এসো পা বাড়াই (১৬ তম পর্ব)

প্রকাশ | ১৯ মার্চ ২০১৭, ২৩:০৭ | আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৭, ১৯:৩২

"মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করে এমন সব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে পুরুষের সাথে সাথে নারীদের অংশগ্রহণ সীমিত, কিন্তু কেন? ফেসবুক এর চিফ অপারেটিং অফিসার শেরিল স্যান্ডবার্গ (Sheryl Sandberg) এর বই 'Lean In'- এ তিনি দেখিয়েছেন এ সমস্যার মূলে কি, কিভাবে নারীরা নেতৃত্ব অর্জন করতে পারে, তার পূর্ণ ক্ষমতার ব্যবহার করতে পারে। তার নিজের জীবন এবং পাশ্চাত্যের প্রেক্ষাপটে রচিত হলেও সারা পৃথিবীর নানা পরিসংখ্যান আর গবেষণার রেফারেন্স দিয়ে তিনি এই বইকে সমৃদ্ধ করেছেন সমস্ত মানব জাতির জন্য। আমার আন্তরিক ইচ্ছা বাংলাদেশের মানুষও এই বই পড়ে উপকৃত হোক। সেই ইচ্ছা থেকেই অনুবাদের এই প্রচেষ্টা। ইতোমধ্যেই ২০টিরও অধিক ভাষায় এই বইয়ের অনুবাদ করা হয়েছে। এই বইয়ের নামে একটি আন্তর্জাতিক চক্রও গড়ে উঠেছে (http://leanin.org/) যেখানে সারা পৃথিবী থেকে যে কেউ চাইলে যুক্ত হতে পারে। মূল বইয়ে রেফারেন্স গুলোর বিস্তারিত দেয়া আছে।"

LEAN IN                                                                 এসো পা বাড়াই
WOMEN, WORK AND THE WILL TO LEAD         নারী, কাজ এবং নেতৃত্বের ইচ্ছা
WRITER: SHERYL SANDBERG                           অনুবাদ: আফরিন জাহান হাসি

সন্তানের দেখাশোনা এবং কর্মক্ষেত্রে লেগে থাকার ব্যাপারে মাতাপিতাকে সাহায্যের প্রচেষ্টায়, আমাদের দেশ অন্যদের তুলনায় প্রবলভাবে পিছিয়ে আছে। পৃথিবীর সমস্ত শিল্পোন্নত দেশগুলির মধ্যে ইউনাইটেড স্টেইটসই একমাত্র দেশ যাদের 'বেতন ভাতা সহ মাতৃত্বকালীন ছুটি নীতি'র প্রচলন নেই। ফ্যামিলি ভ্যালুজ (Family Values) এর পরিচালক এলেন ব্রাভো (Ellen Bravo) ওয়ার্ক কনসর্টিয়াম (Work consortium) এ দৃষ্টিপাত করেছেন যে, "বেশিরভাগ নারীরাই ‘সবকিছু করার চিন্তা করে না,’ বরং তারা সবকিছুই হারানোর ভয়ে থাকে - তাদের কাজ, তাদের সন্তানের স্বাস্থ্য, তাদের পরিবারের অর্থনৈতিক স্থিরতা - যা একজন ভালো কর্মচারী এবং একজন দায়িত্ববান মা হয়ে ওঠার নিয়মিত দ্বন্দ্বের কারণে উদ্ভূত"।

অনেক পুরুষের ক্ষেত্রেই, মৌলিক ধারণা হচ্ছে যে তারা দুটোই - একটি সফল কর্মজীবন ও একটি পরিপূরক ব্যক্তিগত জীবন, একসাথে পেতে পারে। অনেক নারীদের জন্য ভালো ধারণাটি হচ্ছে, এই দুটো একসাথে করতে যাওয়া কঠিন; আর খারাপভাবে প্রচলিত ধারণা হচ্ছে, নারীদের জন্য এই দুটো বিষয় একসাথে রক্ষা করা অসম্ভব। নারীরা শিরোনাম আর কাহিনীর সতর্কবার্তা দিয়ে পরিবেষ্টিত, যা বলে তারা একসাথে পরিবার এবং কর্মজীবনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে পারবে না। তাদেরকে বারংবার বলা হয় যে তাদেরকে যেকোন একটা বেছে নিতে হবে, কারণ যদি তারা খুব বেশি চেষ্টা করে তাহলে তারা অসুখী এবং দুর্দশাগ্রস্ত হয়ে পড়বে। 'কাজ এবং জীবনের ভারসাম্য' হিসেবে বিষয়টি কাঠামোবদ্ধ করা, যেন দুটো সম্পূর্ণভাবে বিরোধী বিষয়, কার্যতঃ নিশ্চিত করে যে কাজ হেরে যাবে। কেউ কখনও জীবনের উপর কাজকে বেছে নিয়েছে?

