২৮-৩০ ডিসেম্বর উদীচী’র জাতীয় সাংস্কৃতিক সম্মেলন
প্রকাশ | ২৭ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৫:৫৪
“দ্রোহে বিদ্রোহে বিপ্লবে, গড়ি বিশ্ব সপ্তসুরে”- এই স্লোগানকে সামনে রেখে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী আয়োজিত জাতীয় সাংস্কৃতিক সম্মেলন।
আগামী ২৮, ২৯ ও ৩০ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত তিন দিনব্যাপী এ সম্মেলনে সারাদেশ থেকে উদীচী’র শিল্পী-কর্মীরা নিজ নিজ অঞ্চলের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ভাণ্ডার নিয়ে অংশ নেবেন। থাকবে আবহমান বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যবাহী নানা পরিবেশনা।
এ উপলক্ষে ২৬ ডিসেম্বর মঙ্গলবার সকাল ১১টায় উদীচী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়। এতে লিখিত বক্তব্যের মাধ্যমে জাতীয় সাংস্কৃতিক সম্মেলন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানমালার বিষয়ে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি জানান, আগামী ২৮ ডিসেম্বর বিকেল ৩টায় সম্মেলন উদ্বোধন করবেন প্রবীণ কৃষক নেতা, লোকশিল্পী আব্দুল হাশিম। তিনদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন যথাক্রমে উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক সভাপতি সৈয়দ হাসান ইমাম, কামাল লোহানী ও গোলাম মোহাম্মদ ইদু। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উদীচী’র প্রায় ৫০টি জেলা ও শাখার শিল্পীরা ঐতিহ্যসমৃদ্ধ লোক সংস্কৃতির পরিবেশনা নিয়ে উপস্থিত হবেন এই সম্মেলনে। তিনদিনের এই সম্মেলনে থাকছে বাংলার লোক-ঐতিহ্যের গৌরবোজ্জ্বল স্মারক পরিবেশনাগুলো। এর মধ্যে রয়েছে গম্ভীরা, গাজীর গান, অষ্টক, ধামাইল, জারি গান, পালা গান, গণসঙ্গীত, লোক গীতি, আদিবাসী নৃত্য, নৃত্যালেখ্য, গীতি আলেখ্য, নাটক, মুকাভিনয়, আবৃত্তি প্রভৃতি। নতুন প্রজন্মের কাছে বাংলা সংস্কৃতির ঐতিহ্য ও ইতিহাস পৌঁছে দেবার প্রত্যয়ে আয়োজিত হতে যাচ্ছে এই সাংস্কৃতিক সম্মেলন। প্রতিদিন বিকেল তিনটা থেকে আয়োজিত এ সম্মেলনে বিভিন্ন জেলা ও শাখার পরিবেশনা ছাড়াও থাকবে দেশীয় বাদ্যযন্ত্রের প্রদর্শনীর আয়োজন। যেখানে প্রায় ৪০টি দেশীয় বাদ্যযন্ত্র প্রদর্শিত হবে। থাকবে আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও বইয়ের দোকান।
উদীচী’র সাধারণ সম্পাদক আরো বলেন, গত ২৯ অক্টোবর ৪৯ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপন এবং একইসঙ্গে সুবর্ণজয়ন্তী বছরে পদার্পন করেছে উদীচী। এরই মধ্যে উদীচীর সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং বছরব্যাপী সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপনের বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। জাতীয় দিবস ও অন্যান্য পালনীয় দিবস ছাড়াও বছরব্যাপী ধারাবাহিকভাবে যেসব কর্মসূচি পালিত হবে তা হল: জাতীয় সাংস্কৃতিক সম্মেলন; গ্রন্থপাঠ প্রতিযোগিতা; গণসঙ্গীতের কিংবদন্তী শিল্পীদের জীবন ও কর্মভিত্তিক প্রকাশনা ও অনুষ্ঠান আয়োজন; লোক গায়কদের জীবন ও কর্মভিত্তিক প্রকাশনা ও অনুষ্ঠান আয়োজন; উদীচীর ইতিহাস গ্রন্থ প্রণয়ন; চিত্রশিল্পীদের আঁকা ছবি নিয়ে জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনীর আয়োজন; উদীচীর ইতিহাস নির্ভর প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ ও প্রদর্শনীর আয়োজন; নৃত্যালেখ্য নির্মাণ ও মঞ্চায়ণ; নাটক নির্মাণ ও মঞ্চায়ণ, যাত্রা নির্মাণ ও মঞ্চায়ণ, নাট্যোৎসব ও পথ নাট্যোৎসব আয়োজন; তিন দিনব্যাপী সত্যেন সেন গণসঙ্গীত উৎসব; কবিতা ও আবৃত্তি উৎসব; বাউল উৎসব; কবি গানের আয়োজন; রক সংগীত উৎসব; রবীন্দ্র-নজরুল-সুকান্ত জয়ন্তী আয়োজন; পঞ্চকবির গানের অনুষ্ঠান আয়োজন; বাদ্যযন্ত্র প্রদর্শনী; বিষয়ভিত্তিক (সংগীত, নাটক, সাহিত্য, চলচ্চিত্র, রাজনীতি, অর্থনীতি, সাংস্কৃতিক আন্দোলন) সেমিনার আয়োজন; সুবর্ণজয়ন্তীর জাতীয় সমাবেশ ও সমাপনী অনুষ্ঠান।
আমাদের দেশে বিভিন্ন অঞ্চলে, বিভিন্ন ভাষায় বিকশিত সংস্কৃতির যে অপার ভাণ্ডার রয়েছে তার প্রত্যেকটিই এদেশের শ্রমজীবী মেহনতি মানুষের সৃষ্টি। আমাদের সুখে-দুঃখে, হাসি-গানে, ঘুমে জাগরণে, প্রতিটি মুহূর্তে সেই সাংস্কৃতিক শক্তিই অবলম্ব^ন হয়ে থাকে সবসময়। গান ছাড়া, নৃত্য-গীত, কথা-কাব্য, সুর ছাড়া এ জাতির কোনো মুহূর্ত কাটে না। আমাদের সংগ্রামও এইসব অনুসঙ্গ ছাড়া প্রাণ পাবে না। তাই এইসব শিল্প-সৃষ্টি নিয়েই মেহনতি মানুষকে তার মুক্তির সংগ্রামের নতুন পথ রচনা করতে হবে। উদীচী বিশ্বাস করে বাংলার পলিবিধৌত মাটিতেই নিহিত আছে লড়াইয়ের সর্বোচ্চ প্রেরণা, বিজয়ের মন্ত্রণা। শোষণমুক্ত, বৈষম্যহীন হাসি-গানে মুখরিত বাংলাদেশই উদীচী’র স্বপ্ন- যেখানে মানুষ তার আপন মর্যাদায় বাঁচবে, মাথা তুলে দাঁড়াবে।
উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমানের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে উদীচী’র সহ-সভাপতি কাজী মোহাম্মদ শীশ, মাহমুদ সেলিম, প্রবীর সরদার ও সহ-সাধারণ সম্পাদক সঙ্গীতা ইমাম উপস্থিত ছিলেন।