এসো পা বাড়াই (২২ তম পর্ব)

প্রকাশ | ২৮ মে ২০১৭, ০৩:০২

"মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করে এমন সব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে পুরুষের সাথে সাথে নারীদের অংশগ্রহণ সীমিত, কিন্তু কেন? ফেসবুক এর চিফ অপারেটিং অফিসার শেরিল স্যান্ডবার্গ (Sheryl Sandberg) এর বই 'Lean In'- এ তিনি দেখিয়েছেন এ সমস্যার মূলে কি, কিভাবে নারীরা নেতৃত্ব অর্জন করতে পারে, তার পূর্ণ ক্ষমতার ব্যবহার করতে পারে। তার নিজের জীবন এবং পাশ্চাত্যের প্রেক্ষাপটে রচিত হলেও সারা পৃথিবীর নানা পরিসংখ্যান আর গবেষণার রেফারেন্স দিয়ে তিনি এই বইকে সমৃদ্ধ করেছেন সমস্ত মানব জাতির জন্য। আমার আন্তরিক ইচ্ছা বাংলাদেশের মানুষও এই বই পড়ে উপকৃত হোক। সেই ইচ্ছা থেকেই অনুবাদের এই প্রচেষ্টা। ইতোমধ্যেই ২০টিরও অধিক ভাষায় এই বইয়ের অনুবাদ করা হয়েছে। এই বইয়ের নামে একটি আন্তর্জাতিক চক্রও গড়ে উঠেছে (http://leanin.org/) যেখানে সারা পৃথিবী থেকে যে কেউ চাইলে যুক্ত হতে পারে। মূল বইয়ে রেফারেন্স গুলোর বিস্তারিত দেয়া আছে।"

LEAN IN                                                                 এসো পা বাড়াই
WOMEN, WORK AND THE WILL TO LEAD         নারী, কাজ এবং নেতৃত্বের ইচ্ছা
WRITER: SHERYL SANDBERG                           অনুবাদ: আফরিন জাহান হাসি

কয়েক সপ্তাহ পরে আমার রাজনৈতিক দর্শন (Political philosophy) এর অধ্যাপক আমাকে পাঁচ পৃষ্ঠার একটি রচনা নির্ধারণ করে দিল। আমি আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম। পুরো পাঁচ পৃষ্ঠা ! হাই স্কুলে থাকতে ওরকম দৈর্ঘ্যের মাত্র এক পৃষ্ঠা আমি লিখেছি, তাও সেটা ছিল এক বছর সময় ধরে চলা প্রকল্প। মাত্র এক সপ্তাহে কেউ কিভাবে পাঁচ পৃষ্ঠা লিখে? আমি প্রতি রাতে জেগে থাকতে শুরু করলাম, ভীষণ ভাবে লেগে থাকলাম, সময় আর খাটুনি বিবেচনায় আমার উচিত ছিল ‘এ' (A) পাওয়া। আমি পেয়েছিলাম ‘সি' (C)। বস্তুত প্রকল্পের কাজ শেষ হলে হার্ভার্ডে 'সি' পাওয়া অসম্ভব। আমি অতিরঞ্জিত করছি না- এটা ছিল ফেল এর সমমান। আমি আমার ছাত্রাবাসের প্রক্টরের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম, যে কিনা ভর্তি অফিসেও কাজ করতো। সে আমাকে বলেছিল যে আমার ব্যাক্তিত্বের জন্য আমাকে হার্ভাডে ভর্তি নেয়া হয়েছে, আমার শিক্ষাগত সম্ভাবনা দেখে নয়। অত্যন্ত সান্ত্বনাদায়ক।

আমি কোমর বেঁধে নামলাম, কঠোর পরিশ্রম করলাম এবং সেমিস্টারেরর শেষের দিকে আমি শিখতে পেরেছিলাম কিভাবে পাঁচ পৃষ্ঠার রচনা লিখতে হয়। কিন্তু শিক্ষা ক্ষেত্রে আমি যতই ভালো করি না কেন, আমি সবসময়ই অনুভব করতাম, এই বুঝি ধরা পড়ে যাবো যে আসলে কিছুই জানিনা। ফাই বেটা কাপ্পা’র আত্ম-সংশয় নিয়ে ঐ বক্তৃতা শোনার আগ পর্যন্ত ওরকমই ছিল, ঐ বক্তৃতা তাই আমাকে অত নাড়া দিয়েছিল। নিজেকে প্রতারক ভাবি তা আসল সমস্যা নয়। তার চেয়ে যা আমাকে বেশি নাড়া দিয়েছিল, সেই সেটা হচ্ছে, আমি অত্যন্ত গভীর এবং প্রগাঢ়ভাবে কিছু অনুভব করছি, যা কিনা পুরোপুরি ভুল হতে পারে।

আমি আমার ভাইয়ের সঙ্গে বেড়ে উঠেছি, ওকে দেখে আমার আসলে বোঝা উচিত ছিল যে এই ধরণের আত্ম-সংশয় মেয়েদের মধ্যে বেশি। ডেভিড (David) আমার থেকে দুই বছরের ছোট, পৃথিবীর মানুষের মধ্যে যাকে আমি সবচেয়ে বেশি সম্মান করি আর ভালোবাসি। বাড়িতে সে তার স্ত্রীর সঙ্গে শিশুর যত্নের দায়িত্বগুলো আধাআধি ভাগ করে নেয়; পেশায় সে একজন শিশু স্নায়ুরোগ শল্য চিকিৎসক (pediatric neurosurgeon), যার দিনগুলো পরিপূর্ণ থাকে হৃদয় বিদারক জীবন-মৃত্যুর সিদ্ধান্তে। যদিও আমরা একইসাথে প্রতিপালিত হয়েছি, ডেভিড ছিল সবসময়ই বেশি আত্মবিশ্বাসী। একবার, হাই স্কুলে থাকতে আমাদের দুজনেরই এক শনিবারের রাতে ডেটিং এর সময়, তারা শেষ বিকেলে বাতিল করে দেয়। আমি বাকি ছুটির দিনটুকু বাড়িতে উদাসীনভাবে ইতস্তত ঘুরে বেড়িয়েছি, অবাক হয়ে ভেবেছি, আমার কি ভুল ছিল। ডেভিড এই প্রত্যাখ্যান হেসেই উড়িয়ে দিয়েছিল এই বলে যে, “ঐ মেয়ে একটি মহান জিনিস হাত ছাড়া করলো,” এবং ওর বন্ধুর সঙ্গে বাস্কেটবল খেলতে চলে গিয়েছিল। ভাগ্যক্রমে, আমাকে সান্ত্বনা দেয়ার জন্য আমার ছোট বোন ছিল, যে কিনা তার বয়সের তুলনায় বেশি বিজ্ঞ এবং সহানুভূতিশীল। 

(চলবে...)