শেফালী গাঙ্গুলীর বিষাদসিঁথি
প্রকাশ | ১০ জুন ২০১৬, ১৭:৩৭
আমাদের তেমন কিছু কখনোই ছিলো না।
আকাশ সবচেয়ে নীল, বা সবুজের শ্রেষ্ঠ প্রগাঢ়ত্ব-
এসব আমরা ভালোবেসে বলেছিলাম শুধু।
বরং, বন্যা-খরা-দুর্ভিক্ষে নিঃশেষিত হয়েছি বেশুমার।
আমাদের সবার ক্ষেতে প্রচুর শস্য ছিলো না,
ডাকাতের ভয়ে অজানা পথে হাটুরে সর্বদাই তটস্থ থেকেছে,
কন্যাপণ ছাড়া মেয়েকে পাত্রস্থ করার বিধান
কখনোই ছিলো না এ জনপদে,
শরিকের বিরুদ্ধে মামলাই স্বাভাবিক চর্চা বরাবর;
অন্যের মুখে ঝামা না ঘষে, তূরীয় আনন্দ কে কবে পেয়েছে?
আমাদের আসলেই বলার মতো তেমন কিছু ছিলো না কখনো।
তবুও, কোন এক মিরুখালি গ্রামে;
একেবারে সেই সে দক্ষিণ বরিশালে- জোয়ারের জল
খালের কিনারা অবধি থই থই, চালতার শুকনো পাতা
তখন শর শর ঝরে পড়ছে, শব্দ ঝরেছে- সেই শব্দ অন্ধকারের;
জলে জল পড়ে অন্ধকার আরো খানিক নিবিড় কখনো বা;
সেই অন্ধকারে, জোনাকির নিশ্ছিদ্র জ্বলানেভা স্তব্ধতায়, শীতের কুয়াশা-সন্ধ্যায়
অলৌকিক শব্দ এসেছিলো ভেসে একসাথে- কাঁসর আর আজানের।
ঘরে ঘরে জ্বলে উঠেছিলো কুপির আলো, দূরে।
এ ছাড়া কোন বিস্ময়ের কথা মনে নেই।
জোয়ারের জল খালের কিনার অবধি আজো থই থই,
চালতার শুকনো পাতা তবুও শর শর;
শব্দ এখনো ছল ছল জল;
জলের তান তবু ঘুরে ঘুরে সন্ধ্যা-নিবিড়;
জোনাকি এখনো স্তব্ধতার আলোক সংগীত।
এবং, একজন শেফালী গাঙ্গুলীর সিঁথির নীচে,
পঞ্চাশ বছরের অভ্যস্ত সিঁদূর সহসাই মুছে দিলে ঘাতক,
লাল আভা তবু জেগে থাকে সাদা চুলে।
এ ছাড়া আপাতত কোন বিমূঢ়তা নেই।
নেই কোন আর শুদ্ধ বিষাদ।