এসো পা বাড়াই (৩৩ তম পর্ব)
প্রকাশ | ২৮ ডিসেম্বর ২০১৭, ০০:৪৮
"মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করে এমন সব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে পুরুষের সাথে সাথে নারীদের অংশগ্রহণ সীমিত, কিন্তু কেন? ফেসবুক এর চিফ অপারেটিং অফিসার শেরিল স্যান্ডবার্গ (Sheryl Sandberg) এর বই 'Lean In'- এ তিনি দেখিয়েছেন এ সমস্যার মূলে কি, কিভাবে নারীরা নেতৃত্ব অর্জন করতে পারে, তার পূর্ণ ক্ষমতার ব্যবহার করতে পারে। তার নিজের জীবন এবং পাশ্চাত্যের প্রেক্ষাপটে রচিত হলেও সারা পৃথিবীর নানা পরিসংখ্যান আর গবেষণার রেফারেন্স দিয়ে তিনি এই বইকে সমৃদ্ধ করেছেন সমস্ত মানব জাতির জন্য। আমার আন্তরিক ইচ্ছা বাংলাদেশের মানুষও এই বই পড়ে উপকৃত হোক। সেই ইচ্ছা থেকেই অনুবাদের এই প্রচেষ্টা। ইতোমধ্যেই ২০টিরও অধিক ভাষায় এই বইয়ের অনুবাদ করা হয়েছে। এই বইয়ের নামে একটি আন্তর্জাতিক চক্রও গড়ে উঠেছে (http://leanin.org/) যেখানে সারা পৃথিবী থেকে যে কেউ চাইলে যুক্ত হতে পারে। মূল বইয়ে রেফারেন্স গুলোর বিস্তারিত দেয়া আছে।"
LEAN IN এসো পা বাড়াই
WOMEN, WORK AND THE WILL TO LEAD নারী, কাজ এবং নেতৃত্বের ইচ্ছা
WRITER: SHERYL SANDBERG অনুবাদ: আফরিন জাহান হাসি
এইসব অন্যায্য প্রত্যাশার কারণে নারীরা নিজেদেরকে খুঁজে পায়, “জঘন্য, যদি তারা করে (damned if they do)” এবং “দোষী, যদি তারা না করে (doomed if they don't)” - এই অবস্থার মধ্যে। এই অবস্থা বিশেষভাবে সত্য হয় যখন ক্ষতিপূরণ, সুযোগসুবিধা, পদমর্যাদা এবং অন্যান্য দাবী নিয়ে আলাপ-আলোচনার সময় আসে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পুরুষ, নারীদের চেয়ে বেশি এসব নিয়ে আলোচনায় ব্রতী হয়।
কার্নেগী মেলন বিশ্ববিদ্যালয় (Carnegie mellon university) এর মাস্টার্স ডিগ্রীর ছাত্রছাত্রীরা একটি গবেষণা করেছিল যা কিনা ওখান থেকে পাশ করা ছাত্রছাত্রীদের প্রারম্ভিক বেতনের উপর করা। ঐ গবেষণায় দেখা গেছে যে, ৫৭ শতাংশ পুরুষ ছাত্র চেষ্টা করে আরও উচ্চ বেতনের প্রস্তাবের জন্য আলোচনায় যেতে যেখানে মাত্র ৭ শতাংশ নারী তা করে। কিন্তু আরও বেশী আলোচনায় না যাওয়ার জন্য নারীদের নিন্দা করার পরিবর্তে আমাদের বোঝা উচিত, নারীদের নিজেদের স্বার্থে ওকালতি করার এই অনাগ্রহের পেছনে প্রায়ই উপযুক্ত কারণ থাকে। কারণ এরকম করলে সহজেই উল্টো ফল হতে পারে।
