দুইবার প্রাইজ ওপেনিং চিঠি দিয়েও টেন্ডার বাতিল!

প্রকাশ : ২৫ জানুয়ারি ২০১৮, ১৮:৪৬

জাগরণীয়া ডেস্ক

পরপর দুইবার একই বিষয়ে প্রাইজ ওপেনিং চিঠি দিয়েও শেষ পর্যন্ত টেন্ডার বাতিল করতে হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরকে। ১২টি মোবাইল ক্রেন কেনার এই টেন্ডারকে কেন্দ্র করে ইকম ট্রেড হোল্ডিং প্রাইভেট লিমিটেড নামক প্রতিষ্ঠানটির ভুয়া চিঠি ও অভিযোগকে কেন্দ্র করেই তৈরি হয়েছে এমন অভূতপূর্ব জটিলতা। সম্প্রতি সড়ক যোগাযোগ ও সেতু সচিবকে ঘুষের প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগে চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং নামে চীনের যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে বলে অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন ইকমট্রেড সেই প্রতিষ্ঠানেরই স্থানীয় এজেন্ট বলে জানা গেছে।

ঘটনার শুরু ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে, যখন চট্টগ্রাম বন্দরে ১০ টন ক্ষমতাসম্পন্ন ১০টি মোবাইল ক্রেন সরবরাহের টেন্ডার আহ্বানে ২ কোটি ৭৮ লাখ ৬৪ হাজার টাকার ভুয়া ও জাল পারফরম্যান্স গ্যারান্টি জমা দেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইকম ট্রেড। টেন্ডারে ইকমট্রেড এর পাশাপাশি ফেরিটেক প্রাইভেট লিমিটেডও যোগ্য বিবেচিত হয়। সেবছর ১৩ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠান দু’টিকে প্রাইজ ওপেনিং চিঠি দেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ইকম ট্রেড এর ভুয়া ও জাল পারফরম্যান্স গ্যারান্টি প্রমাণিত হবার পর বন্দরের তৎকালীন সদস্য (প্রকৌশল) বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কমডোর জুলফিকার আজিজ প্রাইজ ওপেনিং চিঠির কার্যকারিতা স্থগিত করেন।

এরপর ২৬ নভেম্বর বন্দর কর্তৃপক্ষ পুনরায় প্রাইজ ওপেনিং এর চিঠি দিলে আবারও নৌপরিবহন মন্ত্রী বরাবর একটি অভিযোগ দেয় ইকম। সেটি বন্দর চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো হলে দ্বিতীয় বারের মতো প্রাইজ ওপেনিং চিঠির কার্যকারিতা স্থগিত করে পুনরায় টেন্ডার আহ্বানের সিদ্ধান্ত দেন বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম খালেদ ইকবাল।

কিন্তু পরবর্তীতে ইকম এর সেই অভিযোগও মিথ্যা প্রমাণিত হয়। দেখা যায় মিয়ানমারের যে কোম্পানিকে জড়িয়ে অভিযোগ তোলা হয়েছে তারা আসলে এরকম কোন চিঠি দেয়নি। প্রমাণ মিলে ভুয়া ইমেইল আইডি থেকে ইমেইল পাঠানোরও।

দুই দুইবার এহেন কর্মকাণ্ডের পর ২০১৫ সালের ৫ অক্টোবর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চট্টগ্রামের উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম প্রাথমিক অনুসন্ধানের সত্যতার উপর ভিত্তি করে নিজেই বাদি হয়ে বন্দর থানায় ইকম ট্রেড এর বিরুদ্ধে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে জাল পারফরম্যান্স গ্যারান্টি জমা দেওয়ার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন।

এরপর ২০১৭ সালের ১২ জানুয়ারি মামলার বাদি ইকম ট্রেডের প্রোপ্রাইটর মো. রফিকুল ইসলাম ও প্রিমিয়ার ব্যাংক গুলশান শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক এবং তৎকালীন ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও কান্ট্রি ম্যানেজার মো. কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। মামলাটি বর্তমানে সিএমএম আদালতে চলমান।

এদিকে অনুসন্ধানে উঠে এসেছে আরো চাঞ্চল্যকর তথ্য। জানা গেছে, চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না হারবারের স্থানীয় এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে ইকম ট্রেড। সম্প্রতি সড়ক যোগাযোগ ও সেতু সচিবকে ৫০ লাখ টাকা ঘুষের প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগে ঐ প্রতিষ্ঠানকেই কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

চীনা এই প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করেন সিঙ্গাপুরে বসবাসরত নুরুল আমিন ওরফে সিঙ্গাপুর আমিন। সেতু সচিবের সাথে ঘুষ কেলেঙ্কারির পেছনেও তারই হাত। বিভিন্ন সময় প্রভাব খাটিয়ে, ঘুষ দিয়ে প্রকল্প হাতিয়ে নেন তিনি। এছাড়া জালিয়াতির মাধ্যমে কাজ হাতিয়ে অবৈধ পথে বিদেশে টাকা পাচার করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে আমিনের বিরুদ্ধে। 

কিন্তু জালিয়াতির মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে দু’টি প্রকল্প হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা ব্যর্থ হলেও এখনো তিনি চাপ সৃষ্টি করে নতুন প্রকল্প নিতে তৎপর রয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ইকম ট্রেডের প্রোপ্রাইটর মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, "চীনের প্রতিষ্ঠানটির ক্রেন তৈরির অভিজ্ঞতা ও সক্ষমতা নেই বলেই আমরা তা বন্দর কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। কিন্তু দুদক একতরফাভাবে অভিযোগপত্র দিয়েছিল"। 

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত