ছে- রামগঞ্জ, বরিশাল (উত্তর), বারইয়ারহাট, শিকলবাহা, জলঢাকা, সুনামগঞ্জ, বিয়ানিবাজার, রাঙামাটি ও মাতারবাড়ি।

শতভাগ বিদ্যুৎ সংযোগের আওতায় আসা উপজেলাগুলো হচ্ছে-হরিনাকুন্ড, ঠাকুরগাঁও সদর, বালিয়াডাঙ্গা, গোয়ালন্দ, কালুখালী, বামনা, লাখাই, শায়েস্তাগঞ্জ, আজমেরীগঞ্জ, বাহুবল, মেলান্দহ এবং ইসলামপুর।
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ৩০৬টি উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুৎ সরবরাহের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এরমধ্যে ২৬৩টি উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুৎ সরবরাহ ইতোমধ্যেই উদে¦াধন করা হয়েছে। অবশিষ্ট ৪৩টি উপজেলা চলতি বছরের জুন নাগাদ উদ্বোধন করা হবে।

প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী, বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নাসিরুল হামিদ বিপু অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।

বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব ড.আহমেদ কায়কাউস অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নের সার্বিক চিত্র তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন।

ড. আহমেদ কায়কাউস বলেন, ২০,৮৫৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা অর্জন করায় দেশের ৯২ শতাংশের বেশি জনগণ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। তিনি বলেন, গত ১০ বছরে ১শ’ নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের সুবাদে বাংলাদেশ এখন বিদ্যুৎ ঘাটতির দেশ থেকে বিদ্যুৎ উদ্বৃত্ত দেশে পরিণত হয়েছে।

সাবেক মন্ত্রী এবং সিনিয়র আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদ এবং ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহ, সাবেক প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ ইসলাম আল জ্যাকব এবং সংশ্লিষ্ট এলাকার সংসদ সদস্যগণ এ সময় গণভবনে উপস্থিত ছিলেন।

সূত্র: বাসস

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত