এসো পা বাড়াই (১০ম পর্ব)
প্রকাশ | ২৭ জানুয়ারি ২০১৭, ০০:৩৫
"মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করে এমন সব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে পুরুষের সাথে সাথে নারীদের অংশগ্রহণ সীমিত, কিন্তু কেন? ফেসবুক এর চিফ অপারেটিং অফিসার শেরিল স্যান্ডবার্গ (Sheryl Sandberg) এর বই 'Lean In'- এ তিনি দেখিয়েছেন এ সমস্যার মূলে কি, কিভাবে নারীরা নেতৃত্ব অর্জন করতে পারে, তার পূর্ণ ক্ষমতার ব্যবহার করতে পারে। তার নিজের জীবন এবং পাশ্চাত্যের প্রেক্ষাপটে রচিত হলেও সারা পৃথিবীর নানা পরিসংখ্যান আর গবেষণার রেফারেন্স দিয়ে তিনি এই বইকে সমৃদ্ধ করেছেন সমস্ত মানব জাতির জন্য। আমার আন্তরিক ইচ্ছা বাংলাদেশের মানুষও এই বই পড়ে উপকৃত হোক। সেই ইচ্ছা থেকেই অনুবাদের এই প্রচেষ্টা। ইতোমধ্যেই ২০টিরও অধিক ভাষায় এই বইয়ের অনুবাদ করা হয়েছে। এই বইয়ের নামে একটি আন্তর্জাতিক চক্রও গড়ে উঠেছে (http://leanin.org/) যেখানে সারা পৃথিবী থেকে যে কেউ চাইলে যুক্ত হতে পারে। মূল বইয়ে রেফারেন্স গুলোর বিস্তারিত দেয়া আছে।"
LEAN IN এসো পা বাড়াই
WOMEN, WORK AND THE WILL TO LEAD নারী, কাজ এবং নেতৃত্বের ইচ্ছা
WRITER: SHERYL SANDBERG অনুবাদ: আফরিন জাহান হাসি
এই বাইরে ঝেড়ে ফেলার পেছনে অনেক কারণ থাকলেও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে নেতৃত্বের উচ্চাকাঙ্ক্ষার বৈসাদৃশ্য। অবশ্যই, কোন কোন নারী অন্য কোন পুরুষের মতই পেশাগতভাবে উচ্চাভিলাষী। তবুও সবরকম কাজের ক্ষেত্রে, তথ্য-উপাত্ত ঘেটে পরিষ্কার নির্দেশনা পাওয়া যায় যে, নারীদের থেকে পুরুষরা অনেক আকুলভাবে কামনা করে শীর্ষ পদগুলোতে যাওয়ার জন্য। ১৯১২ সালে বিখ্যাত কোম্পানীগুলোর প্রায় চার হাজার কর্মচারীর উপর ম্যাকিনজি (McKinsey) যে জরিপ করেছিল তাতে পাওয়া যায়, ৩৬ শতাংশ পুরুষ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার (c-suite) পদে পৌঁছাতে চায়, যেখানে মাত্র ১৮ শতাংশ নারী তা চায়।
চ্যালেঞ্জিং, উচ্চ পর্যায়ের দায়িত্ব এবং ক্ষমতাপূর্ণ কাজগুলো নারীদের থেকে পুরুষদের বেশী আকৃষ্ট করে। উচ্চাকাঙ্ক্ষার প্রভেদ সর্বোচ্চ স্তরে সবচেয়ে বেশী উচ্চারিত হলেও, এর অন্তর্নিহিত চলমান অবস্থা প্রতীয়মান পেশাগত সোপানের প্রতি পদে। কলেজ ছাত্রদের একটি সমীক্ষায় দেখা যায়, নারীদের চেয়ে অনেক বেশী পুরুষ পাশ করার প্রথম তিন বছরের মধ্যে, ক্যারিয়ার অগ্রাধিকার হিসেবে একজন ব্যবস্থাপকের স্তরে পৌঁছাতে চায়। এমনকি উচ্চশিক্ষিত পেশাদার নারী ও পুরুষের মধ্যে, নারীদের চেয়ে অনেক বেশী পুরুষ নিজেদেরকে “উচ্চাভিলাষী” হিসেবে অভিহিত করে।
