এসো পা বাড়াই (৩য় পর্ব)
প্রকাশ | ২০ ডিসেম্বর ২০১৬, ২২:৩৭ | আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৬, ২৩:০১
"মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করে এমন সব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে পুরুষের সাথে সাথে নারীদের অংশগ্রহণ সীমিত, কিন্তু কেন? ফেসবুক এর চিফ অপারেটিং অফিসার শেরিল স্যান্ডবার্গ (Sheryl Sandberg) এর বই 'Lean In'- এ তিনি দেখিয়েছেন এ সমস্যার মূলে কি, কিভাবে নারীরা নেতৃত্ব অর্জন করতে পারে, তার পূর্ণ ক্ষমতার ব্যবহার করতে পারে। তার নিজের জীবন এবং পাশ্চাত্যের প্রেক্ষাপটে রচিত হলেও সারা পৃথিবীর নানা পরিসংখ্যান আর গবেষণার রেফারেন্স দিয়ে তিনি এই বইকে সমৃদ্ধ করেছেন সমস্ত মানব জাতির জন্য। আমার আন্তরিক ইচ্ছা বাংলাদেশের মানুষও এই বই পড়ে উপকৃত হোক। সেই ইচ্ছা থেকেই অনুবাদের এই প্রচেষ্টা। ইতোমধ্যেই ২০টিরও অধিক ভাষায় এই বইয়ের অনুবাদ করা হয়েছে। এই বইয়ের নামে একটি আন্তর্জাতিক চক্রও গড়ে উঠেছে (http://leanin.org/) যেখানে সারা পৃথিবী থেকে যে কেউ চাইলে যুক্ত হতে পারে। মূল বইয়ে রেফারেন্স গুলোর বিস্তারিত দেয়া আছে।"
LEAN IN এসো পা বাড়াই
WOMEN, WORK AND THE WILL TO LEAD নারী, কাজ এবং নেতৃত্বের ইচ্ছা
WRITER: SHERYL SANDBERG অনুবাদ: আফরিন জাহান হাসি
আমি এই হৃদয়বিদারক ঘটনাগুলো খুব কাছ থেকে দেখেছি। আমি কলেজ পাশ করেছি ১৯৯১ সালে আর বাণিজ্যে বিশ্ববিদ্যালয় এর ডিগ্রী নিয়েছি ১৯৯৫ সালে। পাশ করার পর প্রত্যেকটা চাকুরীর প্রাথমিক স্তরগুলোতে আমার সহকর্মী ছিল নারী পুরুষের সুষম মিশ্রণে। কিন্তু আমি খেয়াল করেছিলাম যে শীর্ষ পদগুলোতে প্রায় সবাই ছিল পুরুষ, আমি ভেবেছি অতীতে নারীরা যে বৈষম্যের শিকার হয়েছে এটা তারই ফল। আমি বিশ্বাস করতাম যে সব জায়গায় প্রবাদতুল্য গ্লাস সিলিং এ ফাটল ধরেছে, এটা শুধু সময়ের ব্যাপার যখন আমাদের জেনারেশন নেতৃত্ব দানে ন্যায্য ভাগ পাবে। কিন্তু প্রতি বছরই অল্প থেকে অল্প হচ্ছিল আমার নারী সহকর্মীর সংখ্যা। বেশিরভাগ সময়ই দেখা যেতো কোন কোন স্থানে আমিই একমাত্র নারী।
এই একমাত্র নারী হওয়ার কারণে বিব্রতকর তবে দৃষ্টিগোচর করা উচিত এমন কিছু পরিস্থিতির উদ্ভব হয়। চিফ অপারেটিং অফিসার হিসেবে ফেসবুকে যোগদানের দুই বছর পর হঠাৎ করেই আমাদের চিফ ফিনান্সিয়াল অফিসার চলে গেল, তখন তার অসমাপ্ত তহবিল সংগ্রহের কাজের দায়িত্ব আমাকে নিতে হয়েছিল। ফিন্যান্স আমার কাজের ক্ষেত্র নয়, আমি সব সময় কাজ করেছি অপারেশন নিয়ে তাই এই নতুন অর্থ সংগ্রহ করা কাজ নিয়ে আমি একটু ভয়ও পাচ্ছিলাম। এর মধ্যেই একটি প্রাইভেট ইকুইটি ফার্ম এর সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনার জন্য আমি দল নিয়ে নিউ ইয়র্কে গেলাম। সিনেমায় যে রকম থাকে সেরকম সুন্দর একটা কর্পোরেট অফিস, যেখান থেকে পুরো ম্যানহাটন শহরকে দেখা যায়, সেখানে ছিল আমাদের প্রথম মিটিং। প্রথমেই আমি আমাদের ব্যবসা সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত ধারণা দিয়েছিলাম তারপর ছিল প্রশ্নোত্তর পর্ব। সবকিছু মোটামুটি ভালোভাবেই চলছিল। এরপর বিরতির সময় আমি ঊর্ধ্বতন একজন এর কাছে নারীদের ওয়াশরুম কোথায় তা জানতে চাইলাম, সে আমার দিকে ফাঁকা দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো, এটা ছিল তার জন্য ভীষণ কঠিন, বিব্রতকর প্রশ্ন। সে এক বছর ধরে এই অফিসে আছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম এই এক বছরে এই অফিসে আসা আমিই কি একমাত্র নারী? সে জানালো, "হয়তো তাই অথবা তুমিই একমাত্র নারী যাকে ওয়াশরুমে যেতে হবে”।
দুই দশকেরও বেশী সময় ধরে আমি কাজের জগতে এসেছি, এখনো অনেক কিছু সেই আগের মতো। আমাদের অগ্রগতি যে থেমে আছে এই বাস্তবতার মুখোমুখি হওয়ার এটাই সময়। যে সফল সম অধিকারের আশা আমাদের ছিল তা আসলে বাস্তবে নেই। একটি সত্যিকার সম অধিকারের পৃথিবী হতে পারে এমন যেখানে দেশ এবং কোম্পানি পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে অর্ধেক নারী আর গৃহ পরিচালনার অর্ধেক দায়িত্ব নিবে পুরুষ। আমার বিশ্বাস এভাবেই হতে পারে একটি উন্নত পৃথিবী। বৈচিত্র্য নিয়ে অনেক গবেষণা এবং অর্থনীতির সূত্র থেকে জানা যায় আমরা যদি পুরো মানব সম্পদ এবং বুদ্ধিমত্তা একসাথে কাজে লাগাই তাহলে আমাদের উল্লেখযোগ্য উন্নতি হতে পারে। বিখ্যাত ব্যবসায়ী ওয়ারেন বাফেট (Warren Buffett) বেশ উদারতার সাথেই বলেছেন যে, তার এই বিপুল সাফল্যের একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে তাকে মোট জনসংখ্যার মাত্র অর্ধেকের সাথে প্রতিযোগিতা করতে হয়েছে। আমার প্রজন্মের ওয়ারেন বাফেটরাও এই বিশাল সুবিধা ভোগ করছে। যত বেশি মানুষ প্রতিযোগিতায় আসবে তত বেশি রেকর্ড ভঙ্গ করা যাবে।
এবং এই সাফল্য ঐ সব ব্যক্তিকে ছাড়িয়ে আমাদের সবার উপকারে আসবে।
(চলবে...)