পাহাড়ী কন্যার বাহারি রঙের সাজে ‘বৈসাবি’

প্রকাশ | ১২ এপ্রিল ২০২৩, ১৫:১৪

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি

পুব আকাশে বাংলা বর্ষের শেষ দিনের সূর্য উঠেছে মাত্র। সময় এসেছে পুরোনো বছরকে বিদায় ও নতুন বছরকে বরণের। আর তাতেই পাহাড়ে দেখা গেছে সাজ সাজ রব। ভোরের আলো ফুটতেই দল বেঁধে ঐতিহ্যবাহী রঙিন পোশাকে বাংলা বৈসু-সাংগ্রাই-বিজু ও বাংলা নববর্ষের উৎসবে মেতেছে পাহাড়ী কন্যারা। তবে সবকিছুকে ছাপিয়ে উঠেছে বর্ষ বিদায় ও বরণ উৎসব, যা ‘বৈসাবি’ নামে পরিচিত।

বুধবার (১২ এপ্রিল) গঙ্গাদেবীর উদ্দেশ্যে ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে পাহাড়ে শুরু হয় বৈসাবি উৎসবের মূল আনুষ্ঠানিকতা। খাগড়াছড়ির আকাশে ভোরের আলো ফুটতেই ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে দল বেঁধে ছুটতে দেখা যায়  সকল শ্রেণীর মানুষের। গন্তব্য- চেঙ্গী, মাইনী আর ফেনী নদী ও বিভিন্ন ছড়া-খাল। সেখানেই মঙ্গল কামনায় গঙ্গা দেবীর উদ্দেশ্যে ফুল ভাসাবে সবাই।

এ উৎসবে ত্রিপুরা, চাকমা, মারমা ও বাঙ্গালি সম্প্রদায়ের নারীরা বাহারি রঙের ঐতিহ্যবাহী রিনাই-রিসা, পিনোন-হাদি পরেন। আর ছেলেরা ধুতি, পাঞ্জাবি/ফতুয়া পরে চেঙ্গী নদীতে ফুল দিয়ে উৎসবে মেতে ওঠেন। ফুল ভাসানোর মধ্যে দিয়ে পুরোনো বছরের গ্লানি মুছে নতুন বছর সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি আসবে এমনটাই প্রত্যাশা তাদের। তবে করোনার দুই বছরের বিষাদ ও বেদনা ভুলে আবারও প্রিয় বৈসাবি উদযাপন করতে পেরে খুশি।

চেঙ্গী নদীতে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় চাকমা সম্প্রদায়ের এক প্রতিনিধি জানান, এটি পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের ঐহিত্যবাহী সামাজিক উৎসব। পুরোনো বছরের দুঃখ, গ্লানিকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরে সুখে, শান্তিতে এবং আনন্দে কাটাতে পারি সেজন্য মা গঙ্গা দেবীর কাছে প্রার্থনা করি।

বৈসাবি উৎসবের দ্বিতীয় দিনে বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর হারি বৈসু পালিত হবে। এদিন ঘরে ঘরে রান্না হবে বিশেষ পাঁচন। আর মন্দিরে মন্দিরে চলবে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান। বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে শুক্রবার পালিত হবে মারমাদের সাংগ্রাই উৎসব। এদিন মারমা সম্প্রদায়ের লোকজন মেতে উঠবে ওয়াটার ফেস্টিভাল বা জলকেলী উৎসবে। সব দুঃখ, পাপ, তাপ, কালিমা ধুয়ে-মুছে দিতে একে-অপরের দিকে পানি ছুড়বেন। আর তরুণ-তরুণীরা ভালোবাসার মানুষের গায়ে পানি ছিটিয়ে ভালোবাসার প্রকাশ ঘটাবেন।

এদিকে চৈত্র মাসের শেষ দিনকে চাকমা সম্প্রদায়ের মূল বিজু। এর আগের দিনকে ফুল বিজু, আর পহেলা বৈশাখ পরিচিত গোজ্যেপোজ্যে/গজ্জ্যা পুজ্জ্যা দিন হিসেবে। পাড়ায় ঘুরে ঘুরে, খেয়ে দিনটি পার করেন চাকমারা। বাংলা বছরের শেষ দুই দিন ও নববর্ষের প্রথম দিন বৈসু পালন করা হয়।

এছাড়া নতুন বছরের প্রথম দিন বাংলা নববর্ষকে স্বাগত জানিয়ে বাংলার ঐতিহ্যকে ধারণ করে পাহাড়ি জেলা খাগড়াছড়ির বিভিন্ন উপজেলায় বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা আয়োজনে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

জাগরণীয়া/ডিএ