ছোটগল্প: ঘুমের দিকে জাগরণের যাত্রা
প্রকাশ | ০৫ এপ্রিল ২০১৭, ১৬:২২ | আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০১৭, ১৭:৪৬
আমার এখন বাইরে থেকে তালা খুলতেই ভালো লাগে। নির্মলেন্দু গুণের মতো বাইরে থেকে তালা খুলতে খুলতে আমি ক্লান্ত নই। বরং কেউ ভেতর থেকে দরজা খুললেই আমার ভয় করে। কেউ মুখ হাঁড়ি করে দাঁড়িয়ে নেই তো? অথবা বেশি উচ্ছ্বাসে 'বিশেষ কোন অপেক্ষা' নিয়ে দরজা খুলছে না তো! আমার নিজের ঘরের দরজা নিজেরই খুলতে ইচ্ছে করে।
আমার এখন বয়স হয়েছে, এবার একটু স্বাধীনতা দরকার...
আমার দু'রুমের ফ্ল্যাট হবে। প্রথম ঘরটা বড়। মেঝে হবে ধবধবে সাদা আর মসৃন। এককোনা সিঁদুর পড়লে তোলা যাবে। ঘরের এক কোণে সার বেঁধে দাঁড় করানো বই। একটা শীতল পাটি থাকবে, সেখানে ছড়ানো ছিটানো দু'চারটা কুশন। সামনের দেয়ালে টিভি স্ক্রিন। আমি শীতল পাটিতে শুয়ে একটা কুশনে মাথা রেখে আরেক কুশনে পা রাখবো, ব্যাকপেইন কমাতে পিঠের নিচে হট ওয়াটার ব্যাগ দিয়ে এলোচুলে মুভি দেখবো। যতক্ষণ ইচ্ছা।
আমার এখন বয়স হয়েছে, এবার একটু স্বাধীনতা দরকার...
আমার শোবার ঘরের মেঝেতে বিছানা, পুরনো নরম একটা চাদর তাতে। আলমারীতে দু'চারটা আটপৌড়ে পোশাক। শতশত রঙিন চোখ ধাঁধানো শাড়িতে আমার রীতিমতো বিবমিষা লাগে এখন। শোবার ঘরে ইচ্ছেমতো ঘুমোবো। বেশি বেলায় ঘুম থেকে উঠলে কারো কিছু বলার থাকবে না।
আমার এখন বয়স হয়েছে, এবার একটু স্বাধীনতা দরকার...
আমার লম্বা রান্নাঘর হবে দু'কামরার ফ্ল্যাটে। পোলার আইসক্রিম এককাপ সমান চালের ভাত ফুটাবো সাথে কড়কড়ে করে আলুভাজা, সবুজ বরবটি সেদ্ধ আর ঘন ডাল- এই হবে আমার আহার। ইচ্ছে হলে রাঁধবো না হলে না।
আমার এখন বয়স হয়েছে, এবার একটু স্বাধীনতা দরকার...
এই শহরে আমি কেরানির চাকরি করবো। অল্প বেতনের। আমার তেমন দায়-দায়িত্ব থাকবে না। দুদিন অফিস কামাই করলেও কেউ বিশেষ খোঁজ করবে না। আমি শহরের পথে পথে হাঁটবো। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু রিমুর মতো। রিমুকে সবাই পাগল বলতো। ও একা হাঁটতো, হাসতো। এলোমেলো পোশাক, উস্কখুস্ক চুলে উকুন। ও বড় বড় গাছে ছাওয়া ফুলার রোডে একা হাঁটতো আর রবার্ট ফ্রষ্টের কবিতা আউড়াতো। তখন ওর জন্য মায়া হলেও এখন ওর জন্য ঈর্ষা হয়। আমি ওর মতো একা একা কবিতা আউড়াতে আউড়াতে রাস্তায় হাঁটতে চাই।
আমার এখন বয়স হয়েছে, এবার একটু স্বাধীনতা দরকার...
মানুষের অপেক্ষা, আদর, গুরুত্ব সবকিছু পেছনে ফেলে আমার নির্ভার হতে ইচ্ছে করে। আমি ধীরে ধীরে ঘুমের পথে হাঁটি, গা ছেড়ে দেওয়ার পথে হাঁটি, টানটান জগতকে ভেংচি কেটে আমি স্বাধীনতার পথে হাঁটি...
আমার বয়স হয়েছে...