কবিতা

সাঁওতাল জীবনের প্রতি

প্রকাশ | ১৩ নভেম্বর ২০১৬, ০২:০১ | আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০১৬, ০২:০৭

রহমান মুফিজ

পাহাড়ের বুকে একদিন রচনা করেছিলে সবুজের ওড়না
অনাবাদি দ্যাশে ফুটিয়েছিলে প্রথম বিপ্লবের ফুল
তোমাদের হাড়ে-মজ্জায় এখনো লেগে আছে প্রতিরোধের দর্প
এখনো মহুয়ার মাতাল রাত্তিরে গলা খুলে গাও মাটি ও শস্যের গান
এখনো তোমাদের মতোন মাটিকে ভাষা দিতে পারেনি কেউ
মাকে ভালবাসতে শেখেনি কোনো অর্বাচীন।

তোমাদের তামাটে গাত্রে পীড়নের চাবুক এঁকেছে বেগানা সভ্যতা
তোমাদের বাস্তুচ্যুত করে সূর্যের অভিশাপপ্রাপ্ত হয়েছে দুর্বৃত্তরা
ওরা মরছে উন্নয়নের ভাগাড়ে, তোমরা দাঁড়িয়ে আছো মাটির উদ্দাম বুকে
তোমাদের কণ্ঠে উৎসমূলের কোরাস, আদি মানবের হাহাকার
মাদলে-শিঙায় জোছনারাতের নৃত্যে ঝঙ্কৃত হয় সরল আত্মার তৃপ্তি   
তোমাদের ধনুকে মৃত্যুবান নয়, রচিত হয় মহাজীবনের সংকল্প। 

মনে নেই আঠারোশ পঞ্চান্ন? ভগনাডিহি থেকে কলকাতার পথে
এঁকেছিলে রক্তের উল্কি। তার অক্ষয় পুষ্প শোভা পাচ্ছে সভ্যতার খোঁপায়।
সিধু-কানু-চাঁদ-ভৈরব, ফুলু-ঝানু সেদিন গেয়েছিল দুর্বার ঐক্যের স্তোত্র
সমগ্র ভারত কেঁপে উঠেছিল তোমাদের অপ্রতিরোধ্য হুলে।

মনে নেই, কটক, মানভূম, ডালভূম, ছোট নাগপুর, পালামৌ, মেদেনীপুর
বাকুড়া বীরভূম-সম্মিলিত জেগে ওঠেছিল দামিন-ই-কোহ?

এই জনপদে প্রথম গণহত্যার স্মারক বয়ে চল তোমরাই
প্রথম বিদ্রোহের বিদীর্ণ উচ্চারণ তোমাদেরই কণ্ঠে শুনেছে এ মাটি
এ ভূমি তোমাদের কাছেই প্রথম শিখেছে সর্বপ্রাণের উচ্চকিত অধিকার। 
তোমরাই যুগে যুগে এসেছো লড়াইয়ের দিশা হয়ে।

দু’হাজার সাল। আলফ্রেড সরেনকে মনে আছে। 
ভূমির অধিকার ছাড়েনি বলে মৃত্যুই তার দলিল হয়েছিল। 
তার বোনেরা এখনো ছাড়েনি পথ। রক্তের আল জুড়ে তারা এঁকে চলেছে 
প্রতিশোধের নকসিকাঁথা। ভাইয়েরা লড়ছে মাটি ও মায়ের মুক্তির জন্য। 
তাদের ধনুকে এখনো সূর্যের তীব্র স্পর্ধা। 

আজ মহিমাগঞ্জে জ্বলছে আগুন, তোমাদের সন্তানেরা কাঁদছে, নারীরা বিপুল
শোকে বুনছে অন্তিম বসন। সেখানে তাদের পুরুষদের জন্য লিখে রাখছে
শ্রেষ্ঠ লোকগাঁথাগুলো। লিখে রাখছে আসন্ন লড়াইয়ের আগাম বিজয়মন্ত্র।
 
কমরেড শ্যামল হেমব্রম, মঙ্গল মারডি, রমেশ টুডু
তোমাদের বুক আজ বিপন্ন বাংলাদেশ। বেদনাভারে নিমিলিত তোমাদের 
চোখ থেকে আমরা কোষ ভরে তুলে নিতে চাই মৃত্যুঞ্জয়ী মানুষের স্বপ্ন। 
তোমাদের মৃত্যু আমাদের অপরাহত করে তুলেছে। সমস্ত সংগ্রামে তোমরাই
এখনো অবিকল পুর্বপুরুষ। 

কথা দিচ্ছি, আগামী সোহরায় আমরা মিলিত হবো, বাহা উৎসবে তুমুল নাচবো, 
চন্দ্রযাপনের রাতে আকাশের দিকে তাক করে ধনুকের দীক্ষা নেব।
একদিন এফোঁড় ওফোঁড় করে দেব বাতিল শাসকের হৃদপি-।

কথা দিচ্ছি, তোমাদের আর হারতে দেব না।