এসো পা বাড়াই (৯ম পর্ব)
প্রকাশ | ২০ জানুয়ারি ২০১৭, ২২:০৮
"মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করে এমন সব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে পুরুষের সাথে সাথে নারীদের অংশগ্রহণ সীমিত, কিন্তু কেন? ফেসবুক এর চিফ অপারেটিং অফিসার শেরিল স্যান্ডবার্গ (Sheryl Sandberg) এর বই 'Lean In'- এ তিনি দেখিয়েছেন এ সমস্যার মূলে কি, কিভাবে নারীরা নেতৃত্ব অর্জন করতে পারে, তার পূর্ণ ক্ষমতার ব্যবহার করতে পারে। তার নিজের জীবন এবং পাশ্চাত্যের প্রেক্ষাপটে রচিত হলেও সারা পৃথিবীর নানা পরিসংখ্যান আর গবেষণার রেফারেন্স দিয়ে তিনি এই বইকে সমৃদ্ধ করেছেন সমস্ত মানব জাতির জন্য। আমার আন্তরিক ইচ্ছা বাংলাদেশের মানুষও এই বই পড়ে উপকৃত হোক। সেই ইচ্ছা থেকেই অনুবাদের এই প্রচেষ্টা। ইতোমধ্যেই ২০টিরও অধিক ভাষায় এই বইয়ের অনুবাদ করা হয়েছে। এই বইয়ের নামে একটি আন্তর্জাতিক চক্রও গড়ে উঠেছে (http://leanin.org/) যেখানে সারা পৃথিবী থেকে যে কেউ চাইলে যুক্ত হতে পারে। মূল বইয়ে রেফারেন্স গুলোর বিস্তারিত দেয়া আছে।"
LEAN IN এসো পা বাড়াই
WOMEN, WORK AND THE WILL TO LEAD নারী, কাজ এবং নেতৃত্বের ইচ্ছা
WRITER: SHERYL SANDBERG অনুবাদ: আফরিন জাহান হাসি
জুডিথ রডিন (Judith Rodin), যিনি রকফেলার ফাউন্ডেশন এর প্রেসিডেন্ট এবং যে কিনা ইউনিভার্সিটি আইভি লীগ এর প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হয়েছিল তিনি একবার আমার বয়সী কিছু নারী শ্রোতাদের বলেছিলেন, “আমার প্রজন্ম কঠিন লড়াই করেছিল তোমাদের সবাইকে নিজের পছন্দের অধিকার দেয়ার জন্য। আমরা পছন্দের অধিকারে বিশ্বাস করি। কিন্তু তোমরা অনেকেই কর্মক্ষেত্র ছেড়ে চলে যাওয়াটাকে পছন্দ করবে এটা আমরা ভাবি নাই”।
তো আসলে কি ঘটেছে? আমার প্রজন্ম এমন একটা যুগে বেড়ে উঠেছে যখন সমতা বর্ধিত হচ্ছিল, যে প্রবণতা আমরা ভেবেছিলাম অব্যাহত থাকবে। অতীতের দিকে দৃষ্টিপাতে দেখি, আমরা ছিলাম সরল এবং আদর্শবাদী। এটা প্রমাণিত যে, আমরা যেরকম কল্পনা করেছিলাম তার চেয়ে অনেক বেশী চ্যালেঞ্জিং - পেশাদারী ও ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষার একীভূতকরণ। একই বছর যখন আমাদের পেশা সর্বোচ্চ সময় বিনিয়োগের দাবি জানায় তখনই আমাদের জীববিদ্যা সন্তানের চাহিদা প্রকাশ করে। আমাদের সঙ্গীরা সন্তান প্রতিপালন এবং ঘরের কাজের ভাগ নেয় না, তাই আমাদের নিজেদের একসঙ্গে দুটি পূর্ণকালীন কাজ করতে হয়। আবার কর্মক্ষেত্রের সুযোগগুলো সেভাবে বিবর্ধিত হয়নি যাতে আমরা বাড়ির দায়িত্বগুলো বাইরের কাজের সাথে মিলেমিশে পালন করতে পারি। এর কোনটাই আমরা প্রত্যাশা করিনি। এটি আমাদের জন্য এক অপ্রত্যাশিত চমক।
আমাদের প্রজন্ম যদি বেশী সাধাসিধে হয়ে থাকে, সেই তুলনায় মনে হয় আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম অনেক বেশি বাস্তববাদী। আমরা খুবই কম জানতাম আর এখনকার মেয়েরা অনেক বেশী জানে। এই প্রজন্মের মেয়েরাই প্রথম না যারা সমান সুযোগ পাচ্ছে, কিন্তু এরাই প্রথম, যারা জানে যে এই সব সুযোগ আসলে পেশাদার সাফল্যের ক্ষেত্রে প্রতিফলিত হয় না। এই মেয়েদের অনেকেই তাদের মা’কে দেখেছে 'সব কিছু করা'র চেষ্টা করতে এবং তারপর কিছু কাজ ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হতে। সেটা সাধারণত হতো তাদের পেশাগত কাজ (career)।
এতে কোন সন্দেহ নেই যে কর্মক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেয়ার দক্ষতা নারীদের রয়েছে। শিক্ষাক্ষেত্রে, ইউনাইটেড স্টেইটস- এ স্নাতক প্রায় ৫৭ শতাংশ এবং মাস্টার্স ডিগ্রী প্রায় ৬০ শতাংশ অর্জন করে মেয়েরা ক্রমবর্ধমানভাবে ছেলেদের ছাপিয়ে যাচ্ছে। একাডেমিক কৃতিত্বের ক্ষেত্রে এই লিঙ্গ বৈষম্য দেখে কেউ কেউ 'পুরুষদের শেষ' এই বলে ভয়ও পেয়েছে। কিন্তু শিষ্টাচারের ক্ষেত্রে, প্রথমে হাত উপরে তোলা- নিয়ম মেনে কথা বলা- স্কুলে পুরস্কৃত হলেও এসব ব্যবহার আসলে কর্মক্ষেত্রে কম মূল্যবান। পেশাগত অগ্রগতি প্রায়ই নির্ভর করে ঝুঁকি গ্রহণ করা এবং নিজের জন্য ওকালতি করার উপর- যে বৈশিষ্ট্যগুলো প্রদর্শন করা থেকে মেয়েরা নিরুৎসাহিত হয়। এটা থেকে হয়তো কিছুটা বোঝা যায় মেয়েদের এই একাডেমিক অর্জন কেন এখনো বদলাতে পারছে না শীর্ষ পদগুলোতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ নারী সংখ্যার। যে পাইপলাইনটি শিক্ষিত শ্রমশক্তি সরবরাহ করছে তার প্রবেশ স্তর পরিপূর্ণ নারীদের দ্বারা, কিন্তু সেই একই পাইপলাইনে নেতৃত্বের পদগুলো পূরণের সময় তার সিংহ ভাগ পূরণ হচ্ছে পুরুষ দিয়ে।
(চলবে...)