সুখবর হচ্ছে নারীরা শুধু পরিবার এবং কর্মজীবন একসাথে চালিয়ে যেতে পারেন তাই নয়, একই সাথে তারা সাফল্যলাভও করতে পারেন। ২০০৯ সালে শ্যারন মীয়ারস (Sharon Meers) এবং জোঅ্যানা স্ট্রোবার (Joanna Strober) বিভিন্ন সরকারী তথ্য, সমাজবিজ্ঞান ও নানা মৌলিক গবেষণার ব্যাপক পর্যালোচনা করে গেটিং টু ফিফটি/ফিফটি (Getting to 50/50) প্রকাশ করেছিল। এই নিরীক্ষার উপসংহারে তারা দেখিয়েছিল, সন্তান, বাবা-মা এবং বিয়ে সবকিছু একসাথে বিকাশ লাভ করতে পারে যখন বাবা-মা উভয়ই পরিপূর্ণভাবে তাদের পেশায় নিয়োজিত। এই তথ্য-উপাত্ত স্পষ্টভাবে প্রকাশ করেছে যে অর্থনৈতিক এবং শিশু-যত্নের দায়িত্বগুলো ভাগাভাগি করে নিলে, কম অপরাধী মা, বেশি সম্পৃক্ত বাবা আর বিকশিত সন্তানের দিকেই পরিবারগুলো পরিচালিত হয়। ব্র্যান্ডাইস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোজালিন্ড শেইট বারনেট (Rosalind Chait Barnett) ‘কাজ ও জীবনের ভারসাম্য’ এর গবেষণার উপর ব্যাপক পর্যালোচনা করেছেন এবং ফলাফল পেয়েছেন, যেসব নারী একাধিক ভূমিকায় অংশগ্রহণ করে তাদের মাঝে আসলে নিম্ন-মাত্রার উদ্বিগ্নতা এবং উচ্চ-মাত্রার মানসিক প্রশান্তি বিরাজ করে। কর্মজীবি নারীরা পরিশ্রমের ফল লাভ করে; বৃহত্তর আর্থিক নিরাপত্তা, আরো স্থিতিশীল বিবাহ, ভালো স্বাস্থ্য এবং সাধারণভাবে জীবনের পরিতৃপ্তি বৃদ্ধির পুরস্কার সহ।

একজন নারী যে তার কাজ এবং পরিবার দুটোই ভালোবাসে তা নিয়ে সিনেমা তৈরী করলে, হয়তো অত নাটকীয় বা মজার নাও হতে পারে কিন্তু তা হবে বাস্তবতার অধিকতর ভালো প্রতিচ্ছবি। যোগ্যতাসম্পন্ন পেশাদার এবং সুখী মা অথবা এমনকি সুখী পেশাদার এবং যোগ্যতাসম্পন্ন মা- এধরণের চিত্রায়ন আমাদের আরও বেশি দরকার। বর্তমান নেতিবাচক চিত্রগুলি হয়তো আমাদের আনন্দের খোরাক হতে পারে কিন্তু সেইসাথে জীবনের বাধাগুলোকে অনতিক্রম্য হিসাবে উপস্থাপন করার ফলে তা নারীকে অনর্থক ভীতিপূর্ণ করে তোলে। আমাদের সংস্কৃতি আজও বিহ্বল হয়ে আছে: ‘আই ডোন্ট নো হাউ শি ডাজ ইট’ সিনেমাতে।

(চলবে...)