উদীচী’র জাতীয় গণসঙ্গীত প্রতিযোগিতার ঢাকা জেলা সম্পন্ন
প্রকাশ | ০৩ মার্চ ২০১৭, ১৮:২৯
আগামী ২৮, ২৯ ও ৩০ মার্চ ২০১৭ বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী আয়োজন করতে যাচ্ছে “অষ্টম সত্যেন সেন গণসঙ্গীত উৎসব ও জাতীয় গণসঙ্গীত প্রতিযোগিতা’২০১৭”।
উদীচীর প্রতিষ্ঠাতা সত্যেন সেন-এর জন্মদিনকে উপলক্ষ করে গত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় আয়োজিত এবারের উৎসবের শ্লোগান নির্ধারণ করা হয়েছে- “আমার লড়াই আমার গান, উঠবে জেগে সর্বপ্রাণ”।
গত ০৩ মার্চ শুক্রবার অনুষ্ঠিত হয় এ প্রতিযোগিতার ঢাকা জেলা পর্ব। ওইদিন সকাল ১০টায় সুফিয়া কামাল কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারের (কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরী) সেমিনার কক্ষে শুরু হয় বিভিন্ন বিভাগের প্রতিযোগিতা। ‘ক’, ‘খ’, ‘গ’ ও দলীয়- এই চারটি বিভাগে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। একক প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে অনুর্ধ্ব-১২ বছর বয়সীরা ‘ক’ বিভাগে, ১২ থেকে অনুর্ধ্ব-১৮ বছর বয়সীরা ‘খ’ বিভাগে এবং ১৮ বছরের বেশি বয়সী সকল প্রতিযোগী ‘গ’ বিভাগের অন্তর্ভূক্ত ছিলেন। দলীয় প্রতিযোগিতা (‘ঘ’ বিভাগ)-এর ক্ষেত্রে কমপক্ষে পাঁচজন শিল্পীর অংশগ্রহণ বাঞ্ছনীয় ছিল। এ প্রতিযোগিতায় বিচারক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট গণসঙ্গীত গীতিকার ও সুরকার অধ্যাপক মতলুব আলী, শাহীন সরদার এবং সোহানা আহমেদ।
প্রতিযোগিতা শুরুর আগে ছিল সংক্ষিপ্ত উদ্বোধনী পর্ব। উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদের সভাপতি কাজী মোহাম্মদ শীশ-এর সভাপতিত্বে এ পর্বে আলোচনা করেন তিন বিচারক অধ্যাপক মতলুব আলী, শাহীন সরদার ও সোহানা আহমেদ, উদীচী ঢাকা বিভাগীয় কমিটির আহবায়ক শিবাণী ভট্টাচার্য এবং উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদের সাধারণ সম্পাদক ইকবালুল হক খান। এরপর শুরু হয় চারটি বিভাগের প্রতিযোগিতা।
এবারের প্রতিযোগিতায় ঢাকা জেলা পর্বে ‘ক’ বিভাগে প্রথম স্থান অধিকার করেছে নূর জাকিয়া প্রাপ্তি, আর দ্বিতীয় হয়েছে শেহের মাহমুদ স্মিতা, তৃতীয় হয়েছে অরিন্দম খান নীলাভ। ‘খ’ বিভাগে প্রথম হয়েছে কাজল রেখা, দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে দুলারি ভট্টাচার্য সিঁথি ও তৃতীয় হয়েছে মায়েশা সুলতানা ঊর্বি। ‘গ’ বিভাগে প্রথম হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন আনান বাউল। এ বিভাগে দ্বিতীয় হয়েছেন মো. তফাজ্জল হোসেন। তৃতীয় স্থান পেয়েছেন অন্তু সরকার। আর দলীয় অর্থাৎ ‘ঘ’ বিভাগে যৌথভাবে প্রথম স্থান অধিকার করেছে উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদ ও ভিন্নধারা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।
যৌথভাবে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে উদীচী মিরপুর শাখা ও উদীচী তেজগাঁও শাখা। আগামী ১৮ মার্চ শনিবার বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর সঙ্গীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে আয়োজিত বিভাগীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন জেলা পর্যায়ের বিজয়ীরা।
গণসঙ্গীতের প্রচার, প্রসার এবং একে একটি স্বতন্ত্র সঙ্গীতের ধারা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে প্রতিবছর গণসঙ্গীত উৎসব আয়োজন করে উদীচী। আগামী ০১ এপ্রিল সকাল ১০টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতা। এর আগে দেশে ও বিদেশে জেলা পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় বিজয়ীরা অংশ নেবেন বিভাগীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতা। সেখানে যারা বিজয়ী হবেন তারা ঢাকায় জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। বিভাগীয় পর্যায়ে একক বিভাগগুলোর প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারী এবং দলীয় বিভাগে শুধুমাত্র প্রথম স্থান অধিকারী দল জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে।
প্রগতিশীল গণচেতনা সম্পন্ন জাগরণমূলক গান, শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি মানুষের দু:খ-দুর্দশা এবং অধিকার সম্পন্ন সচেতনতামূলক গান, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাসমৃদ্ধ গান, স্বাধীনতা সংগ্রামের গান, সমাজের অন্যায় অত্যাচার নিপীড়ন অবসানের দিক নির্দেশনামূলক গান, মৌলবাদ-সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী গান, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির গান, যুদ্ধবিরোধী-স্বৈরাচার বিরোধী গান, সা¤্রাজ্যবাদ ও পুঁজিবাদ বিরোধী গান, বিশ্ব শান্তির পক্ষে গান, শোষণের বিরুদ্ধে গান, মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে গানকে গণসঙ্গীত হিসেবে বিবেচনা করা হবে। এছাড়া, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সহিংসতার বিরুদ্ধে রচিত ও সুরারোপিত নতুন গণসঙ্গীতসমূহ বেশি গুরুত্ব পাবে। স্থান-কাল ভেদে গণসঙ্গীতের ভিন্নতর ব্যাখ্যা থাকলেও প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে উলি¬খিত বিষয়গুলোকে বিবেচনা করা হবে।