কবিতা

আমার কিছু কথা ছিল (ভিডিও)

প্রকাশ | ০৮ মার্চ ২০১৭, ১৬:৩২ | আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৭, ১৫:৩৯

আমার কিছু কথা ছিল
রচনা ও আবৃত্তি - সঙ্ঘমিত্রা সেন

তখন আমি ভীরু মেয়ে 
তখন আমি ষোল 
পড়শীরা জিভ কেটে বলল মেয়ে বড় হলো 
কান বিঁধিয়ে নাক ফুটিয়ে ব্যথায় শরীর কাঁপা 
খোলা চুলে চললো শাসন বাঁধতে হলো খোঁপা 
কখন ঠাকুর হয় না ছুঁতে কখন আমের আচার 
মেয়ে বলে মানতে হবে হাজার আচার বিচার। 

ওই ছেলেটা খেলতো যে রোজ আমার সঙ্গে একা 
ডাংগুলিটা ছাড়তে হলো বন্ধ হলো দেখা 
রান্নাবাটি খেলতে পার বন্ধু শুধু মেয়ে 
শিবের ব্রত করতে হবে নির্জলা না খেয়ে 
এঁটোকাটা মানতে হবে মাদুলিটা পড়ে 
আমার জীবন অন্যলোকে দেবে নাকি গড়ে!
ছড়া লেখা ক্ষান্ত দিয়ে রান্নাবারি শেখো 
আকাশ মানুষ গাছপালা নয় আলপনাটাই এঁকো।

এমন কথা শুনে যখন কানটা ঝালাপালা 
মা বললো বাবুরে তুই এখান থেকে পালা 
বলছে লোকে বলুক তারা ইচ্ছে মতো বাঁচ 
অন্যপথে চলতে গেলে লাগবে আগুন-আঁচ 
লাগুক গায়ে তবু বলি আগুন গায়ে মাখ 
নিয়ম ভেঙ্গে খানখান কর নিয়ম কেবল কাঁচ!
মায়ের চোখে তারা জ্বলে আমার  চোখে জল।

জল মুছিয়ে বাবা বলেন চল হাঁটবি চল্ 
অনন্তপথ ফুরোয় না আর সূর্য ডোবে ডোবে 
হাতের মুঠোয় বাবার আঙ্গুল সন্ধ্যে 
আকাশ ছোঁবে 

বাবা বলেন দৃষ্টি দিলাম তৃতীয় নয়ন খোল 
কলম দিলাম হাতে  তুলে এবার মাথা তোল 
এই জীবনে মন্দ যেটা মন্দ বরাবর 
সত্যি যেটা সত্যিটাকে বলার সাহস কর।

তখন আমি পাগল পাগল লেখায় আঁকায় গানে 
ঝড়ের মতো এক্খানা বই আছড়ে পড়ল প্রাণে 
বাবা দিলেন হাতে তুলে 'আমার মেয়েবেলা'
বদলে গেলো জীবন আমার বদলে গেলো চলা!
রণঙ্গ দেহী শব্দে আছে সত্যি বলার ধার!
সমাজ ভেঙ্গে আছাড় পিছাড়! ধর্ম টা ছারখার!

কে লিখেছে এমন কথা? এমন সাহস কার?
এমন আগুন কে জ্বালালো? হাসলো নাট্যকার (বাবা dr অরুণ কুমার দে )

এই দৃশ্যে জানলা খোলা বাইরে খোলা আকাশ 
বাঙলাদেশের ঝড় এসেছে চমকে গেছে বাতাস

বাবা বলেন এই নে রে মেয়ে এই নে রে দূরবীন 
তোর জন্যে দাঁড়িয়ে আছেন 'তসলিমা নাসরিন'
নষ্ট মেয়ে পারবি হতে? এমন নষ্ট গদ্য 
বুঝবো তবে তুই যে আমার শ্রেষ্ঠ লেখা পদ্য।

যাত্রা শুরু হলো আমার আগল ভাঙা মেয়ে 
মানবো না আর চোখ রাঙানি যতোই আসুক ধেয়ে 
সমাজ; সমাজ মারবে নাকি - সমাজ তুমি কে হে 
বিষ মিশিয়ে দেবো তোমার অনধিকার স্নেহে!

'সত্য' গেছেন নির্বাসনে 
'তসলিমা' তার নাম 
বাবার চিতার আগুন ছুঁয়ে করছি শেষ প্রণাম 
পিতা আমার ব্ন্ধু আমার আজন্মের ঋণ 
আমায় তুমি দিয়ে গেলে 'তসলিমা নাসরিন'।