পরবর্তী প্রজন্মে আশাব্যঞ্জক কিছু পরিবর্তন ঘটতে শুরু করেছে। ১৯১২ সালের (Pew Study) পিউ গবেষণায় প্রথম বারের মত দেখা যায় যে, ১৮ থেকে ৩৪ বছরের তরুণ মানুষদের মধ্যে, তরুণদের (৫৯ শতাংশ) মতই অনেক বেশী তরুণীরাই (৬৬ শতাংশ) তাদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে, উচ্চ বেতনের পেশা বা কর্মক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকে। মিলেনিয়াল (Millennial) এর সাম্প্রতিক জরিপে এও পাওয়া গেছে যে, নারীরাও পুরুষদের মতই নিজেদেরকে 'উচ্চাভিলাষী' হিসেবে দেখছে। এই উন্নতি সত্ত্বেও, এমনকি এই ডেমোগ্রাফিক এর মধ্যেই, নেতৃত্বের উচ্চাকাঙ্ক্ষার বৈসাদৃশ্য রয়েই গেছে।
মিলেনিয়াল (Millennial) নারীরা, মিলেনিয়াল (Millennial) পুরুষদের চেয়ে এই বক্তব্যের সাথে কম সম্মত হয়- “যেখানেই আমি কাজ করি না কেন, তার শীর্ষপদে যেতে আমি আকুলভাবে কামনা করি”, যা থেকে ভালোভাবেই তাদের মনোভাব বোঝা যায়। এছাড়াও মিলেনিয়াল (Millennial) জরিপের নারীরা তাদের পুরুষ সহকর্মীর চেয়ে কম সম্মত হয়, নিজেদেরকে, 'নেতা', 'স্বপ্নদ্রষ্টা', 'আত্মবিশ্বাসী' এবং 'ঝুঁকি নিতে ইচ্ছুক' হিসেবে চিহ্নিত করতে।
যেহেতু বেশিরভাগ পুরুষরাই নেতৃত্বের ভূমিকায় যেতে তাদের লক্ষ্য স্থির করে, তাই এটা বিস্ময়কর নয় যে তারা তা অর্জন করে, বিশেষ করে যখন নারীদের আরো অনেক অর্পিত বাধা অতিক্রম করতে হয়। কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের অনেক আগেই নারীদের মধ্যে এই নিদর্শনের সূচনা দেখা যায়। লেখক সামান্থা এটাস’জ (Samantha Ettus) এবং তার স্বামী, তাদের কন্যার কিন্ডারগার্টেন এর ইয়ারবুক পড়তে গিয়ে খেয়াল করেছিল যে প্রত্যেকটি শিশুকেই একটি প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়েছে তা হলো, “বড় হয়ে তোমরা কি হতে চাও?” তারা লক্ষ্য করেছিল যে বেশ কয়েকজন ছেলেশিশু চেয়েছিল প্রেসিডেন্ট হতে, যা মেয়ে শিশুরা কেউই চায়নি। (বর্তমান তথ্য-উপাত্ত ধারণা দেয় যে, এইসব মেয়ে শিশুরা যখন নারীতে পরিণত হবে তখনও তাদের মধ্যে একই বোধ অব্যাহত থাকবে)। মিডল স্কুলের ছেলে-মেয়েদের মধ্যে মেয়েদের চেয়ে ছেলেরা বেশি কামনা করে ভবিষ্যতের পেশায় নেতৃত্বের ভুমিকায় যেতে। শীর্ষ পঞ্চাশ কলেজের মধ্যে এক তৃতীয়াংশেরও কম নারী, স্টুডেন্ট গভর্নমেন্ট প্রেসিডেন্ট পদে আছে।
পেশাদারী উচ্চাকাঙ্ক্ষা প্রত্যাশিত পুরুষদের ক্ষেত্রে, কিন্তু নারীদের ক্ষেত্রে এটা ঐচ্ছিক, অথবা খারাপ, এমনকি কখনও কখনও নেতিবাচক হিসেবে দেখা হয়। “নারীটি খুব উচ্চাভিলাষী”-এটি আমাদের সংস্কৃতিতে কোন প্রশংসা বাক্য নয়। অদম্য এবং কঠোর অধ্যবসায় করা নারীরা আসলে গ্রহণযোগ্য সামাজিক আচার-আচরণের অলিখিত নিয়মকে লঙ্ঘন করে। পুরুষরা অবিরাম প্রশংসিত হয় উচ্চাকাঙ্ক্ষী, ক্ষমতাশালী এবং সফল হওয়ার জন্য, কিন্তু একই বৈশিষ্ট্যগুলো প্রদর্শন করে নারীদের প্রায়ই সামাজিক শাস্তি পেতে হয়। নারীদের অভীষ্টসাধন অনেক মূল্য দিয়ে আসে।
(চলবে...)