গল্প: টেইলার্স
প্রকাশ | ০৬ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:১২
কাটতে একটুও হাত কাঁপে না এখন। সুন্দর মত একদম এক টানেই কেটে ফেলা যায়। আঁকাবাকা হয় না একটুও।
প্রথম প্রথম কাটতে কপালে ঘাম ঝরতো। প্রথমদিন এমন এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল যে কাজ শেষ না করেই রাগে উন্মাদ হয়ে বাড়ি ফিরে যায়। পরে সেই কাজ কে ঠিকঠাক করেছে কে জানে? বস অবশ্য কিছু বলে নি সেদিন। প্রথমবার বলে হয়ত মাফ করে দিয়েছে।
এবড়োথেবড়ো দেখতে কুৎসিত লাগে। আর সুন্দরের প্রতি মোহ তার রক্তে মেশা। সুন্দর নিখুঁত নিদাগ জিনিস ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে করে। গালে লাগাতে ইচ্ছে করে। স্বাদ নিতে ইচ্ছে করে।
গলা কাটা হয়ে গেছে। একটা সিগারেট ধরায়। জানালার কাছে গিয়ে দ্রুত টানতে থাকে। রাত হয়ে গেছে আজ বেশি। সিগারেট শেষ করে এসে গলাটা আবার চেক করে। একদম পারফেক্ট। নিজের পিঠ নিজেই চাপড়ায়।
শীতের রাতে ১১ টা বাজা মানে নিশুতি রাত। চাদর দিয়ে মাথা ঢেকে কিছুটা কাপঁতে কাঁপতে বাড়ি পৌছে সে। বউ তার ঘুম জড়ানো চোখে দরজা খুলে দেয়। সে সোজা ঢুকে যায় বাচ্চাটার রুমে। তিন বছরের তুলতুলে মেয়ে তার। সারাদিন বাপকে কাছে পায় না বলে কত রাগ অভিমান গাল ফোলানো। এখন কি চুপটি করে ঘুমাচ্ছে। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে সে মেয়ের দিকে। এই মেয়ের জন্যই তো এত কাজ আর কাজ তার! কপালে আলতো করে চুমু খেয়ে উঠে বাথরুমে যায়।
ঢুকতে ঢুকতে সে শুনতে পায় তার স্ত্রী বলছে "কালকে কাপড়গুলো নিয়ে যেও তো, পাশের বাসার আপা দিয়ে গেছে। পারলে একটু তাড়াতাড়ি সেলাই করে দিও। উনার নাকি দাওয়াত আছে"।
বাথরুম থেকেই জবাব দেয় "তাড়াতাড়ি কেমনে দিবো, কত কাপড় জমা হয়ে আছে দোকানে, দেখো না রাত হয়ে যায় ফিরতে ফিরতে!"
"তা তো আমি বুঝলাম আপা তো বুঝে না, তোমার মত কাটিং নাকি আর কেউ করতে পারে না"।
ধুর প্যারা, ভাবতে ভাবতে চাদর খুলে সে। বেসিনে কলের নিচে হাত ডোবায় পানিতে। ধুয়ে যাচ্ছে তার লাল হাত। রক্তে জবজবে থাকা হাত আস্তে আস্তে ফিরে পাচ্ছে তার আসল রঙ। একটু আগে যে মানুষটার গলা কেটেছিল সে তার ফিনকি দিয়ে ছুটে আসা রক্ত মুখে এসে লাগছিল। চেপে ধরেছিল গলা। গলগল করে বয়ে যাচ্ছিল থিকথিকে কালচে গরম রক্ত।
এইজন্য তার এক টানে কাটা পছন্দ, তাতে রক্তগুলো সুন্দর করে বয়ে বয়ে যায়। এবড়োথেবড়ো মাংস দেখা যায় না। মাংসটা একদম দেখতে পারে না সে। বমি এসে যায়।