যখন কোন পুরুষ নিজের জন্য দর কষাকষিতে যায়, এর খুব কমই নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। মানুষের প্রত্যাশা থাকে, পুরুষ তার নিজের জন্য ওকালতি করবে, নিজেদের অবদান তুলে ধরবে এবং তা স্বীকৃত ও পুরস্কৃত হবে। নিজেদের জন্য চাইতে গেলে সত্যিকারেই পুরুষদের কোন ক্ষতি নাই। কিন্তু যেহেতু নারীরা প্রত্যাশিত যে সে অন্যের জন্য চিন্তিত হবে তাই যখন তারা নিজের জন্য ওকালতি করে বা নিজেরদের মূল্য তুলে ধরে, তখন নারী পুরুষ উভয়ই বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখায়। মজার ব্যাপার হচ্ছে নারী, পুরুষের মতই বা তার চেয়ে সফলভাবে দর কষাকষি করতে পারে যখন তা অন্যের জন্য (যেমন তার প্রতিষ্ঠান বা সহকর্মী), কারন এইসব ক্ষেত্রে তাদের ওকালতি আত্মকর্মে নিয়োগ তা প্রদর্শন করে না।
যাই হোক, যখন একজন নারী তার নিজের জন্য দর কষাকষিতে যায় তখন সে পরিচিত লিঙ্গ আদর্শ লঙ্ঘন করে। যে নারী বেতন বাড়ানোর জন্য দর কষাকষি করে, নারী পুরুষ উভয় ধরণের সহকর্মীরাই তার সাথে কাজ করতে আপত্তি করে। কেননা যে নারী দর কষাকষি থেকে বিরত থাকে তার থেকে এই নারীকে অতিরিক্ত দাবী করছে বলে মনে হয়। এমনকি যখন একজন নারী সফলভাবে তার নিজের জন্য দর কষাকষি করে তখনও তাকে সুদূরপ্রসারী মূল্য পরিশোধ করতে হতে পারে ভবিষ্যৎ সুনাম আর অগ্রগতির ক্ষেত্রে। দুঃখের বিষয়, সব নারীরাই হেইডি। আমরা যত চেষ্টাই করি না কেন কখনোই হাওয়ার্ড হতে পারবো না।
আমি যখন ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও মার্ক জুকারবার্গ (Mark Zuckerberg) এর সাথে আমার বেতন ভাতা নিয়ে আলোচনা করছিলাম, সে আমাকে যা প্রস্তাব দিয়েছিল ভালোই মনে হয়েছিল। প্রায় দেড় মাস ধরে আমরা সপ্তাহের বিভিন্ন রাতে একসাথে রাতের খাবার খেয়েছি আর আলোচনা করেছি ফেসবুকের উদ্দেশ্য এবং তা নিয়ে মার্ক এর ভবিষ্যৎ ভাবনা নিয়ে। আমি তৈরী ছিলাম কাজটি গ্রহণ করার জন্য। না, আমি মরে যাচ্ছিলাম কাজটা পাওয়ার জন্য। আমার হাসব্যান্ড ডেভ আমাকে বার বার দরকষাকষি করতে বলছিল, কিন্তু আমি ভয় পাচ্ছিলাম এমন কিছু করতে যা এই চুক্তিতে ঝামেলা পাকাতে পারে। আমি আমার দাবী নিয়ে কঠিন হতে পারি কিন্তু তাতে যদি মার্ক আমার সাথে কাজ করতে না চায়! এর কোন মূল্য আছে যখন আমি জানি সবশেষে এই কাজ আমি নিবোই? তাই আমি এই দরকষাকষির চিন্তা বাদ দিলাম। কিন্তু আমি হ্যাঁ জানিয়ে দেয়ার ঠিক আগের মুহুর্তে আমার বিদ্রোহী দুলাভাই মার্ক বদনিক (Marc Bodnick) বলে ফেললো, “গোল্লায় যাও, শেরীল! কেন তুমি কম আয় করবে যখন যে কোন পুরুষ এই একই কাজে আরও বেশী আয় করবে?”
(চলবে...)