‘বারবার ভাষার ওপর আক্রমণ এসেছে’
প্রকাশ | ১৩ জানুয়ারি ২০১৮, ১৮:১৮
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কেবল বাংলা ভাষা নয়, বাংলা অক্ষরও মুছে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। বারবার ভাষার ওপর আক্রমণ এসেছে। কিন্তু সবগুলো আক্রমণই প্রতিহত হয়েছে।
১৩ জানুয়ারি (শনিবার) দুপুরে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক বাংলা সাহিত্য সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতাকালে তিনি এ কথা বলেন। ‘বিশ্বমানব হবি যদি কায়মনে বাঙালি হ’ শীর্ষক স্লোগানে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বসছে তিন দিনব্যাপী এ সাহিত্য সম্মেলন।
এতে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের তিন শতাধিক কবি-লেখক-সাহিত্যিক-সমালোচক অংশ নিচ্ছেন। সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেবেন ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি।
ভাষা আন্দোলনের সূচনার মধ্য দিয়েই বাঙালি জাতি স্বাধীনতা লাভ করে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একুশের পথ বেয়েই বাঙালি জাতি মহান মুক্তিযুদ্ধে জয়লাভ করে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২১ ফেব্রুয়ারিকে সরকারি ছুটি হিসেবে ঘোষণা করে। মুক্তিযুদ্ধে ভারত আমাদের সহযোগিতা করেছিল। আমরা এর জন্য ভারতের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।
বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, পাকিস্তানি শাসকরা বাংলা ভাষাকে কেড়ে নেওয়ার জন্য নানাভাবে বাধা দিয়েছে। কেবল বাংলা ভাষা নয়, বাংলা অক্ষরও মুছে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। রবীন্দ্রনাথ পড়া যাবে না বলে সমন জারি করে পাকিস্তানের সামরিক স্বৈরশাসকরা। এরপর আঘাত আসে নজরুলের ওপর। তার কবিতায় সাম্প্রদায়িক পরিবর্তন আনার অপচেষ্টা হয়। বাংলা সাহিত্যকে কলুষিত করার চেষ্টা করা হয়। বারবার ভাষার ওপর আক্রমণ এসেছে। কিন্তু সবগুলো আক্রমণই প্রতিহত হয়েছে। এসব বাধা জয় করেই আমরা বাংলা ভাষা পেয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইউনেস্কো বাংলা ভাষার সম্মানে ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি দিয়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন দেশের মাতৃভাষা হারিয়ে যাচ্ছে। এই মাতৃভাষা যেন হারিয়ে না যায়, তার জন্য আমরা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট গড়ার কাজ শুরু করি। এখানে ভাষাকে জানা, বিশ্বের বিভিন্ন ভাষা নিয়ে গবেষণা করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বাংলায় ভাষণ দিয়েছিলেন। আমিও যতবার ভাষণ দিয়েছি, ততবারই বাংলায় দিয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, যে দেশের ভাষা যত সমৃদ্ধ, সে দেশের মানুষ তত এগিয়ে। বাংলাদেশিরা কারও কাছে মাথা নত করে না। বাংলা ভাষা আমাদের আত্মপরিচয়ের ঠিকানা।
বাংলা সাহিত্যের মর্যাদা ও সম্মান বিশ্ব দরবারে বেড়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সাহিত্য আগের চেয়ে আরও গতিশীল ও সহজ হয়েছে। আজকের এই আয়োজন বাংলা সাহিত্যকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরবে। যারা বাংলায় সাহিত্যচর্চা করছেন তাদের একত্রে করার এই চেষ্টাকে আমি সাধুবাদ জানাই।
উদ্বোধনী দিনে বিকেল ৫টা থেকে বাংলা একাডেমির প্রাঙ্গণে শুরু হয়েছে সম্মেলনের কার্যক্রম। রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে প্রথম দিনের নানা আয়োজন। একাডেমি প্রাঙ্গণে প্রদর্শিত হবে দুই চলচ্চিত্র ‘সূর্যদীঘল বাড়ি’ ও ‘পদ্মা নদীর মাঝি’। আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে সন্ধ্যা ৭টায় মঞ্চস্থ হবে ম্যাড থেটারের নাটক ‘নদ্দিউ নতিম’। এছাড়াও সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশ ও ভারতের কবি-সাহিত্যিকদের প্রীতি সম্মেলন। সন্ধ্যা ৬টায় কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত হবে ‘বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলা সাহিত্যের সমকালীন ছোটগল্প’ শীর্ষক আলোচনা। এ বিষয়ে ভারতের প্রখ্যাত সাহিত্যিক সমরেশ মজুমদারের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেবেন বাংলাদেশের কথাসাহিত্যিকরা।
সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন ১৪ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে ‘বাংলা সাহিত্যে দেশভাগের অভিঘাত’, ‘সাহিত্য ও চলচ্চিত্র’, ‘বাংলা সংবাদ ও সাময়িকপত্রের ২০০ বছর’ ও ‘সাম্প্রতিক বাংলা উপন্যাসের গতি ও গন্তব্য’ শিরোনামে চারটি সেমিনার। এদিন বিকেলে রবীন্দ্র চত্বরে কবিতা পাঠের সঙ্গে গানের সুরে মাতাবেন বাংলাদেশ ও ভারতের শিল্পীরা।
তৃতীয় দিনে থাকছে তিনটি সেমিনার- ‘ভাষা আন্দোলন ও বাঙালি জাতিসত্তা’, ‘অনুবাদের সাহিত্য, সাহিত্যের অনুবাদ’ ও ‘প্রযুক্তির বিশ্বে সাহিত্যের সংকট ও সম্ভাবনা’।
সম্মেলন সবার জন্য উন্মুক্ত। সম্মেলনে অংশ নিতে http://banglasahityasammelan.com/register ওয়েবসাইটে যে কেউ নিবন্ধন করতে পারবেন।