এসো পা বাড়াই (৭ম পর্ব)
প্রকাশ | ০৭ জানুয়ারি ২০১৭, ০০:১২ | আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০১৭, ২২:৩৫
"মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করে এমন সব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে পুরুষের সাথে সাথে নারীদের অংশগ্রহণ সীমিত, কিন্তু কেন? ফেসবুক এর চিফ অপারেটিং অফিসার শেরিল স্যান্ডবার্গ (Sheryl Sandberg) এর বই 'Lean In'- এ তিনি দেখিয়েছেন এ সমস্যার মূলে কি, কিভাবে নারীরা নেতৃত্ব অর্জন করতে পারে, তার পূর্ণ ক্ষমতার ব্যবহার করতে পারে। তার নিজের জীবন এবং পাশ্চাত্যের প্রেক্ষাপটে রচিত হলেও সারা পৃথিবীর নানা পরিসংখ্যান আর গবেষণার রেফারেন্স দিয়ে তিনি এই বইকে সমৃদ্ধ করেছেন সমস্ত মানব জাতির জন্য। আমার আন্তরিক ইচ্ছা বাংলাদেশের মানুষও এই বই পড়ে উপকৃত হোক। সেই ইচ্ছা থেকেই অনুবাদের এই প্রচেষ্টা। ইতোমধ্যেই ২০টিরও অধিক ভাষায় এই বইয়ের অনুবাদ করা হয়েছে। এই বইয়ের নামে একটি আন্তর্জাতিক চক্রও গড়ে উঠেছে (http://leanin.org/) যেখানে সারা পৃথিবী থেকে যে কেউ চাইলে যুক্ত হতে পারে। মূল বইয়ে রেফারেন্স গুলোর বিস্তারিত দেয়া আছে।"
LEAN IN এসো পা বাড়াই
WOMEN, WORK AND THE WILL TO LEAD নারী, কাজ এবং নেতৃত্বের ইচ্ছা
WRITER: SHERYL SANDBERG অনুবাদ: আফরিন জাহান হাসি
নেতৃত্বের উচ্চাকাঙ্ক্ষার বৈসাদৃশ্য: যদি ভয় না পাও তবে কি করতে চাও
১৯১৭ সালের ২৮ শে আগস্ট, আমার জন্মের ঠিক ৫২ বছর আগে আমার নানি রোজালিন্ড এইনহর্ন (Rosalind Einhorn) জন্মেছিলেন। অন্য অনেক গরীব ইহুদীদের মতই নিউইয়র্ক শহরের এক অঞ্চলে
ছোট্ট জনাকীর্ণ অ্যাপার্টমেন্টে ছিল তার বসবাস। আত্মীয়-স্বজন মিলে পাশাপাশি তারা থাকতেন। তার বাবা-মা, খালা, মামা-চাচারা তার পুরুষ কাজিনদেরকে সম্বোধন করতো তাদের প্রদত্ত নাম দিয়ে, সে এবং তার বোনকে ডাকা হতো শুধুমাত্র 'গার্লি' ('Girlie') বলে।
অর্থনৈতিক মন্দার সময় আমার নানিকে মরিস হাই স্কুল থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসা হলো, অন্তর্বাসে ফুলতোলার সেলাইয়ের কাজে তার মাকে সাহায্য করার জন্য, যা পুনরায় বিক্রি করে সামান্য লাভ হতো। কোন ছেলেকে স্কুল থেকে ছাড়িয়ে আনার কথা সমাজের কেউ তখন চিন্তাই করতে পারতো না। একটি ছেলের লেখাপড়া ছিল আর্থিক ও সামাজিক মই বেয়ে উপরে ওঠার ক্ষেত্রে পরিবারের আশা। আর্থিক এবং সাংস্কৃতিক উভয়ভাবেই মেয়েদের লেখাপড়া ছিল কম গুরুত্বপূর্ণ যেহেতু মেয়েদের পরিবারের আয়ে অবদান রাখার সম্ভাবনা কম, একটি সঠিক গৃহপরিচালনা-ই তাদের কাছে প্রত্যাশিত ছিল, অন্যদিকে ছেলেদের কাছে প্রত্যাশিত ছিল তারা তওরাত বা মৌজের অনুশাসন ভালোভাবে শিখবে। ভাগ্যক্রমে এক স্থানীয় শিক্ষকের জোরাজুরিতে আমার নানির বাবা মা তাকে স্কুলে ফেরত পাঠায়। তিনি শুধু হাই স্কুলই শেষ করেন না, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বার্কলে থেকে স্নাতক ডিগ্রীও নেন।
কলেজ পাশ করার পর 'গার্লি', ডেভিড’স ফিফথ এভিনিউ তে পকেট বই এবং আনুষঙ্গিক উপকরণ বিক্রি করতো। পরিবারে গল্প প্রচলিত আছে যে যখন সে তার চাকুরী ছেড়ে দিয়েছিল আমার নানাকে বিয়ে করার জন্য তখন ডেভিড’স কে তার বদলে চার জন লোককে নিয়োগ দিতে হয়েছিল। বছর খানেক পরে আমার নানার রং এর ব্যবসা বেশ অসুবিধায় পড়েছিল তখন সে দ্রুত এমন কিছু কঠিন পদক্ষেপ নিয়েছিল যা নিতে আমার নানা কুন্ঠিত বোধ করছিল। এভাবেই সে আর্থিক ধ্বংসের হাত থেকে পরিবারকে রক্ষা করেছিল। তার চল্লিশ বছর বয়সে সে আবার তার ব্যবসার অন্তর্দৃষ্টি প্রদর্শন
করেছিল। তার স্তন ক্যান্সার ধরা পরার পর সে তা জয় করেছিল আর নিজেকে উৎসর্গ করেছিল যেই ক্লিনিক তার চিকিৎসা করেছে তাদের জন্য টাকা তোলার কাজে। সে তার গাড়ীর ট্রাঙ্ক-এ করে, ভালো ব্র্যান্ডের অনুকরণে তৈরী ইমিটেশনের ঘড়ি বিক্রী করে টাকা যোগাড় করতো। 'গার্লি' শেষ পর্যন্ত এমন মুনাফা অর্জন করেছিল যে অ্যাপল এরও হিংসা হবে। আমার নানির চেয়ে বেশী কর্মশক্তি আর দৃঢ়চরিত্রের মানুষ আমি কখনোই দেখিনি। যখন ওয়ারেন বাফেট তাকে মোট জনসংখ্যার মাত্র অর্ধেকের সাথে প্রতিযোগিতা করতে হয়েছে বলে, তখন আমার নানির কথা মনে হয়েছিল, আর আমি অবাক হয়ে ভাবছিলাম সে যদি অর্ধ শতাব্দী পরে জন্মাতো তার জীবনটা হয়তো কত অন্যরকম হতো।
(চলবে...)