এসো পা বাড়াই (১ম পর্ব)
প্রকাশ | ১৩ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৭:৫২ | আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৮:৩৯
"মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করে এমন সব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে পুরুষের সাথে সাথে নারীদের অংশগ্রহণ সীমিত, কিন্তু কেন? ফেসবুক এর চিফ অপারেটিং অফিসার শেরিল স্যান্ডবার্গ (Sheryl Sandberg) এর বই 'Lean In'- এ তিনি দেখিয়েছেন এ সমস্যার মূলে কি, কিভাবে নারীরা নেতৃত্ব অর্জন করতে পারে, তার পূর্ণ ক্ষমতার ব্যবহার করতে পারে। তার নিজের জীবন এবং পাশ্চাত্যের প্রেক্ষাপটে রচিত হলেও সারা পৃথিবীর নানা পরিসংখ্যান আর গবেষণার রেফারেন্স দিয়ে তিনি এই বইকে সমৃদ্ধ করেছেন সমস্ত মানব জাতির জন্য। আমার আন্তরিক ইচ্ছা বাংলাদেশের মানুষও এই বই পড়ে উপকৃত হোক। সেই ইচ্ছা থেকেই অনুবাদের এই প্রচেষ্টা। ইতোমধ্যেই ২০টিরও অধিক ভাষায় এই বইয়ের অনুবাদ করা হয়েছে। এই বইয়ের নামে একটি আন্তর্জাতিক চক্রও গড়ে উঠেছে (http://leanin.org/) যেখানে সারা পৃথিবী থেকে যে কেউ চাইলে যুক্ত হতে পারে। মূল বইয়ে রেফারেন্স গুলোর বিস্তারিত দেয়া আছে।"
LEAN IN এসো পা বাড়াই
WOMEN, WORK AND THE WILL TO LEAD নারী, কাজ এবং নেতৃত্বের ইচ্ছা
WRITER: SHERYL SANDBERG অনুবাদ: আফরিন জাহান হাসি
ভূমিকা: বিপ্লবে একাত্মতা
২০০৪ সালের গ্রীষ্মে আমি প্রথম মা হতে যাচ্ছি, সুখবর পেলাম। ঐ সময়টায় আমি গুগল এর অনলাইন সেলস এবং অপারেশন্স অংশটা চালাতাম। প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে আমি যখন গুগল এ কাজ শুরু করি তখন গুগল মাত্র শ’খানেক কর্মচারী নিয়ে ছোট্ট একটা বিল্ডিং এ কাজ শুরু করা, অখ্যাত নতুন প্রতিষ্ঠান। আমার প্রেগনেন্সির প্রথম তিন মাসের মধ্যেই গুগল প্রায় হাজার কর্মচারীর এক বড় কোম্পানীতে রূপ নেয়। আর তাই গুগল বড় পরিসরে বহুতল ভবনে চলে আসে।
আমার প্রেগনেন্সির সময়টা ছিল বেশ কঠিন। সাধারণত মায়েদের প্রথম তিন মাস যে “মর্নিং সিকনেস” থাকে তা আমাকে কাবু করে রেখেছিল পুরো নয় মাসের প্রত্যেকটা দিন। আমার ওজন বেড়ে গিয়েছিল প্রায় ৭০ পাউন্ড আর পা ফুলে হয়েছিল প্রায় দ্বিগুণ। আমি বিশ্রাম নেয়ার জন্য কফি টেবিলের উপর পাগুলো উঠিয়ে রাখার সময় ঐ বিশ্রী ফোলাটা দেখতে পেতাম। গুগল এর একজন অসাধারণ বুদ্ধিমান ইঞ্জিনিয়ার বলেছিল যে আমাকে দেখেই নাকি “Project Whale” এর নামকরণ হয়েছে।
এ সময় একদিন, প্রচন্ড কষ্টের এক সকালবেলা অনেকটা সময় টয়লেটে পার করার কারণে, আমাকে তাড়াহুড়ো করতে হয়েছিল এক জরুরী ক্লায়েন্ট মিটিং এ যাওয়ার জন্য। গুগল তখন এত তাড়াতাড়ি বেড়ে উঠছিল যে পার্কিং ছিল একটা নিত্য সমস্যা। তাই সেদিন আমি গাড়ি রাখার জন্য বেশ দূরেই একটা মাত্র খালি জায়গা পেয়েছিলাম। আমি খুব দ্রত পার্কিং এর জায়গাটা পার হতে চাইছিলাম যেটা আসলে প্রেগনেন্সির ঐ অবস্থায় এক অসম্ভব হামাগুড়ির মত লাগছিল। আমার বমি ভাব এত বেড়ে গিয়েছিল যে আমি মনে মনে প্রার্থনা করতে করতে মিটিং এ পৌঁছেছিলাম যেন শুধুমাত্র সেলস্ এর বক্তব্য-ই আমার গলা দিয়ে বের হয়ে আসে, আর কিছু নয়। আমার এ ভীষণ দুর্ভোগ এর কথা ঐ দিন রাতে যখন আমার হাসব্যান্ড ডেভ এর সাথে বলছিলাম সে আমাকে একটা সুন্দর উদাহরণ দেখিয়েছিল। ডেভ তখন ইয়াহুতে কাজ করতো। ইয়াহু তার প্রত্যেক বিল্ডিং এর সামনে নির্দিষ্ট জায়গা রেখে দিয়েছে সন্তান-সম্ভবা মায়েদের জন্য।
পরের দিনই আমি দৃপ্ত পায়ে, আসলে ঐ শরীর নিয়ে অনেকটা দুলতে দুলতে হাজির হয়েছিলাম গুগল এর প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেজ (Larry Page) এবং সের্গে ব্রিন (Sergey Brin) এর অফিসে। অফিসটা মূলত একটা বড় ঘর যার মেঝের চারিদিকে ছড়ানো রয়েছে খেলনা আর গ্যাজেট। সের্গে ঘরের এক কোনায় ইয়োগা করছিল, আমি ঘোষণা দিয়ে দিলাম আমাদের প্রেগনেন্সি পার্কিং লাগবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব।
সে সাথে সাথেই রাজি হলো এবং এটাও বললো যে সে আগে কখনোই এটা নিয়ে ভাবেনি।
এখনো আমার ভাবতে বিব্রত লাগে যে আমার নিজেরও এই কষ্টের অভিজ্ঞতার আগে কখনোই মনে হয়নি যে সন্তান-সম্ভবা নারীদের জন্য নির্দিষ্ট পার্কিং দরকার। গুগল এর সবচেয়ে উচ্চপর্যায়ের একজন নারী হিসেবে আমার কি বিশেষ দায়িত্ব ছিল না এটা নিয়ে ভাবার? অন্য সন্তান-সম্ভবা নারীরা অবশ্যই নীরবে দুর্ভোগ সহ্য করে গেছে, বিশেষ ব্যবস্থার কথা চায়নি মুখ ফুটে বলতে। তারা হয়তো সেরকম উচ্চ পর্যায়ে যেতে পারেনি যেখান থেকে এই সমস্যা সমাধানের দাবী জানাতে পারে অথবা ছিল আত্মবিশ্বাসের অভাব। বিশাল তিমি’র মত দেখতে হলেও একজন সন্তান-সম্ভবা শীর্ষে অবস্থান করা নারী-ই পারলো পার্থক্যটা তৈরী করতে।
(চলবে...)