‘শুধু ভোটাধিকার প্রয়োগ হলেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় না’
প্রকাশ | ০৬ মার্চ ২০১৯, ১৬:৩৮
এই উপমহাদেশে গণতন্ত্র শুধু ভোটের মধ্যেই সীমিত। সেটা জাল কিংবা সুষ্ঠু ভোট হোক না কেন। শুধু ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পায় না- বললেন বুকার পুরস্কারজয়ী লেখক ও অধিকারকর্মী অরুন্ধতী রায়।
৫ মার্চ (মঙ্গলবার) ঢাকার ধানমণ্ডির মাইডাস সেন্টারে ‘আটমোস্ট এভরিথিং’ শিরোনামের অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ভোট এল, রাজনীতিবিদরা দুয়ারে এসে উন্নয়নের ফিরিস্তি দিয়ে ভোট চাওয়া শুরু করল। তোমাদের কাছে এই হল গণতন্ত্র।
কথোপকথনে ভারতীয় উপমহাদেশে গণতন্ত্র চর্চার পাশাপাশি উন্নয়ন কার্যক্রম, পরিবেশ, নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর জীবনধারা নিয়ে কথা বলেন অরুন্ধতী; শোনান নিজের লেখক জীবনের গল্পও।
তিনি বলেন, “গোটা উপমহাদেশের চিত্র আসলে একই। গণতান্ত্রিক চর্চা ভিন্ন হলেও এই চিত্রটা কেমন করে যেন মিলে যায়। গণতন্ত্র এভাবেই নষ্ট হয়ে যায়। ধর্ম আর অর্থনীতি নিয়ে এত ভ্রান্ত ধারণা জন্মেছে মানুষের মনে! ক্রমেই বাড়ছে সন্ত্রাসবাদ। রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপ বাড়ছে। আর তা মোকাবেলায় দেশগুলো যেন গণতন্ত্র ছেড়ে সামরিক পন্থা বেছে নিচ্ছে।”
রাজনৈতিক লেখালেখিতে কেন এলেন জানতে চাইলে অরুন্ধতী রায় বলেন, দ্য গড অব স্মল থিংস প্রকাশের পরপর তিনি বিখ্যাত হয়ে উঠলেন। প্রায় নিয়মিত বিরতিতে পত্রিকার প্রচ্ছদে ছাপা হচ্ছে তার ছবি। একই সময়ে ক্ষমতায় এল ডানপন্থীরা (ভারতে)। ক্ষমতায় এসেই পারমাণবিক পরীক্ষার মাধ্যমে জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে দিল নতুন ভাষা। আকাশে-বাতাসে ছড়াতে লাগল জাতীয়তাবাদ আর ঘৃণার বিস্তার। ওই সময় তো তার চুপ করে বসে থাকার সুযোগ ছিল না।
অরুন্ধতী বলেন, ‘প্রথম লেখায় পারমাণবিক পরীক্ষা আমাদের কল্পনার জগৎটা কীভাবে পাল্টে দিয়েছে, কীভাবে ভাবনার জগতে ঔপনিবেশিকতাবাদ ছড়িয়ে দিয়েছে, সেটাই বললাম। নিজেকে আমি মোবাইল রিপাবলিক হিসেবে ঘোষণা করলাম। আমার কোনো পাসপোর্ট নেই। নেই কোনো পতাকা। এভাবেই পুরোপুরি অন্য এক জগতে পা বাড়ালাম। যেই জগৎটাতে ঘুরে বেড়িয়েছে ২০টা বছর।’ এটা বলেই ছোট্ট একটা অনুচ্ছেদ পড়ে শোনান।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে সাহিত্যাঙ্গনেও। তবে কি প্রযুক্তির আধিপত্যে সাহিত্যের আবেদন কমবে-এমন এক প্রশ্নের জবাবে লেখ অরুন্ধতি রায় বলেন, “লেখালেখি করতে এলে অবশ্যই এবার লেখার গুণগত মান নিয়ে ভাবতে হবে। যা তা লিখে ফেললেই কিন্তু হবে না। পাঠককে ভালো কিছু দেওয়ার প্রবল ইচ্ছা থাকতে হবে। প্রযুক্তি যতই আসুক না কেন, মানসম্মত লেখা হলে পড়ুয়াদের কাছে সাহিত্যের আবেদন কিন্তু কখনও ফুরাবে না। ”
গত ৩ মার্চ দৃক গ্যালারির কর্ণধার আলোকচিত্রী শহিদুল আলমেরদৃক গ্যালারির আয়োজনে ‘ছবিমেলা’য় যোগ দিতে বাংলাদেশে পৌঁছান অরুন্ধতী রায়। গত বছর নিরাপদ সড়কের আন্দোলনের সময় গুজব ছড়ানোর অভিযোগে তথ্য প্রযুক্তি আইনের মামলায় শহিদুল আলম গ্রেপ্তার হলে তার মুক্তির দাবিতে খোলা চিঠি লিখেছিলেন অরুন্ধতী রায়। নিবন্ধিত দর্শক-শ্রোতাদের নিয়ে ফার্মগেইটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিটিউশন মিলনায়তনে এই অনুষ্ঠানটি হওয়ার কথা থাকলেও শেষ মহুর্তে অনুমতি বাতিল হওয়ায় অনুষ্ঠানটি ধানমণ্ডির মাইডাস সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়।