অনুগল্প
দাম্পত্য
প্রকাশ | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৩:২৯
দুপুরে খাওয়ার টেবিলে ধুন্ধুমার হয়ে গেল। বাদল চিৎকার করে বলতে লাগলো, তোর যেখানে ইচ্ছা যা, যা খুশি তাই কর। তোর কোন কিছু নিয়েই আমি কোনদিন কিছু বলি নাই, এখনও বলবো না। যার সাথে ইচ্ছা যা, যার সাথে ইচ্ছা শো...
মনে করার কারণ নাই যে স্বর্ণালী খুব অবলা নারী হয়ে চোখের জল ফেলল। সে-ও চিৎকার করে বলতে লাগলো, তুই বল আমি এ পর্যন্ত যা ইচ্ছা তাই কি করছি, বল, কই কই গেছি, বল কার কার সাথে শুইছি...
ঘটনা এপর্যন্ত কখনও হাতাহাতিতে পৌঁছায়নি। এই পর্যায়ে এসে বাদল ঠাস করে গেষ্ট রুমের দরজা বন্ধ করে দিয়ে নিজেরে আড়াল করে। স্বর্ণালী নিজের বেডরুমে। আজকাল চেঁচামেচি করলে ঘাড়ে ব্যথা করে। প্রেসার কি না চেক করা জরুরী। সে এক গ্লাস বরফ শীতল জল খায়। বিছানায় বসে দম নেয়। তারপর চোখের উপর আড়াআড়ি করে হাত রেখে টানটান হয়ে শুয়ে ভাবতে থাকে। এইরকম বিশ্রি ভাষার ঝগড়া এই প্রথম নয়। আরও কয়েকবার হয়েছে। ভাবতে ভাবতে বাদল তার সামনে এসে দাঁড়ায়। না না বাস্তবে নয়, কল্পনায়। মুখে স্বর্ণালী যা বলেছে, কল্পনায় তা না বলে বরং তার উল্টোটা বলে বাদলকে। পুরো ঘটনা রিওয়াইন্ড করে সে।
বাদল: তোর যা ইচ্ছা কর, যেখানে খুশি যা, যার সাথে ইচ্ছা শো, আমি কিছু বলবো না...
স্বর্ণালী: হ্যাঁ আমার যা ইচ্ছা তাই করছি, যেখানে ইচ্ছা গেছি, যার সাথে ইচ্ছা শুইছি...কারণ আমি নিজেরে বাঁচাতে চাইছি, নিজেরে সজীব রাখতে চাইছি, আমি জীবম্মৃত হওয়ার মতো মহান না...
বাদল: আমারও তো সাফোকেশন হয় আমি তো যাইনি কারো কাছে...
স্বর্ণালী: সেটা তোমার ব্যাপার, তোমার নিজেরে বাঁচানো জরুরী মনে হয় নাই, আমার মনে হয়েছে। এই মৃত অকার্যকর সম্পর্ক আমি ঘৃণা করি তাই...
বাদল: তো বাঁচতে পারছো? সজীব আছো?
কল্পনায় কথোপকথনের এই পর্যায়ে স্বর্ণালী আবিস্কার করে কাঁদতে কাঁদতে ফুলে গেছে চোখমুখ। বাদল দরজা খুলে বাইরের কাপড় পরে কোথাও বের হয়ে গেল। মেইন দরজা বন্ধ হওয়ার শব্দ পাওয়া গেল। স্বর্ণালী উঠে কফি মেকারে কফি বানায়। তার মনে হলো এই যে কান্নাকাটি, এই যে প্রেসার বাড়ানো-এইটুকুই লোকসান। অমিমাংসিত একটা দীর্ঘশ্বাস ঘরজুড়ে খেলে বেড়াতে থাকলো।