রক্তজবা (১ম পর্ব)
প্রকাশ | ২৩ মার্চ ২০১৮, ১৮:৫৫ | আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৮, ২৩:৪০
থরথর করে কাঁপছে রাকিবের হাঁটু, নিঃশ্বাস দ্রুত থেকে দ্রুততর হচ্ছে। শায়লার ভয় লাগতে থাকে। রাকিব হাতের মুঠো বন্ধ করে আবার খোলে, আবার বন্ধ করে আবার খোলে। ঠাণ্ডা হয়ে সোফায় বসে থাকে শায়লা। কঠিন চোখে রাকিবের দিকে তাকায়, গা ঘিনঘিন করে তার। রাকিবকে সে ভালবাসে বোধ হয়, একেবারেই ভাল না বাসলে কখনো এতদিন এক ছাদের নিচে থাকতো না। সেই প্রথম অফিস জীবন থেকে একজন আরেকজনকে ভালবাসে।
শায়লার বিশ্বাস হয় না, এরকম একটা জঘন্য লোকের প্রেমে সে পড়েছিল। পড়েছিল সেটাও ভাল কিন্তু এখনো সেখান থেকে উঠতে পারে না ভেবে নিজের প্রতিও কিছুটা ঘেন্না লাগে তার। ভয় আর ঘেন্না জমে জমে কেমন একটা বমি বমি লাগে তার। এক্ষুনি রাকিব ছুটে এসে গায়ে হাত তোলে যদি! যদি কণ্ঠনালী চেপে ধরে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে, কি করবে সে? রাকিব শায়লার লৌহ-কঠিন চাহনি দেখে আরো ক্ষেপে যায়। শায়লার দিকে তাকিয়ে পেছনে হটতে হটতে বেসিনের কাছে যায়। নদীতে ঢিল যেমন শক্তি দিয়ে সজোরে ছুঁড়ে মারা হয় সেরকম শক্তি প্রয়োগ করে একদলা থুথু বেসিনে ফেলে সে। শায়লা বুঝতে পারে, সম্ভব হলে এই থুথুটা শায়লার মুখেই ছুঁড়ে মারত সে। বেসিনের কল ছেড়ে জল হাতে নিয়ে চোখে-মুখে জোরে জোরে জলের ঝাপ্টা মারে সে। শায়লার মনে হয়, রাকিব আসলে তাকে চপেটাঘাত করতে না পেরে এই জলের ঝাপটা নিজের চোখে-মুখে মেরে নিজেকেই শান্ত করতে চাইছে।
শায়লার চোখের সামনে ভেসে ওঠে একটা টেকো চেহারা, কনস্ট্রাকশন বিল্ডিং, নতুন রিকশা, অফিস ফেরত ব্যাগ, আধখানা ইট। টেকো লোকটা রিকশাওয়ালাকে ইট দিয়ে ক্রমাগত মারতে থাকে। রিকশাওয়ালার গোঙানি, শরতের ঝিরিঝিরি হাওয়া, সেনপাড়ার ব্যস্ত সড়ক, নির্বাক-কৌতুহলী চেহারা। শায়লার কান্না পায়, সে লোকটাকেও বোধ হয় শায়লা ভালবাসতো। কিন্তু সেদিনের পর আর কোনদিন সে লোকটার পাশে ঘুমাতে পারেনি। তার ভয় করতো। রিকশাওয়ালা পাঁচটা টাকা বেশি চাইল বলে যে লোকটা এভাবে ক্ষতবিক্ষত করে মারতে পারে, ‘তোদের মতো দু’চারটে শুয়োরের বাচ্চাকে খুন করলে এমন কিছু হবে না’ বলে খেটে খাওয়া ক্লান্ত একজন মানুষের রক্তে রাস্তা ভিজিয়ে দিতে পারে তার পাশে সজ্ঞানে কেউ শুতে পারে! শায়লা শু’তো কিন্তু দু’চোখের পাতা এক করতে পারতো না। কেবলই মনে হতো, এই বুঝি একটা ইট নিয়ে শায়লাকে মারতে এলো!
একদিনের ঘুমের ঘোরে এই স্বপ্ন দেখে গোঙাতে গোঙাতে জেগে উঠল সে। টেকো লোকটা চোখ-মুখ কুঁচকে তার মুখের ওপর ঝুঁকে আছে।
(চলবে...)